উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

দেশীয় পণ্য নিয়ে পথচলা সমৃদ্ধ করতে চান হাসিনা বিনতে হাই

0
289858537 562890088573798 4864167012672645185 n 1

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন হাসিনা বিনতে হাই। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আমি হাসিনা বিনতে হাই। জন্ম ঢাকায়, বেড়ে ওঠা খিলগাঁওয়ে। খিলগাঁও উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং খিলগাঁও মডেল কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও অনার্স করেছি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। পরবর্তীতে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। প্রায় তিন বছর খিলগাঁও এর একটা স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় ছিলাম। পরবর্তীতে কুড়িল বিশ্বরোডে পরিবার শিফট করায় কুড়িলেও আরেকটি স্কুলে তিন বছর শিক্ষকতা পেশায় ছিলাম।

আমি মূলত কাজ করছি মেয়েদের যেকোনো ধরনের জুয়েলারি, থ্রিপিস ও বেডশীট নিয়ে। আমার উদ্যোগের নাম “দেয়ালিকা”। অন্যের অধীনে চাকরি করতে করতে আমি নিজে আবিষ্কার করলাম, আসলে নিজের নিজস্বতা বলতে কিছুই থাকে না। সব কাজের জন্য অন্যকে জবাবদিহি করতে হয় যা আমার কখনোই ভালো লাগত না। তারপরও শিক্ষকতা যেহেতু একটি খুবই সম্মানের পেশা, তাই বেশ কিছুদিন এ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি।

পরবর্তীতে পারিবারিক কারণে নিজের ইচ্ছায় চাকরিটা ছেড়ে দেই। আমি উদ্যোগ গ্রহণ করি মূলত ২০২০ সালের শেষের দিকে। আমার উদ্যোগের শুরুটা খুব বেশি মসৃণ ছিলোনা, ছিলো কণ্টকাকীর্ণ।

একজন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আমি মনে করি সর্বপ্রথম যেটা প্রয়োজন তা হচ্ছে ধৈর্য্য ,ধৈর্য্য এবং ধৈর্য্য। যেকোনো কাজ করার আগে আপনাকে ভেবে নিতে হবে এর নেতিবাচক এবং ইতিবাচক দুটো দিক আছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা যেহেতু এখনও পুরুষতান্ত্রিক তাই নারীদের উদ্যোগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব খুব বেশি পরিমাণে পড়াটাই স্বাভাবিক।

আর এই সকল প্রতিকূলতা দূর করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ধৈর্য্য। ধৈর্য্য না থাকলে আপনি কখনোই কোনো কাজ সঠিকভাবে সুশৃঙ্খলভাবে করতে পারবেন না বলে আমি মনে করি। আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা শেষে চাকরি খুঁজতে ব্যস্ত থাকে, সেক্ষেত্রে আমি ভিন্ন হলাম কারণ আমি সবসময় চেয়েছি আমার একটা নতুন পরিচয় হোক! আমাকে সবাই যেনো হাসিনা বলেই চেনে।

আমি চাই আমার নিজস্ব ব্র্যান্ডিং ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচিত হতে। অন্যের পরিচয়ে পরিচিত হতে আমি কখনোই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারী উদ্যোক্তাদের এই যে উদ্যোগ গ্রহণ- নারীরা যে নিজেদের স্বাবলম্বী ও আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে, তা খুবই সময়োপযোগী।

বর্তমান যুগ যেহেতু ডিজিটাল যুগ, তাই এক্ষেত্রে নারীরা এখন ই-কমার্স কে পুঁজি করে তাদের জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে। আমার উদ্যোগের ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন আমাকে হতে হয়নি। কেননা আমি পরিবারের সাপোর্ট খুব ভালোভাবেই পেয়েছি। অনলাইন বিজনেস এর ক্ষেত্রে দিনরাত বলে কখনো কোনো কথা থাকতে পারে না। সেক্ষেত্রে আমি যখন যেখানে গিয়েছি আমার পরিবার আমাকে সাহায্য করেছে, কখনো আমাকে বাধা দেয়নি আমার কাজে। যার ফলস্বরূপ আমি এখনো আমার উদ্যোগকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে পারছি।

আমার সেল মোটামুটি ভালো আলহামদুলিল্লাহ। আমি আমার কাস্টমারের সাথে যতদূর পারি খুব ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করি। তাদের খোঁজ খবর রাখার চেষ্টা করি, কারণ ব্যবসা একদিনের নয়। তাদের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এতদিনে। আমাদের সেবায় কাস্টমার সন্তুষ্ট।

আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো আমি আমার পেইজ “দেয়ালিকা” কে একটা ব্র্যান্ডে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যাতে সবাই একনামে চেনে “দেয়ালিকা” মেয়েদের সকল পণ্য নিয়ে কাজ করে। স্বপ্ন দেখি আমি আমার প্রতিষ্ঠান কে নিয়ে আরো বহুদূর এগিয়ে যাবো দেশীয় পণ্যের সমাহার নিয়ে।

পাঁচ বছর পর আমি নিজেকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই। পাশাপাশি আমার মাধ্যমে আরো নারীদের স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে চাই। জানিনা কতদূর পারবো। তবে আত্মবিশ্বাস, মনোবল কে পুঁজি করে সামনে এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ! আমি পারবোই, আমাকে পারতেই হবে। দৃঢ় মনেোবল রাখি সবসময়ই।

বান্ধবীর অনুপ্রেরণায় হোমমেইড খাবার নিয়ে উদ্যোগ শুরু করেন জান্নাতুল ফিরদাউস শ্যামলী

Previous article

নিজের অনুপ্রেরণা থেকেই উদ্যোক্তা হলেন আফরোজা খানম লিপি

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *