দেশি উদ্যোক্তাউদ্যোক্তার গল্প দুই মেয়ে এবং স্বামীর সহযোগিতায় এগিয়ে চলছেন আলেয়া মুশতারী By নিজস্ব প্রতিবেদক July 20, 20222 ShareTweet 2 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন আলেয়া মুশতারী। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প। আসসালামু আলাইকুম। আমি আলেয়া মুশতারী। জন্ম মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানাধীন ভররা গ্রামে। আমার শৈশব, বেড়ে ওঠা এবং প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া নিজ গ্রাম থেকে হলেও মাধ্যমিক শেষ করি ঘিওর উপজেলার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে। সেখানেও পৈতৃক বাড়িতেই বড় ভাই, ভাবীর সাথে বসবাস করি পড়ালেখার প্রয়োজনেই।সেখানকার স্থানীয় ঘিওর সরকারী ডিগ্রী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ডিগ্রী পড়া চলাকালীন বিয়ে হয়। যদিও পড়াশোনার জার্নিটা আমার জন্য খুব একটা সহজ ছিলোনা। বিয়ের পর পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে পরবর্তীতে ছোট্ট এক কন্যা সন্তান নিয়ে স্বামীর সাথে ঢাকায় বসবাস। বর্তমানে আমি দুই কন্যা সন্তানের জননী। তারা দুজনেই ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে পড়ে। অনেক আগে থেকেই নিজে কিছু একটা করার বাসনা ছিলো মনে মনে। বর্তমানে বাচ্চারা বড় হওয়ায় সেই ইচ্ছে আরো তীব্র আকার ধারণ করে। এমন কিছু করার ইচ্ছে ছিলো যেনো তা সন্তান, সংসার সব সামলিয়ে ঘরে বসেই করতে পারি। কিন্তুু তা কিভাবে? এরপর দেখা পাই ‘উই’ নামক প্ল্যাটফর্মের। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পাই নিজে কিছু করার। সবসময় সাপোর্ট দিয়ে পাশে আছে আমার দুই মেয়ে এবং স্বামী। তারা আমার উদ্যোগের অনেক বিষয়েই আমাকে সহযোগিতা করে থাকে। আমি কাজ করছি মূলত সব বয়সী মেয়েদের সব ধরনের কাস্টমাইজ ড্রেস এবং মাস্ক নিয়ে। আমার উদ্যোগের নাম “রাঙা”। আমার প্রতিটি পণ্য নিজস্ব ক্রিয়েশনে; ইউনিক, মার্জিত, মানসম্মত এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় তৈরি। অনলাইন-অফলাইন দুভাবেই গ্রাহকের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। উদ্যোগের শুরুটা ছিলো ২০২০ সালের অক্টোবরে, প্যানডামিক সিচুয়েশনে পুরো পৃথিবী যখন স্তব্ধ হয়ে গেলো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস সব বন্ধ। ঠিক ঐ সময়টাতে মনে হলো এখনই সময় কিছু একটা করার। সেই চিন্তা থেকেই আমার উদ্যোগের যাত্রা শুরু। ছোটবেলা থেকেই হাতের কাজ করতে খুব ভালোবাসতাম। তাই সেই ভালোবাসার কাজ দিয়েই শুরু করলাম। বড় মেয়ের সার্বিক সহযোগিতায় একটা পেইজ তৈরি করি। দু`হাজার টাকার মূলধন নিয়ে কাজ শুরু করি। আমি মনে করি একজন উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে প্রচুর ধৈর্য্য, মনোবল এবং পরিশ্রমী হওয়া প্রয়োজন। নারীদের কাজ করার ক্ষেত্রে নেতিবাচক এবং ইতিবাচক দুটো দিক সামলিয়ে সামনে এগিয়ে চলার মানসিকতা থাকতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নরীদের কাজের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব অস্বাভাবিক কিছু নয়। একজন নারীর এগিয়ে চলার পথে পরিবারের সাপোর্ট খুব বেশি প্রয়োজন। আমার প্রতিষ্ঠানে আপাতত বাইরের কোনো সহকারী নেই। বর্তমানে মা, মেয়ে মিলে চালিয়ে নিচ্ছি। তবে ভবিষ্যতে উদ্যোগকে আরো বড় করার পরিকল্পনা আছে। যেহেতু আমার কাছে আমার সন্তান আর সংসারের প্রাধান্য সবার আগে, তাই তাদেরকে সময় দিয়ে নিজের কাজটাও যেনো ঘরে বসেই করতে পারি তাই এ উদ্যোক্তা জীবন বেছে নেয়া। আমি চাই আমার নিজস্ব ব্র্যান্ডিং এবং প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচিত হতে; নিজের একটা পরিচয় গড়তে। প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে। বর্তমানে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট নারী উদ্যোক্তাদের জন্যে বেশ অনুকূলে। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে নারীরা অনেকটাই এগিয়ে। প্রায় প্রতি ঘরে ঘরে উদ্যেক্তা তৈরি হচ্ছে। আমার উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবন্ধকতা একেবারে নেই তা বলবো না। তবে সবদিক মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে চলছি আপন গতিতে। আমার সেল মোটামুটি ভালো। আলহামদুলিল্লাহ! ‘উই’তে পোস্ট করার খুব অল্পদিনের মধ্যেই ‘উই’ এর প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশা আপু আমাকে চমকে দিয়ে আমার কাস্টমার হন। এটা ছিলো আমার উদ্যোক্তা জীবনের অনেক বড় একটা পাওয়া এবং আশীর্বাদ। যার ফলে আমি এক বছরের মধ্যেই লাখপতি হই। আলহামদুলিল্লাহ। যেহেতু আমার কাজ কাস্টমাইজ এবং ইউনিক পণ্য নিয়ে। তাই কাস্টমারের হাতে পণ্য পৌঁছে দিতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। আমার কাজ এবং সেবায় কাস্টমার সন্তুষ্ট এবং তাদের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। আমার কয়েক বারের রিপিট ক্রেতা আছে। কাস্টমারের সন্তুষ্টিই বড় অর্জন। আমার পণ্য দেশের ১৫টি জেলা ছাড়াও দেশের বাইরে পৌঁছে গিয়েছে। আমার উদ্যোগে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা এখনো পাইনি। তবে পেলে উদ্যোগকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। আমি চাই আমার পেইজ “রাঙা” কে স্বপ্নের রঙে রাঙাতে। একটা ব্র্যান্ডে রূপ দিতে, দেশীয় পণ্য দিয়ে সাজাতে। এটাই আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। স্বপ্ন দেখি, নিজের প্রতিষ্ঠান একদিন অনেক বড় হবে। একনামে সবাই চিনবে। পাশাপাশি আরো কিছু মানুষকে স্বনির্ভর করতে চাই। গ্রাহকের আস্থা আর বিশ্বাস অর্জন করে এগিয়ে যেতে চাই বহুদূর। সকলের দোয়া আর নিজের আত্মবিশ্বাসই হলো আমার চলার পথের পাথেয়। সবার দোয়া আর ভালোবাসা পেলে সেই স্বপ্ন একদিন পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।
ভাইরাল কেক পট্টির আড়ালে লুকানো স্বাস্থ্যঝুঁকি, নজর দিতে হবে ক্রেতা ও উদ্যোক্তা দুই পক্ষকে : এলিন মাহবুব 2 days ago0
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231896 views