উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

কোনো সহায়তা ছাড়াই আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে উদ্যোক্তা পথ বেছে নেন জিনিয়া

1
Untitled design 1

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন জাকিয়া রহমান জিনিয়া। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আমি জাকিয়া রহমান জিনিয়া। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার বেগুনবাড়ি আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ছোটবেলায় আব্বা মারা যান আর তার তিন বছর পর বড় ভাইয়াও না ফেরার দেশে চলে যান। এতো বড় একটা ধাক্কা আমাদের পরিবার সামলিয়ে ওঠা খুব কষ্টসাধ্য ছিলো।

এর মধ্যে পরিবারের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হতো বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়েই। তিনজন পড়াশোনা করতাম। অনেক হিসাব করেই আমাদের চলতে হতো। এরপরও আমার পরিবারের ছেলে সদস্যরা চাকরি করতে আগ্রহী ছিলেন না। তাদের চিন্তা বাড়িভাড়া উঠবে তা দিয়ে চলবে যেমন চলছে।

পড়াশোনা করতাম মন দিয়ে যেনো একটা সময় ভালো একটা চাকরি করতে পারি, কারণ ভাইয়ার মতো আমি বসে থাকবো না কিছু একটা করবো আর আম্মার হাতে মাস শেষে বেতনের টাকা টা এনে দিবো। পড়াশোনার পাশাপাশি স্টুডেন্ট পড়াতাম। এভাবে চলতে চলতে ২০০৮ সালে এইচ.এস.সি পরীক্ষার পর পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দেয়। কারণ বাবা, বড় ভাই ছাড়া মেয়ে মানুষ যতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া যায় ততোই ভালো এমন একটা চিন্তা ভাবনা আরকি।

বিয়ের পর খুব কষ্ট করেই নিজের পড়াশোনা শেষ করি। পাশাপাশি বি.এড করি যাতে অন্তত শিক্ষকতা পেশায় ঢুকতে পারি। তাও হলো না কারণ পরিবার থেকে সাপোর্ট নাই। সংসার আর ছেলের লালন পালন করলেই হবে আর কিছু করা লাগবেনা। এভাবে চলতে চলতেই যখন ২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময় লকডাউন শুরু হয় তখন ফেসবুকে Women and e-Commerce Trust (WE) এর পোস্টগুলো পড়তাম।

পোস্ট পড়ে সবার কাজে আসার গল্প, লেগে থাকার, কষ্টের, ধৈর্য্য ও সফলতার গল্প এসব কিছু আমাকে সাহস দিয়েছিলো নিজে কিছু করার। তারপরই আমি সিদ্ধান্ত নেই ঘরে বসে কাজ শুরু করবো। নিজের টিউশনের কিছু জমানো টাকা দিয়ে শুরু করি আমার “Hijab Gallery” (হিজাব গ্যালারি) এর উদ্যোগ।

শুরুটা মোটেও সহজ ছিলো না। পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া নিজে একা অপরিচিত একটা জগতে নেমেছিলাম শুধুমাত্র হিজাব সম্পর্কে আমার ধারণা ভালো ছিলো সেজন্য। আর নিজের প্রতি বিশ্বাস ছিলো আমি পারবো ইনশাআল্লাহ।

একজন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অবশ্যই যে পণ্য নিয়ে কাজ করবো সে সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। পণ্য সংগ্রহ, পণ্য মজুদ, প্যাকেজিং, ডেলিভারি সব কিছুর জন্য পূর্ব পরিকল্পনা থাকতে হবে।

আমার উদ্যোগের একমাত্র কর্মী আমি নিজে। কারো কোনো সাপোর্ট আমি পাইনি। নিজের প্রতি বিশ্বাস আমাকে এই পর্যন্ত আসতে সাহায্য করেছে। আমি নিজেই পণ্য সংগ্রহ করি, ফটোসেশন করি, প্যাকেজিং করি আর ডেলিভারি ম্যান পর্যন্ত পৌঁছে দেই। “Hijab Gallery” পেইজটাও আমি একা একা খুলি কারো কোনো সাহায্য ছাড়া। এ জন্যই হয়তো এখন পর্যন্ত ভালোভাবে গুছিয়ে উঠতে পারিনি। তবে ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবে একদিন।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক সময় যে প্রতিকূল পরিবেশ ছিলো তা এখন অনেকাংশে কম। বিশেষ করে ‘উই’ এর সহায়তায় আজ নারীরা বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে ঘরে বসে কাজ করতে পারছে। নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করতে পারছে আর পরিবারে স্বামীর সাথে নিজেও অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে পারছে।

আমার উদ্যোগ শুরু করার প্রথম থেকেই প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে চলছি। শুরুতে আমার স্বামী এসব কাজে সহমত না হলেও বাঁধা দেননি। কিন্তু লোকের খোঁচামারা কথায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন আর আমাকেও দমিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে আমি নাছোরবান্দা, এখন পর্যন্ত লেগে আছি নিজ উদ্যোগ নিয়ে আর থাকবো ইনশাআল্লাহ।

এখন অবশ্য তেমন কিছু বলেন না আবার সাপোর্টও করেন না। উদ্যোগের শুরু থেকে এই পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ সেল ভালো হচ্ছে। এই বছর সিজনাল ফল আম নিয়ে কাজ করেছি, এতে আমাদের এরিয়া বসুন্ধরা থেকে আপুদের সাপোর্ট পেয়েছি।

কাস্টমার সন্তুষ্টি অর্জন করা সব উদ্যোক্তার লক্ষ্য। এর জন্য পণ্য দেখানো থেকে শুরু করে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত সব দিক যেনো ঠিক থাকে তা করে থাকি। এই পর্যন্ত হিজাব, ড্রেস আর আম নিয়ে ক্রেতার সন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে তাদের রিভিউ পোস্টগুলোতে আলহামদুলিল্লাহ। আমার রিপিট কাস্টমারও আছেন বেশ কয়েকজন।

এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি। তবে যদি পাই তাহলে আমার উদ্যোগ কে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। আমার উদ্যোগ নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক বড় একটা পর্যায়ে যাওয়া। নিজের একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। আমার প্রতিষ্ঠানে যেনো নারীদের কর্মসংস্থান হয় সেই ইচ্ছা আমার।

আমি স্বাবলম্বী হবো পাশাপাশি আরো কয়েকজন নারী নিজের একটা পরিচয় তৈরি করবে। আমি যা পাইনি তারা তা পাবে। আমার প্রতিষ্ঠানের অর্জন হবে সেদিনই, যেদিন আমি ও আমার কর্মীরা মিলে একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারবো। ততোদিন আমি ধৈর্য্য ধরে পরিশ্রম করে যাবো ইনশাআল্লাহ।

ই-ক্যাব এর নব নির্বাচিত ইসি কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ

Previous article

আন্তর্জাতিক বাজারেও নিজ পণ্যের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চান অনুভা

Next article

You may also like

1 Comment

  1. অনেক দোয়া রইল অাপনার জন্য

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *