উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

অসহায় নারীদের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিতে চান মরিয়ম আক্তার সেতু

1
289792002 1112128496037226 2459448591603104784 n

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন মরিয়ম আক্তার সেতু। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আমি মরিয়ম আক্তার সেতু। জন্ম এবং বেড়ে উঠা চাঁদপুর জেলার সদর থানার নতুন বাজার এলাকায়। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নের শুরু ছেলেবেলায় বাবার ব্যবসা দেখে। কিন্তু পর্দা করি বলে সবাই একটা কথাই বলতো “পর্দা করে তুমি কিছু করতে পারবেনা”। আমার স্বপ্ন আমি যা করবো এই পর্দাকে সঙ্গী করে করবো।

ব্যবসায়িক পরিবারে জন্ম সূত্রে উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু করি ১৯৯৬ সালে। সামাজিক নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারনে আর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া হয়নি। বিয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণা নিয়ে আমার আনুষ্ঠানিক উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা আবার শুরু করি। তার সহযোগিতায় আমি নানা রকম হাতের কাজের ট্রেনিং নেওয়া শুরু করি।

আমার উদ্যোগী জীবনের শুরু হয় নারীদের বিভিন্ন হস্ত ও কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে (সকল প্রকার রান্না, টেইলারিং, ব্লক, বাটিক, টাই-ডাই, হ্যান্ডপ্রিন্ট, ব্রাশপ্রিন্ট, স্ক্রিমপ্রিন্ট, গার্মেন্টস ট্রেড, হোম ফ্যাশন, কুশির কাজ, কারচুপির কাজ, এ্যম্ব্রোয়াডারি এবং পার্লারের কাজ)।

বর্তমানে আমি আমার দুটো পেজ থেকে কাজ করছি। আমার একটি উদ্যোগ “NOBIN Online Shop” (নবীন অনলাইন শপ) থেকে কাজ করছি নারীদের হাতের কাজের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দেশীয় শাড়ি, থ্রি পিস, টপস, গাউন, লেডিস শার্ট, কাপ্তান, লুঙ্গি, বিছানার চাদর, নকশীকাঁথা এবং পর্দা নিয়ে।

আরেকটি উদ্যোগ NOBIN Foods (নবীন ফুডস) থেকে প্রতিদিন ৬০ জনের মাসিক হিসেবে দুপুরের এবং রাতের খাবার দিচ্ছি। ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের অর্ডার নেয়া হচ্ছে। আমার নিজস্ব রেসিপিতে তৈরি ভিন্ন স্বাদের আম, জলপাই, গাজর এবং শসার আচার দেশ এবং দেশের বাহিরে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

প্রতিটা কাজের শুরুতেই নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝে শুরু করতে হয়। আমাকেও সেই পরিস্থিতির মাঝে পড়তে হয়েছে। আমি মনেকরি উদ্যোক্তা হতে মূলধনের প্রয়োজন হয় না। তাই আমি শূন্য হাতে নেমেছি উদ্যোক্তা জীবনে। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছা শক্তি, সততা আর ধৈর্য্য। আমি চাকরি গ্রহীতা হতে চাইনি। আমি হতে চেয়েছি চাকরি দাতা।

বর্তমানে ৬ জন সহযোগী রয়েছে আমার প্রতিষ্ঠানে। আমার প্রতিষ্ঠান গত তিন বছর পূর্বে এতোটা প্রতিষ্ঠিত ছিলনা। ২০২০ সাল থেকে ‘উই’ এর সহযোগিতায় নানা রকম প্রশিক্ষণ নেয়ার মাধ্যমে আমি বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানকে অনেক সহজ ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারছি। কাস্টমারের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আমার প্রতিষ্ঠানে রিপিট ক্রেতা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ক্রেতার যেকোনো সমস্যা সমাধানে আমরা বদ্ধ পরিকর।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে নারী উদ্যোক্তাদের পথ সহজ করে দিয়েছে ‘উই’। তাই নারী উদ্যোক্তাদের বর্তমান প্রেক্ষাপট যথেষ্ট উপযোগী। স্বামী আর মায়ের সাপোর্ট থাকায় আমাকে খুব বেশি প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয়নি।

বর্তমানে সন্তুষ্টজনক সেল হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আরো বাড়বে। আমাদের সর্বোচ্চ সেবা আমরা ক্রেতাদের দিচ্ছি। বিনিময়ে পাচ্ছি তাদের ভালোবাসা আর সন্তুষ্টি। তাই তো আমাদের রিপিট ক্রেতা বেশি। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা এখনও পাইনি তবে ইনশাআল্লাহ পাবো।

আমার প্রতিষ্ঠানের অর্জন দেশ এবং দেশের বাহিরের ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন। আমার প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে নারীদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলবে ইনশাআল্লাহ। আমি স্বপ্ন দেখি আমার প্রতিষ্ঠান বাংলার অসহায় নারীদের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিচ্ছে। পাঁচ বছর পর নিজেকে বিশ্ব বাজারে ব্র্যান্ড হিসেবে দেখতে চাই।

মায়ের হাত ধরেই উদ্যোক্তা জীবনে পা রাখলেন জান্নাত মনি

Previous article

হিজাব দিয়ে যাত্রা শুরু করেন মিতাশা রহমান খান

Next article

You may also like

1 Comment

  1. অনেক দোয়া করি আপুর জন্য যেন কষ্টের সঠিক মূল্য পান।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *