উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

অদম্য ইচ্ছাশক্তিতেই আজকের সফল উদ্যোক্তা জেবিন সুলতানা জারা

0
Cherry Blossom Watercolor Facebook Cover 1

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা জেবিন সুলতানা জারার সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

আমি জেবিন সুলতানা জারা। আমার জন্ম হয় ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসের ৩ তারিখে। আমি আমার বাবা-মায়ের ২য় সন্তান, আবার কন্যা হিসেবেও ২য়। আমার জন্ম হয়েছিলো ছোট্ট একটি গাঁয়ে। যে গাঁয়ের অপরূপ সৌন্দর্য, আঁকা-বাঁকা পথ, সবুজ গাছগাছালি, ছোট ছোট নদী অন্য যেকোনো গ্রাম থেকে সহজেই আলাদা করা যায়। এ যেনো প্রকৃতির সৌন্দর্য্যে বিমোহিত করে আরো প্রকৃতি প্রেমী হিসেবে গড়ে তুলে।

আমার গ্রাম হলো চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত মতলব দক্ষিণ ধনারপাড় গাঁয়ে। এই সৌন্দর্য ভরা গ্রামে আমার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে আনন্দ আর খুনসুটিতে। কৈশোর যেতে না যেতে কোনো কিছু বোঝার আগে বিয়ে হয়ে গেলো। তাইতো এসএসসি পর্যন্ত আমার পড়াশোনা। বিয়ের পর আমার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর পড়াশোনা করা হয়নি। বিয়ের বছর দুইয়েক না যেতেই আমাকে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়।

এমন করেই কিশোর একটি মেয়ে বধু হয়ে গেলো। আর তা ধীরে ধীরে বধু থেকে মায়ে পরিণত করলো। আমার প্রথম সন্তান মেয়ে, আর দ্বিতীয় সন্তান ছেলে।
একজনের নাম নাবিলা অন্যজন অনিক। ওরাই হলো আমার পৃথিবী, আমার ভালোবাসা এবং সবচেয়ে আপনজন। সকল কিছুর মধ্যে ওদের মুখগুলো সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহ দান করে। আজকের আমি ওদের কারণেই আজকের সফল আমি।

একটা সময় শুধু স্বামী ও সন্তান ছাড়া মাথায় অন্য কোনো ভাবনা ছিলো না। একজন গ্রাম্য বধু অথবা মা যা করে আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। কিন্তু সবার কপালে কি সব সুখ সয়? সয় না। হঠাৎ করেই আমার সংসার জীবনে অন্ধকারের কালো মেঘ আমাকে ঘিরে ধরলো। সত্যি কথা বলতে কি আমার জানা ছিলো না কিভাবে এই অন্ধকার কাটিয়ে আলোর সন্ধান করবো। কিভাবে আমার চেয়ে প্রিয় আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবো। আমি কি আমার দুঃখ লাঘব করবো নাকি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববো?

সত্যি বলতে আমি আমার এই পরিস্থিতির জন্য কোনোভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। তাইতো আমাকে হতাশা গ্রাস করতে চাইলো, কিন্তু আমার চেয়ে প্রিয় আমার সন্তানদ্বয় আমাকে কিছু একটা করার জন্য অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করলো তাদের অজানা ভবিষ্যতের আশায়। আমি আমার দুঃখের কথা এক পলকেই ভুলে, নতুন করে কিছু একটা করার প্রত্যয় জাগ্রত হলো আমার এই মনে অজানা ভবিষ্যতের আশায়।

আমি ২০১০ সালে আমার দুই সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করে ঢাকাতে পারি জমাই। আমার স্বপ্ন যখন বিবর্ণ প্রায় তখন ভাবলাম আমার মেয়ে এবং ছেলেকে দিয়ে আমার স্বপ্নগুলো ছুঁতে হবে। ওদেরকে ভালো শিক্ষা ও ভালো মানসম্মত পরিবেশে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে।

Grey Brown Simple Photo Collage 1
আমার সন্তান আমার অহংকার, সেই প্রত্যয় নিয়ে আমার হার না মানা সংগ্রামী পথ চলা শুরু। আজ থেকে ছয় বছর আগে আমি আমার প্রিয় সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় ব্যবসা করার ইচ্ছে নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিলাম। আমি নারী তাইতো সমাজ এটাকে ভালো চোখে নেয়নি, এমনকি আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন কেউই এটাকে সহজভাবে নেয়নি। কিন্ত আমি নারীর চেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন মা, মায়েরা সবসময় অদম্য ও হার না মানা এক জাতি। আমি জানি শুধু এগিয়ে যেতে হবে পিছনে ফিরে তাকাবার সময় আমার নেই, কারণ আমি যে একজন “মা”।

মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য সব পারে তার উৎকৃষ্ট প্রমান আমি নিজেই। সেইদিন যদি সমাজ কিংবা আত্মীয়দের কথায় চুপ হয়ে যেতাম তাহলে কি আজকের আমি “জারা ফ্যাশন”র সত্বাধিকারী হতে পারতাম? এই সবই সম্ভব হয়েছে আমার দুই সন্তানের কারণে।

আমরা নারী আমরা সবই পারি। আমার পথ চলায় প্রথমদিকে তেমন কারো সহযোগিতা পায়নি। আমি নিজে নিজে নিউমার্কেট থেকে মাল ক্রয় করে অল্প লাভে আশেপাশের বন্ধুবান্ধবের কাছে বিক্রয় করতাম। আবার আমার কাছে তেমন কোনো পুঁজিও ছিলো না। তারপরেও আমার অদম্য ইচ্ছাশক্তি, অনেক পরিশ্রম, অনেক ত্যাগ আমাকে আজকের এই আমিতে পরিনত করেছে।

আরও পড়ুনঃ দেশ সেরা ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস তালিকায় নিজেকে দেখতে চান হৃদিতা মুন

বছর তিনেক আগে আমি অনলাইন বিজনেস শুরু করি। শুরু করার কিছুদিন পর ‘উই’ পরিবারের সদস্য হই। এখানে এসে আমি একজন সফল উদ্যোক্তা হই। আমার আমাকে পরিনত করতে অনেক ত্যাগ ও পরিশ্রম করতে হয়েছে। ‘উই’ পরিবারে যোগদানের পর অনেকের সহযোগিতা পেয়েছি এবং পাচ্ছি।

আপনি যদি আপনার মেধা, পরিশ্রম আর অধ্যবসায় দিয়ে কোনো কাজ করেন তাহলে সফলতা আসবেই আসবে ইনশাআল্লাহ। আপনি যদি ভালোমানের পন্য দিতে পারেন তাহলে আপনি একসময় না একসময় একজন ভালো উদ্যোক্তা হতে পারবেন। আসুন সাবলম্বী হই সমাজ ও দেশটাকে সুন্দরভাবে সাজাই। পরনির্ভরতা কমাই নিজের জীবনকে নিজের মতো করে সাজাই।

যেকোনো কাজ নিজেকে সম্মানিত করে ও পরনির্ভরশীলতা কমায়। আগামীর সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলি, আমরা নারী আমরাই পারি। আমরা যে মায়ের জাত, তাইতো সবাই বলে আমরা মা-জননী। আসুন সবাই মিলে অমঙ্গল দূর করি, একটি সুশীল ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। নিজ কর্মে জীবন গড়ি, সততা আর নিষ্ঠা দিয়ে ব্যবসা করি। সকল নারীদের জন্য শুভ কামনা আর সামাজিক উন্নতি প্রত্যাশা করছি।

চা শিল্প যেন ধ্বংস হয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

Previous article

বরিশাল-খুলনা মহাসড়কে বঙ্গমাতা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *