উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হলেন সুরাইয়া আক্তার

0
Untitled design 6

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা সুরাইয়া আক্তারের সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

আমার নাম সুরাইয়া আক্তার, ডাক নাম ববি। আমার জন্ম চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠাছড়া তে। আমার ছোটবেলা, বেড়ে উঠা সব মিঠাছড়াতেই।

আমার বাবা ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মা ও শিক্ষকতা করতেন। আমরা দুই ভাই দুই বোন। চার ভাইবোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। আমার বাবা-মা দুজনেই আমাদের দুই বোনকে সবসময় উৎসাহ দিতো কিছু করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য। আমার বাবা-মায়ের উৎসাহের কারণে আমার বোন সেবিকা হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করে।

আমি মিঠাছড়া হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং মিরেশ্বরাই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে, ফেনী কলেজ থেকে সমাজকর্মে অনার্স করে ২০১৩ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করি। আমি যখন ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়তাম তখন থেকেই টিউশনি করাতাম এবং অনার্স ও মাস্টার্স পড়াকালীন সময়ে আমি পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করি।

অনার্স প্রথম বর্ষ পড়াকালীন সময়ে আমি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে ফেনী শাখায় জয়েন করি। দুই বছর চাকরি করার পর আমি চাকরিটি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিই, কারণ অনার্স পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি চালিয়ে যাওয়া আমার জন্য কষ্টকর ছিলো। পরবর্তীতে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার পর আমি জনতা ব্যাংক ফেনী শাখায় ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পাই। মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার পর আবার মাথায় আসলো মাস্টার্সে আমাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে, সেজন্য জনতা ব্যাংকের ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের চাকরি ছেড়ে দিই এবং ভালো রেজাল্টের আশায় পুরো সময়টা লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করি। আলহামদুলিল্লাহ মাস্টার্সে আমি প্রত্যাশা অনুযায়ী ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি।

২০১৪ সালে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর কর্তামশাই এর সাথে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় এসে আমি নিউ লাইট হাই স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা শুরু করি। আমার বড় মেয়ে পেটে আসার পর আমি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরিটি ছেড়ে দিই। বড় মেয়ের দুই বছর হওয়ার পর আমি জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড কোম্পানিতে জয়েন করি। জেনেক্স ইনফোসিস কোম্পানিতে চাকরি এক বছর করার পর আমার দ্বিতীয় সন্তান পেটে আসে তখন আমি চাকরিটি ছেড়ে দিই। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় সন্তান ছেলে হওয়ার পর দুই বাচ্চা লালন পালন করে চাকরি করা আমার জন্য খুব কঠিন ছিলো। আর তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই চাকরি না করে অনলাইনে ব্যবসা করার। তারপর Women and e-Commerce Trust (WE) গ্রুপে জয়েন হই।

আমি জামদানি থ্রি পিস, বেডশিট, মনিপুরী শাড়ি ও জিন্স প্যান্ট নিয়ে কাজ করি। প্রোডাক্ট এর কোয়ালিটি সবসময় ভালো রাখার চেষ্টা করি। কাস্টমার সার্ভিস আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো।

আমি শুরুতে ২৫,০০০ টাকা দিয়ে শুরু করি। শুরুটা আলহামদুলিল্লাহ ভালো ছিলো। অফলাইনে খুব ভালো সেল হতো। প্রোডাক্টের কোয়ালিটি ১০০% ভালো দেওয়ার চেষ্টা করি। পরবর্তীতে ২০২০ সালে আমার তৃতীয় সন্তান আমার ছোট মেয়ের জন্ম হয়। আর এরপর থেকেই আমার সংগ্রাম শুরু হয়, তিনটা পিঠাপিঠি বাচ্চা লালন পালন করার পর অনলাইনে এবং অফলাইনে ব্যবসায় সময় দিতে হয়। আর এসব কিছু আমার এক হাতে করতে হয়।

আমি মনে করি একজন উদ্যোক্তা হতে হলে লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ট আগ্রহী হতে হবে। কঠোর পরিশ্রম ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। যতটা সম্ভব নমনীয় হতে হবে। অবশ্যই সততা থাকতে হবে। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মী আছে এবং আমি নিজে কাজ করি।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ  শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা শেষে চাকরি খুঁজতে ব্যস্ত থাকে। আমিও একসময় চাকরি খুঁজতাম, কিন্তু কি আর করা, তিন বাচ্চা নিয়ে চাকরি করা অনেক কষ্টের। তাই উদ্যোক্তা হওয়ার পথে পা বাড়ালাম।

আমার অনলাইন শপ এর নাম “Suraiya e-Shop” (সুরাইয়া ই-শপ)। আমি ২০১৯ সালে পার্টনারশিপ এর মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসা শুরু করি। আমাদের পার্টনারশিপ ব্যবসাটা শুরুতে লস হওয়াতে আমি বিশাল এক ধাক্কা খাই। আলহামদুলিল্লাহ পরবর্তীতে এই লসের ধাক্কা সামলিয়ে নিজে এককভাবে ঘুরে দঁড়িয়েছি। এখন আমার সিগনেচার পণ্য জামদানি থ্রি পিস। আমার মনিপুরী শাড়ি, মুসলিম শাড়ি লন্ডন পাঠিয়েছি এবং স্টক লট এর জিন্স প্যান্ট কেনিয়া, লন্ডন ও মালেশিয়ায় পাঠাই।

আমাদের দেশের অর্ধেকেরও বেশি নারী। একটা সময় নারীরা অবহেলিত ছিলো। এখন নারীরা তাদের অধিকার বুঝে। তারা নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে চায়। নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নারীর সফলতা ও নারীদের এগিয়ে নেয়ার জন্য নাসিমা আক্তার নিশা আপুর অনেক অবদান রয়েছে। নিশা আপুর প্রতিষ্ঠান ‘উই’ থেকে নারী উদ্যোক্তারা সবরকম সাহায্য এবং সহযোগিতা পেয়ে থাকে।

প্রতিটি কাজের প্রতিবন্ধকতা থাকবে, তারপর কাজের সফলতা আসে। আমার প্রতিবন্ধকতাও আছে, আমার তিনটা বাচ্চাই ছোট সেজন্য আমাকে থেমে থেমে ধীর গতিতে কাজ করতে হয়। পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। আল্লাহ পরিশ্রমী ব্যক্তিকে খুবই পছন্দ করেন।

আলহামদুলিল্লাহ সেল অনেক ভালো। তবে মজার ব্যাপার হলো, আমার রিপিট কাস্টমার বেশি। আমি সবসময় কোয়ালিটি বজায় রাখি। সরকারি-বেসরকারি কোনো সুবিধা এখনো পাইনি। তবে এরকম কোনো সুযোগ আসলে ব্যবসায় তার সঠিক প্রয়োগ ঘটাবো ইনশাআল্লাহ।

আমার প্রতিষ্ঠানের সেরা অর্জন আমার উপর কাস্টমারের বিশ্বাস অর্জন। এর মধ্যে অন্যতম হলো রিপিট কাস্টমার। রিপিট কাস্টমার বাড়ানোতে মনোযোগ দিলে ব্যবসা অটোমেটিক বাড়বে।

আগামী পাঁচ বছর পর নিজস্ব কোম্পানি তৈরি করতে চাই, যেখানে ১০০ জন অসহায় ও নির্যাতিত নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে ইনশাআল্লাহ।

সমালোচনা কে পাত্তা না দিয়ে নিজ উদ্যমে এগিয়ে চলছেন আরজুমান আক্তার

Previous article

দুই মেয়ে এবং স্বামীর সহযোগিতায় এগিয়ে চলছেন আলেয়া মুশতারী

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *