উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

আমি কখনোই সমালোচকদের পাত্তা দেইনি- দোলনা আক্তার মিতু

1
Cherry Blossom Watercolor Facebook Cover 10

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা দোলনা আক্তার মিতুর সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

আমি দোলনা আক্তার মিতু। আমার জন্ম পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানায়। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক দুটোই শেষ করে ফিন্যান্স এর উপর বি.বি.এ সম্পন্ন করেছি।

নিজে কিছু করার ইচ্ছা ছিলো আগে থেকেই। ২০২০ সালের ১৩ই আগস্ট আমার বন্ধু আমাকে ‘উই’ তে যুক্ত করে। তারপর অনেকটা শখ থেকেই আমার অনলাইন বিজনেস শুরু করা। সেই সাথে ‘উই’ পরিবারের বিভিন্ন উদ্যোক্তা আপুদের বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার গল্পগুলো আমার সবচাইতে বড় অনুপ্রেরণা।

আমি কাজ করছি টাংগাইলের খেশ শাড়ি, খাদি পাঞ্জাবি, জামদানী শাড়ি ও বিভিন্ন হাতের কাজের থ্রিপিস ও পার্টি ড্রেস নিয়ে। আমার উদ্যেগের নাম “অরিন’স কালেকশন”। অরিন আমার একমাত্র মেয়ে।

শুরুটা তেমন ভালো ছিলো না, পড়ালেখা করে কেনো একটি মেয়ে অনলাইন বিজনেস করবে এটা সবার প্রশ্ন। আমাকে তো এইভাবে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতো পড়াশোনা করে কি লাভ হলো? চাকরি তো আর করে না! শেষ অব্দি কাপড় বিক্রি করছে?

কিন্তু আমি কখনোই সমালোচকদের পাত্তা দেইনি। তাদের কথা কানে নেইনি। মাএ ২,৫০০ টাকা দিয়ে আমি আমার উদ্যোগ শুরু করেছি। আমার মতে একজন উদ্যোক্তা হতে গেলে অবশ্যই তার ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা, আত্নবিশ্বাসী ও পরিশ্রমী হওয়া প্রয়োজন।

এখন পর্যন্ত আমার উদ্যোগের সকল কাজ আমি নিজেই করে থাকি। আমার পেইজের পণ্য সোর্সিং, পণ্যের প্যাকেজিং ও তা ডেলিভারি ম্যানের হাতে পৌঁছে দেয়ার যাবতীয় কাজ আমি নিজেই করে থাকি।

বর্তমানে চাকরির পিছনে ছোটা মানে সোনার হরিণের পিছনে ছোটা। চাকরির বাজারে এখন ৪/৫ বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়া ভালো কোনো চাকরি হয় না। পড়ালেখা করে ভালো রেজাল্ট নিয়েও চাকরি না পাওয়ায় অনেকেই হতাশায় ভুগছেন। ভবিষ্যতে চাকরি করা হোক বা না হোক, আমার মতে অন্যের অধীনে চাকরি না করে নিজে নিজে কিছু করাটা অনেক আত্মসম্মানের।

বর্তমানে আমি নারীদের নিয়ে গঠিত এশিয়ার সবচেয়ে বড় অনলাইন গ্রুপ Women and e-Commerce Trust (WE) এর শরিয়তপুর জেলা এসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্বরত আছি। ‘উই’ গ্রুপটি আমাকে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যেতে অনেক ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে পেয়েছি কাছের দূরের অনেক মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া। ১২ লাখ এরও বেশি সদস্য বিশিষ্ট গ্রুপটিতে এখন অনেকেই আমাকে চেনে, আমার পরিচিতি তারা অন্যকে তুলে ধরে।

আমার উদ্যোগে আমি চাই পণ্যের গুণগত মান সবসময় ভালো দিতে। সাধ্যের মধ্যে সেরাটা দেয়াই হলো আমার উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। যারাই আমার ক্রেতা এবং রিপিট ক্রেতা হয়েছেন, তাদের মাধ্যমে বুঝতে পারছি আমি পণ্যের মান কতোটুকু ভালো দিচ্ছি। ক্রেতার সন্তুষ্টি নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই হলো আমার উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট বর্তমানে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনেকটাই উপযোগী। তাইতো আমার মতো হাজারো নারীরা আজ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারছে। আশেপাশে যারাই আমার উদ্যোগ সম্পর্কে জেনেছে, তাদের অনেকেই অনেক রকমের কথা বার্তা বলে। আমি এখন আর ওসব সমালোচনা কে গুরুত্ব দেইনা।

বরং তাদের সমালোচনা কে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আর তারা নিজেরাও একদিন উপলব্ধি করবে, নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত শুধুমাত্র টাকার জন্য নয়, নিজের একটি পরিচয় তৈরী করার জন্য।

আরও পড়ুনঃ চাকরির পাশাপাশি একজন উদ্যোক্তা নুসরাত সুলতানা রেখা

সেল যা হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ, আমি সন্তুষ্ট। আমার উদ্যোগের শুরুতে এখন পর্যন্ত যারাই আমার ক্রেতা এবং রিপিট ক্রেতা হয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ সবাই আমার সার্ভিসে খুব সন্তুষ্ট। সরকারি এবং বেসরকারি কোনো সহযোগিতা বা অনুদান এখনো পাইনি।

আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, “অরিন’স কালেকশন” ক্রেতা সন্তুষ্টি নিয়ে দেশ-বিদেশে পরিচিতি পাক এটাই আমার সব থেকে বড় স্বপ্ন। আজ থেকে ৫ বছর পর আমি নিজেকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে এমন একটি আসনে দেখতে চাই, যাতে সবাই আমাকে এক নামে চেনে।

প্লাস্টিক খাতের উদ্যোক্তারা ব্যবসায় হয়রানিমুক্ত পরিবেশ চান

Previous article

ছাত্রলীগ নেতার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

Next article

You may also like

1 Comment

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *