উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

তিন বন্ধুর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফিদাতো’র যাত্রা শুরু

0
288248833 343319951294637 617809955057341605 n

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা সৈয়দা রেহনুমা তারান্নুমের সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

আসসালামু আলাইকুম। আমার নাম সৈয়দা রেহনুমা তারান্নুম। পড়তে পেরেছেন কিনা জানি না। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি অনেক কঠিন নাম। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। পড়ালেখা ও এখানেই। ফার্মেসীতে অনার্স এবং মাস্টার্স করেছি।

পড়ালেখা শেষ করে গড়পড়তা চাকরিই খুঁজছিলাম। একটা সফটওয়্যার ফার্মে ছিলামও কিছুদিন। কিন্তু অল্পতেই হাপিয়ে উঠি। মনে হতো চাকরি শেষ হলে আমাকে তো কেউ মনে রাখবে না। বুঝলাম আমাকে দিয়ে চাকরি হবে না। সালটা ২০১৬, তখন থেকেই ভাবনা নিজে কিছু করার। আম্মু এবং সহধর্মীও আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন সবসময়, যে চেষ্টা করলে তুমি পারবে।

পোশাকের প্রতি ভালোবাসা আমার ছোটবেলা থেকেই। আম্মুর সাথে ঘুরে ঘুরে কাপড়, বিভিন্ন এক্সেসোরিজ কিনে ডিজাইন করতাম। আম্মু সেভাবে তৈরি করে দিতেন। মোটামুটি কাপড় সম্পর্কে ধারণা আছে এই বিশ্বাস থেকেই কাপড় নিয়ে কাজ করা শুরু করি আমরা তিন বন্ধু মিলে। শাহরিয়ার কবির, ফাতেমা আক্তার আর আমি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছি। শাহরিয়ার আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, রেনসফট্ সলিউশন লিমিটেড এ ফার্মা সেলসে হেড হিসেবে কর্মরত। আর ফাতেমা ভাবী হসপিটাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে আছে এভারকেয়ার হসপিটালে।

‘FIDATO’ আমাদের তিনজনের মিলিত প্রয়াস । FIDATO শব্দের অর্থ বিশ্বাসযোগ্য। সবার আস্থার পাত্র যেনো হতে পারি সেই শপথ থেকে এই নামকরণ। আমাদের উদ্যোগে থাকছে দেশীয় বাটিক, ন্যাচারাল ডাই, স্কিন প্রিন্ট থ্রিপিস। আছে বিভিন্ন দেশীয় শাড়ি যেমন সুতি, হাফসিল্ক, কাতান ও জামদানী। একদম অরিজিনাল ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি থ্রিপিস যারা পছন্দ করেন তারা নিশ্চিন্তে আমাদের উপর ভরসা করতে পারেন।

শুরুতে আমরা তিনজন মিলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে সোর্সিং করেছি। মানের ব্যাপারে আপোষহীন থাকতে চেয়েছি। যেনো ক্রেতাগণ আস্থা রেখে আবার ফিরে আসেন। কষ্টকর এই যাত্রা আমাদের শিখিয়েছে নিজের পরিচয় তৈরি করা কতো কঠিন। যখন ই সুযোগ পাই বেড়িয়ে পড়ি ভিন্ন কিছুর খোঁজে। ২০২০ এর ডিসেম্বরে যখন FIDATO এর যাত্রা শুরু হয় তখন মূল্ধন ছিল ২৫,০০০ টাকা। শুধু কালেকশন না রেখে আমরা নিজস্ব কিছু তৈরি করতে চেয়েছি সবসময়। এখন পর্যন্ত ন্যাচারাল ডাই করেছি হাফসিল্ক ও জামদানী শাড়িতে আমাদের নিজস্ব কারিগর দিয়ে।

একজন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সদিচ্ছা, সৎ সাহস, শক্ত মনোবল ও সর্বোপরি কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা থাকা অত্যাবশ্যক। আমার ছোট্ট অভিজ্ঞতায় দেখেছি এই পথ মোটেও মসৃণ নয়। আশেপাশের মানুষ সহযোগী মনোভাবের হয় না সবসময়, উদ্যোগের কাজটাকে বাঁকা চোখেও দেখে! হোঁচট খেয়েও উঠে দাঁড়ানোর সাহসই পারে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এখনও ছোট পরিসরে কাজ করছি। তাই আমরা তিন বন্ধু মিলে সব কাজ পরিচালনা করছি।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থা মানুষের চিন্তা- সৃজনশীলতাকে একেবারে বাক্সবন্দী করে দেয়। তাই সবাই একই পথে হাঁটতে বাধ্য হয়। কিন্তু সব যুগেই ব্যতিক্রম ছিলো, আছে এবং থাকবে। নাহলে চাকরি করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হতো না। খুব ছোটবেলায় এক আঙ্কেল জিজ্ঞাসা করেছিলেন তুমি কার মতো হতে চাও? আমি খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছিলাম আমি হবো আমার মতো সবার থেকে একটু আলাদা। আমরা তিন বন্ধুই নিজের পরিচয় তৈরি করতে চেয়েছি আমাদের কাজ ও যোগ্যতা দিয়ে।

আগেই বলেছি আমরা মানের ব্যাপারে আপোষহীন। ট্রেন্ড বলেই মানহীন পণ্য নিয়ে কাজ করি নি কখনোই। নিজেদের স্বকীয়তা ও পণ্যের গুনগত মান ধরে রেখে এগিয়ে যেতে চাই অনেকদূর ইনশাআল্লাহ। ক্রেতার ভরসা অর্জনে আমরা বদ্ধ পরিকর। সৎভাবে পরিশ্রম করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চাই।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য কোনোকিছুই সহজ নয়। ঘরে কিংবা বাইরে বাঁধা বিপত্তি থাকবেই। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমি মনে করি পরিবারের সম্পূর্ণ সহযোগিতা পেলে উদ্যোগ পরিচালনা অনেক সহজ হয়ে যায়। যেমন আমি আমার পরিবার থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকি।

প্রতিবন্ধকতা তো থাকবেই নাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা তৈরি হয় না। পোশাকের উদ্যোগে প্রতিযোগিতা মনে হয় সবচেয়ে বেশী। টিকে থাকার লড়াই প্রতিদিন করতে হয়। একদিন কাজ না করলেই মনে হয় এক সপ্তাহ পিছিয়ে যাই। কখনো কারিগরের কাজ নিয়ে ঝামেলা হয়, আবার কখনো আমদানী নিয়ে ঝামেলা হয়। দুই ক্ষেত্রেই প্রোডাক্টের জন্য অনেক অপেক্ষা করতে হয়।

নতুন হিসেবে সেল আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমাদের অনেক রিপিট ক্রেতা তৈরি হয়েছে। তারা সবাই আমাদের সেবায় সন্তুষ্ট। এখনো সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমি বলবো ক্রেতার আস্থা, সন্তুষ্টি, ভালোবাসা ও দোয়া আমার প্রতিষ্ঠানের অর্জন। ক্রেতা আছেন বলেই আমরা বিক্রেতা হতে পেরেছি।

আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো FIDATO কে দেশের মধ্যে স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। তারপর একে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। দেশে-বিদেশে সবাই যেনো FIDATO কে এক নামে চেনে এর গুণগত মানের জন্য। ৫ বছর পর সুপরিচিত কোনো জায়গায় নিজেদের শোরুমের দ্বিতীয় বর্ষ উদযাপন করতে চাই।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ই-ক্যাব’র এর নবনির্বাচিত কমিটির শ্রদ্ধা নিবেদন

Previous article

চাকরি নামক সোনার হরিণের অনিশ্চয়তায় উদ্যোক্তা খাতায় নাম লিখালেন শামীম আরা ডালিয়া

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *