উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

কাজ প্রেমী কাকন আক্তার সায়মা এখন উদ্যোক্তা

1
Cherry Blossom Watercolor Facebook Cover 11

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন কাকন আক্তার সায়মা। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আমি কাকন আক্তার সায়মা। জন্ম পদ্মার তীর ঘেঁষে বেড়ে ওঠা শরীয়তপুর জেলায়। নড়িয়া থানার ঘড়িষার আমার গ্রাম। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি।

আমি একজন কাজ প্রেমী মানুষ। সবসময় কিছু না কিছু কাজ করার চেষ্টা করি। খুব ছোট থেকে আমার স্বপ্ন ছিলো নিজে কিছু করবো, নিজের একটা শপ থাকবে সেখানে কিছু ওয়ার্কার থাকবে। তাই হাতের কাজ থেকে শুরু করে সেলাই করা, নকশী আঁকা ও ঘরের সব ধরনের কাজ শিখতে শুরু করলাম। আমার মা ও আমার প্রিয় বোনরা আমাকে কাজ শিখতে সাহায্য করেছেন। আমার বাবা সবসময় আমাকে বলতেন, নিজের কাজ কে ভালোবেসে করলে কাজে সফলতা আসে। আমাকে বলতেন নিজে কিছু করো। আজ বাবা নেই, তবে বাবার দোয়া সর্বদা আমার পাশে আছে।

২০২০ সালের ২০ নভেম্বর আমার বন্ধু শরীফ নেওয়াজ আমাকে ‘উই’তে যুক্ত করেন। তখন তেমন কিছু বুঝতাম না, ভাবতাম আমাকে কেনো যুক্ত করলো? কি হবে এখানে থেকে? একদিন এক আপুর পোষ্ট খুব মনযোগ দিয়ে পড়লাম, তার জীবনের পথচলার কথা, তার সফলতার গল্প আমাকে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করলো। সাথে আমার কাজিন মাহফুজ রহমান ও মাকসুদা মুন্নি এরা আমাকে অনেক উৎসাহিত করলো। ওরা আমাকে অনলাইন বিজনেস কিভাবে করতে হয় কিছুটা শিখিয়ে দেন। তাদের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

আমার জীবনের বড় সাপোর্ট আমার মা। সবসময় মা আমার পাশে থেকেছেন এবং কাজে মনযোগী করে তুলেন। তার সাথে ভালোবাসি ‘উই’কে, ভালোবাসি ‘উই’ জননী নিশা আপুকে। আমি কাজ করছি নকশীকাঁথা, বেবি নকশীকাঁথা, নকশী মাটির আসবাবপত্র, খাঁটি ঘি ও নারকেল নাড়ু নিয়ে। আমার উদ্যেগের নাম “Village Food with Sayma” (ভিলেজ ফুড উইথ সায়মা)।

কাজের শুরুটা খুব একটা সহজ ছিলো না। কিভাবে করবো, সেল হবে কিনা, লোকে কি বলবে এই নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। আর অনেকে অনেক কথা বলেছেন, তখন মন কে একটাই বুঝ দিলাম লোকে যা বলে বলুক, আমার পিছে ফিরলে চলবে না এগিয়ে যেতে হবে।

৩৫০ টাকা দিয়ে আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করি। একজন উদ্যোক্তা কে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে, তবেই না সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। এখন পর্যন্ত আমার উদ্যোগের কাজ আমি নিজেই করে থাকি। আমার পেইজের পণ্য সোর্সিং, প্যাকেজিং ও ডেলিভারি ম্যানের হাতে পৌঁছে দেয়ার যাবতীয় কাজ আমি নিজেই করে থাকি।

আমার প্রিয় ভাই ও বোনদের কে একটা কথা বলবো, পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পিছে না ছুটে নিজে কিছু করো এবং অন্য কে কিছু করার সুযোগ করে দাও। আমার কাছে এটাই সর্বোত্তম পন্থা মনে হয়েছে তাই আমিও উদ্যোক্তা হয়েছি।

বর্তমানে আমি নারীদের নিয়ে গঠিত এশিয়ার সবচেয়ে বড় অনলাইন গ্রুপ Women and e-Commerce Trust (WE) এর শরীয়তপুর জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্বরত আছি। ‘উই’ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যেতে অনেক ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও ‘উই’ এর কল্যাণে পেয়েছি কাছের দূরের অনেক মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া। ১২ লাখ এর বেশি সদস্য বিশিষ্ট গ্রুপটিতে আমাকে অনেকেই চিনেন, আমার পরিচিতি অনেকেই তুলে ধরেন।

আরও পড়ুনঃ আমি কখনোই সমালোচকদের পাত্তা দেইনি- দোলনা আক্তার মিতু

আমার উদ্যোগে আমি চাই পণ্য যাচাই করে গুনগত মান সবসময় ভালো দিতে। সাধ্যের মধ্যে সেরাটা দেয়া আমার উদ্যোগের কাজ। যারাই আমার ক্রেতা বা রিপিট ক্রেতা হয়েছেন, তাদের মাধ্যমে আমি বুঝতে পেরেছি আমার পণ্যের মান কতটুকু ভালো দিতে পেরেছি।

আমাদের দেশের প্রক্ষাপট বর্তমানে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ উপযোগী। তাইতো আমার মতো হাজারও নারী নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই আমার উদ্যোগের কথা শুনেছেন বা জেনেছেন, অনেকে অনেক কথা বলেছেন। আমি এখন আর তাদের কথায় কান দেইনা। বরঞ্চ সমালোচনা কে সামনে রেখে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

এখন পর্যন্ত সেল যা হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। আমার উদ্যোগে যারাই আমার ক্রেতা, রিপিট ক্রেতা হয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ তারা আমার সার্ভিসে খুশি ও সন্তুষ্ট হয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা এখনো পাইনি।

আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো “Village Food With Sayma” ক্রেতা সন্তুষ্টি নিয়ে দেশ-বিদেশে যেনো পরিচিতি পায়। সেই লক্ষ্যে আমি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আগামী ৫ বছর পর আমি নিজেকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

ছাত্রলীগ নেতার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

Previous article

ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের মেয়াদ ৫ বছর করার দাবি

Next article

You may also like

1 Comment

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *