ব্যবসা-বাণিজ্য

টেকসই অর্থনীতির জন্য সার্কুলার ইকোনমি অপরিহার্য

0
IMG 20220131 WA0049

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক সম্পদের অপরিকল্পিত ব্যবহার বাড়ছে। পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ু,বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। শঙ্কা তৈরি হচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের। আগামী প্রজন্মের জন্য জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ , জীব বৈচিত্র রক্ষা, বর্জ্য ও দূষণ রোধ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই টেকসই অর্থনীতির জন্য সার্কুলার ইকোনমি অপরিহার্য বলে মনে করেন, এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, শিল্পমন্ত্রণালয়ে গঠিত হবে সার্কুলার ইকোনমি সেল।

এমন পরিস্থিতিতে সার্কুলার ইকোনমি বা বৃত্তাকার অর্থনীতির বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। বৃত্তাকার অর্থনৈতিক মডেলে উৎপাদন ও ভোগের মধ্য সমন্বয় সাধন হয়। পণ্য ব্যবহারের পর বর্জ্য সংরক্ষণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এর ফলে কার্বন নিঃসরণ কমে, দূষণের হাত থেকে রক্ষা পায় পরিবেশ। তাই টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের কার্যকর হাতিয়ার হচ্ছে সাকুর্লার ইকোনমি।

রোববার, জানুয়ারি ১৬, ২০২২: এফবিসিসিআই আয়োজিত, “সার্কুলার অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি: সমস্যা ও সম্ভাবনা” শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন।

রাজধানীর  মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতি বলেন, বিশ্বে এখন কেউ বর্জ্যকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেনা। এক শিল্পের বর্জ্য অন্য শিল্পের জন্য উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন, ২০৩১ সাল নাগাদ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশের।

এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর সেজন্য সার্কুলার ইকোনমির বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। দেশে নির্মাণ শিল্প, টেক্সটাইল,মোটর গাড়ি, লজিস্টিকস, কৃষি, আসবাব, তেল ও গ্যাস,নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতকে সার্কুলার ইকোনমিতে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে।  বাংলাদেশে মাথাপিছু বার্ষিক প্লাস্টিক ব্যবহার মাত্র ৭ থেকে ৮ কেজি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ পরিমাণ ১৩০ কেজি। পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যকে পুনরায় সম্পদে রুপান্তর করছে দেশটি।

তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো সার্কুলার ইকোনমি প্রয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। ইউরোপীয় কমিশন এরইমধ্যে সার্কুলার ইকোনমি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে। এছাড়াও চীন, ব্রাজিল, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার ইকোনমিতে রুপান্তরের জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশেরও একই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

তবে সেজন্য উৎস্যে বর্জ্যকে ধরন অনুযায়ী আলাদা করে সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে আলাদা কোন ডাম্পিং জোন নেই যেখানে  বর্জ্যকে আলাদা করা সম্ভব। এজন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানান, সার্কুলার ইকোনমি নিয়ে কাজ করতে মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা সেল গঠন করা হবে। এই সেল সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংগঠনের সাথে একত্রে কাজ করবে। সার্কুলার ইকোনমি বিকাশের জন্য অপরিহার্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প। দেশে অনানুষ্ঠানিক ভাবে এ বিষয়ে অনেক কাজ হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। এই খাতের আনুষ্ঠানিকভাবে শিল্পের মর্যাদা পাওয়া উচিত বলে মনে করেন শিল্পমন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন আহমেদ জানান, বর্তমানে ৪০ শতাংশ প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। বাকি ৬০ শতাংশকেও এর আওতায় আনতে হবে। এজন্য প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ওয়ার্কিং পেপার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সুজাউদ্দিন। তিনি জানান, যে হারে বিভিন্ন  প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার হচ্ছে, তাতে কয়েক বছরের মধ্যে মূল্যবান বিভিন্ন খনিজের মজুদ শেষ হয়ে যাবে।

তবে পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে এ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশের বৃত্তাকার অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা আছে বলে জানানো হয় মূল প্রবন্ধে। দেশে অনানুষ্ঠানিক খাতে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনঃ প্রক্রিয়াজাত হয়। এবং সময়ের সাথে সাথে এই প্রবণতা বাড়ছে। এই খাতকে শিল্প হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে দেশের সার্কুলার ইকোনমির বিকাশ আরো গতিশীল হবে।

প্যানেল আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এনভায়রনমেন্টাল স্পেশালিস্ট ইয়ুন জো অ্যালিসন ই বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু পরিবেশ বান্ধব প্রবৃদ্ধির দিকে যাবো কীনা এখন তা নির্ধারণ করার সময় এসেছে । কেননা সম্পদের অবক্ষয় শুধুমাত্র আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কিংবা প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং ভবিষ্যতকেও চরম ঝঁকিতে ফেলবে।

টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়, সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা ও সচেতনতা বাড়াতে আরো বিনিয়োগ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। এছাড়াও প্যানেল আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর উপ-পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজান আর খান, এফবিসিসিআই’র প্যানেল উপদেষ্টা ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক। তারা বলেন সার্কুলার ইকোনমির সঠিক বাস্তবায়নে চাহিদা ও যোগানের সমন্বয়ের জন্য অ্যাকাডেমিয়া, শিল্পখাত ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা প্রয়োজন।

সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মোঃ আমিন হেলালী, মোঃ হাবীব উল্লাহ ডনসহ অন্যান্য পরিচালকবৃন্দ।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআই’র মহাসচিব মোহাম্মান মাহফুজুল হক।

বাংলাদেশ নিয়ে টিআইবি’র দুর্নীতি রিপোর্ট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত :- তথ্যমন্ত্রী

Previous article

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের প্রস্তুত থাকতে হবে:- শিক্ষামন্ত্রী

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *