খবরজাতীয়শীর্ষ সংবাদ জাতিসংঘে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী By রিপোর্টার September 24, 20220 ShareTweet 0 শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে আজ প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। যুদ্ধ অথবা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মত বৈরীপন্থা কখনও কোন জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়। আমরা বিশ্বাস করি যে সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান না করে আমরা শান্তি বজায় রাখতে পারি না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ ও গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সকল মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসঙ্কটে পতিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। মানুষ খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে, শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই, একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব-যেখানে থাকবে বর্ধিত সহযোগিতা, সংহতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টা। আমাদের একটি মাত্র পৃথিবী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই গ্রহকে আরও সুন্দর করে রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। আরও পড়ুনঃ দেশে বিপুল মার্কিন বিনিয়োগ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ মহামারী প্রাদুর্ভাবের পর এই প্রথম ১৯৩টি সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন ১৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে সংস্থার সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, এই অধিবেশন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন, সহিংসতা ও সংঘাত, কোভিড-১৯ মহামারির মত একাধিক জটিল এবং বহুমাত্রিক প্রতিকূলতায় পৃথিবী নামক আমাদের এই গ্রহ আজ জর্জরিত। মানবিক চাহিদা গভীর হচ্ছে, জলবায়ু লক্ষ্যগুলি মূলত অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে, বৈষম্য আরও প্রকট হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্ব নেতারা সাধারণ পরিষদ হলে ব্যক্তিগতভাবে বিবৃতি বিনিময় করবেন, ‘একটি সঙ্কটপূর্ণ সন্ধিক্ষণ: আন্তঃসংযুক্ত প্রতিকূলতাসমূহের রূপান্তরমূলক সমাধান।’ শীর্ষক এবারের প্রতিপাদ্যটি এ সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলায় এবং আমাদের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে শান্তিপূর্ণ ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলার উপায় খুঁজে বের করার জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ আকাক্সক্ষার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের এখনই সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। শেখ হাসিনার ভাষণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, কোভিড-১৯ মহামারী, ফিলিস্তিন এবং অভিবাসন বিষয়ক বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখযোগ্যভাবে স্থান পেয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, গত আড়াই বছরে বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মহামারীর বিধ্বংসী প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেছে, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে একটি সম্মিলিত অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়তা-প্রার্থী ঝঁকিপূর্ণ দেশগুলো এখন আরও প্রতিকূলতার মুখে পড়েছে। বর্তমানে আমরা এমন একটি সঙ্কটময় সময় অতিক্রম করছি, যখন অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে অধিক পারস্পরিক সংহতি প্রদর্শন করা আবশ্যক। তিনি বলেন, আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে, সঙ্কটের মুহূর্তে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হল জাতিসংঘ। তাই সর্বস্তরের জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনের জন্য জাতিসংঘকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সকলের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ’ গঠন করায় জাতিসংঘের মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে, আমি বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব ও সঙ্কটের গভীরতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বৈশ্বিক সমাধান নিরূপণ করতে অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, করো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এর উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই এই প্রতিপাদ্য-উদ্ভূত জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে আসছে। ১৯৭৪ সালের ২৫-এ সেপ্টেম্বর এই মহান পরিষদে জাতির পিতা প্রদত্ত ভাষণের একটি চুম্বকাংশ তিনি উদ্ধৃত করেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘শান্তির প্রতি যে আমাদের পূর্ণ আনুগত্য তা এই উপলব্ধি থেকে জন্মেছে যে, একমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই আমরা আমাদের কষ্টার্জিত জাতীয় স্বাধীনতার ফল আস্বাদন করতে পারবো এবং ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগ-শোক, অশিক্ষা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য আমাদের সকল সম্পদ ও শক্তি নিয়োগ করতে সক্ষম হব।’ তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বক্তব্য এখনও সমভাবে প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্বাস করতেন যে, শান্তি হল বিশ্বের সকল নারী-পুরুষের আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তব প্রতিরূপ। যুদ্ধের ফলে মানবজাতি, বিশেষ করে শিশু ও নারীরা চরম কষ্ট ভোগ করে। কত মানুষ রিফিউজি হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকে এ সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ মূলত তিনটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে কৌশল নির্ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমত, মহামারি সংক্রমণ ও বিস্তাররোধ করতে আমরা জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করেছি। দ্বিতীয়ত, আমাদের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে কৌশলগত আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেছি, এবং তৃতীয়ত, আমরা জনগণের জীবিকা সুরক্ষিত রেখেছি। এসব উদ্যোগ মহামারিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস করার পাশাপাশি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সাহায্য করেছে, বলেন তিনি। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে স্বদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে তাদের গণহারে বাংলাদেশে প্রবেশের ইতোমধ্যে পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরীতে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানো যায়নি। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে আরও দূরুহ করে তুলছে। আশা করি, এ বিষয়ে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন June 23, 20241
‘রাইজিং স্টার চ্যারিটি বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে অসহায় ব্যক্তিবর্গের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ January 28, 202487 views
শকুন ও রাজনীতির কাক থেকে দেশ বাঁচাতে হবে, বিএনপি’র পতনযাত্রা ডুববে যমুনা বা বুড়িগঙ্গায় : তথ্যমন্ত্রী October 21, 2023169 views
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231562 views