উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা গৃহিণী থেকে উদ্যোক্তা বনে গেলেন মেহেরুননেছা রিনা By নিজস্ব প্রতিবেদক June 23, 20220 ShareTweet 0 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন মেহেরুননেছা রিনা। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প। আমি মেহেরুননেছা রিনা, টাংগাইলের এর মেয়ে। আমার জন্ম টাংগাইলে কিন্তু বেড়ে উঠাঢাকার রামপুরাতে। আমি ছোট বেলায় ক্লাশ ফোর পযর্ন্ত স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করি। এরপর মেয়েদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মির্জাপুর ভারতেশ্বরী হোমস থেকে এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পাস করি। তারপর ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ভূগোলে অনার্স এবং মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করি। মাস্টার্স পরীক্ষা চলাকালীন সময় বিয়ে হয়ে যায়। এরপর সন্তানের জন্ম। আর বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য কোনো মানুষ না থাকায় কখনো ঐ রকম সুযোগ হয়নি চাকরী-বাকরী করার। তবে একটা প্রাইভেট স্কুলে কিছুদিন জব করেছি। তারপর বাচ্চাকে স্কুলে দেওয়া এবং তাকে নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করা। আর আমার স্বপ্ন এবং সার্টিফিকেট বস্তাবন্দী হয়ে গেলো। আমার উদ্যোগের নাম “Nabila’s Shop” (নাবিলা’স শপ)। এটা আমার স্বপ্নের নাম, এটা আমার মেয়ের নাম। কাজকরছি ওমেন্স ক্লোথিং এবং ফুড আইটেম নিয়ে । তবে আমার সিগনেচার প্রোডাক্ট ‘‘ডাবের পানির পুডিং’’। কাজে উৎসাহিত করার পেছনে আমার স্বামী, আমার দেবর এবং বান্ধবীরা অনেক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। শুরুটা ছিলো ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে । বাচ্চদের স্কুল চলাকালীন সময় ব্যস্ততার কারনে অনেকটা ভুলে থাকতাম কিছু না করার বেদনা। কিন্তু যখন সবকিছু বন্ধ, ঘর বন্দি হয়ে পড়লাম তখন আবার হতাশায় পড়লাম; যে আমি কিছু করতে পারলাম না। অনেক দিন থেকেই শখ ছিলো কিছু একটা করবো। আর আমার সবচেয়ে বেশী খারাপ লাগত যখন বাচ্চদের কোনো ফরম পূরণ করতাম। যখন লিখতাম আমি একজন হাউজ ওয়াইফ, তখন সবচেয়ে বেশী খারাপ লাগত। যদি ও হাউজ ওয়াইফ এর কাজ অনেক বেশী, তারপরও আমার মনে হতো আমার সার্টিফিকেটের কোনো মূল্য নেই । তখন আমি Women and e-Commerce Trust (WE) গ্রুপে আমার দুইজন বান্ধাবী কান্তা ইসলাম ও ফরিদা নার্গিস এর মাধ্যমে জয়েন হই। সেখানে প্রতিনিয়ত সবার জীবন পরিবর্তনের গল্প পড়তাম এবং আমার চেয়েও অনেকের খারাপ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শুনে আমার নিজের কিছু করার ইচ্ছা থেকেই উদ্যোগ গ্রহন করা। শুরুতে আমার মূলধন ছিলো ১৫০০ টাকা। একজন উদ্যোক্তাকে খুব পরিশ্রমী হতে হবে। সব দিকে অলরাউন্ডার থাকতে হবে। সৎ, নিষ্ঠা এবং পরিশ্রমী হতে হবে। যেকোনো সিন্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখাতে হবে। স্থান,কাল পাত্র ভেদে পোশাক নির্বাচন এবং সময়ের সাথে সাথে ফ্যাশনে বৈচিত্রতা আনতে হবে। আমার প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মী আছে। আমি এবং সে মিলে দুজনেই দেখভাল করছি। তবে ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক পরিধি বৃদ্ধি হলে আরো কর্মী নিয়োগের চিন্তা ভাবনা আছে। আমাদের দেশে সরকারী চাকরী ছাড়া অন্যান্য চাকরীর কোনো নিশ্চয়তা নেই। করোনাকালীন সময়ে সবাই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে এর ফল। ব্যবসা করলে নিজের ইনকাম কম হলেও আমার বেশী হলেও আমার। আমি একজন ক্ষদ্র উদ্যোক্তা। আমার এখানে সব ধরনের ওমেন্স ক্লথিং আইটেম, পাঞ্জাবী, বিছানার চাদর এবং কিছু হোমমেইড ফুড আছে। আমরা ভালো প্রোডাক্ট দিয়ে থাকি। আমাদের প্রোডাক্টে আজ পযর্ন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি আলহামদুলিল্লাহ। কাষ্টমাদের সাথে আমাদের রিলেশন খুব ভালো এবং সঠিক সময় মতো আমরা ডেলিভারি দিয়ে থাকি। বর্তমানে নারী উদ্যোক্তাদের অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারীদের জন্য নানা রকম সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। ঠিক সেই রকমই ‘উই’ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপুও আমাদের মত ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের যোগ্য এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন স্বল্প মুল্যে। যাতে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারি। আজ এই ‘উই’ গ্রুপের মাধ্যমে লাখো নারী স্বনির্ভর হয়েছে। কাজের সুযোগ অনেক আছে কিন্তু এখনো ও আমাদের দেশের নারীরা সামাজিকতা এবং পারিপার্শ্বিকতার কথা চিন্তা করে ওইভাবে এগিয়ে আসছে না, আমার মনে হয় এখন আর সেই দিন নাই। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা এগিয়ে চলছে। নারীদের আরো এগিয়ে আসা উচিত। বর্তমান সময়ে নারীদের অনেক সুযোগ সুবিধা তৈরী হয়েছে এবং অনেক কাজের ক্ষেত্রও তৈরী হয়েছে। প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। আর তার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পরিবার থেকে সার্পোট পায় খুব কম সংখ্যক মানুষ। বেশিরভাগই সার্পোট দেয়না। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে অনেক রকম প্রতিবন্ধকতা আসবেই। এই সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে য়েতে হবে স্বপ্নের পথে। আমার মাসিক আয় আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালো। আমাদের কাস্টমার সার্ভিসও খুব ভালো। আমার প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় অর্জন কাস্টমার সন্তুষ্টি। এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা নেয়া হয় নাই। তবে ভবিষ্যতে নেয়ার চিন্তা ভাবনা আছে। আমার প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। আমি এমন একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাই যা এক সময় এক নজরে সবার সামনে আসবে এবং পাঁচ বছর পরে আমি আমার এই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে সক্ষম হবো বলে আশাবাদী।
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231560 views