উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

দেশ বিদেশের মানুষের মাঝে দেশীয় পণ্য ছড়িয়ে দিতে চান আফরিন মমতাজ

1
cvr 2 1

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন আফরিন মমতাজ। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আমি আফরিন মমতাজ। জন্ম নিজ মাতুলালয় রংপুর সদরে। বেড়ে ওঠা পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহ সদরে।

নিজে কিছু করার উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা মূলত বাবার থেকে পাওয়া। বাবার একটা কথা ছোট থেকেই অনুপ্রেরণা যোগাতো। বাবা সবসময় বলেন, মেয়েদের জীবনটা অনিশ্চিত, তাই প্রতিটা মেয়ের নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিৎ।

কাজ করছি মূলত হাতের কাজের পণ্য ও হ্যান্ডপেইন্ট খাদি পাঞ্জাবি নিয়ে। আমার উদ্যোগের নাম ঝুম্পুস কালেকশন। এটি অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ। কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।

শুরুটা করেছিলাম একেবারেই ক্ষুদ্র পরিসরে। ঢাকার একটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছি। করোনাকালীন সময়ে কলেজ বন্ধ, কাজের স্থবিরতা, চারদিকে অসুস্থতা সবমিলিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলাম। অবশেষে স্বামীর সহযোগিতায় ২০২০ সালে উদ্যোগ শুরু করি। মাত্র ৩০০০ টাকা মূলধন নিয়ে উদ্যোগের সূচনা।ftre 2 2আমার কাছে মনে হয় একজন উদ্যোক্তাকে হতে হবে সৃজনশীল, ধৈর্য্যশীল ও নমনীয়। পারষ্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় দক্ষতা। ক্রেতার ভালোমন্দের বিষয়টি সবার ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। বর্তমানে আমার উদ্যোগের সাথে কাজ করছেন ৪ জন।

আমি বরাবরই নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে ভালোবাসি। কলেজ জীবন থেকেই নিজের ভালোলাগা নিয়ে কিছু করতে চাইতাম। চাকরি করতে গিয়ে দেখেছি বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আচরণ। তখন মনে হতো চাকর হয়ে থাকার চেয়ে নিজে কিছু করা ভালো। তাই উদ্যোগের ওপর জোর দেয়া শুরু করি।

আমার উদ্যোগ ঝুম্পুস কালেকশনে দেশীয় পণ্যের সমাহার। নিজে দেশীয় পণ্য ভালোবাসি তাই দেশীয় পণ্য নিয়েই কাজ আমার। ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লার খাদি পাঞ্জাবি, হাতের কাজের থ্রিপিস, শাড়ি এবং নকশীকাঁথা রয়েছে উদ্যোগে।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একজন নারীকে কিছু করতে হলে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তাকে পরিবার, সংসার সবকিছু সামলে তারপর উদ্যোগের কাজ করতে হয়। যারা ধৈর্য ধরে নিয়মিত থাকতে পারে তারা এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু অনেক পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারনে আমাদের দেশের নারী উদ্যোক্তারা সেভাবে এগিয়ে যেতে পারছেনা। পরিবারের সাপোর্ট এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আমার উদ্যোগ পরিচালনা করতে এখনও তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়নি।

আরও পড়ুনঃ আমার প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ অর্জন কাস্টমারের সন্তুষ্টি : রওনক জাহান

সেল আলহামদুলিল্লাহ, তবে বিভিন্ন উৎসবে সেল এর পরিমাণটা একটু বেশি থাকে। এখন পর্যন্ত কোনো নেগেটিভ রিভিউ ক্রেতার কাছ থেকে পাইনি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি ক্রেতার সন্তুষ্টির জন্য।

বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি। তবে সরকারিভাবে “স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা অনুদান” প্রাপ্তি আমার উদ্যোগ এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে।

২০২২ সালে স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা অনুদান প্রাপ্তি, ২০২৩ সালে সেরা নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ১০ম স্থান আইডিয়া বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে আমার উদ্যোগের বড় অর্জন।

আমার প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো দেশের ঐতিহ্যবাহী দেশীয় পণ্য দেশ বিদেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে একটি ব্র‍্যান্ড হিসেবে পরিচিত হবে সবার কাছে সেই স্বপ্ন দেখি।

আগামী ৫ বছর পর নিজেকে ইনশাআল্লাহ অনেক বড় উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই। অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়াতে চাই।

একজন উদ্যোক্তার স্বপ্ন পূরণের জন্য EDF হতে পারে চমৎকার একটি মাধ্যম। EDF সবসময় নারী উদ্যোক্তাদের কিভাবে উন্নয়ন করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে সেই প্রচেষ্টাই করছে। EDF থেকে নিজের প্রচার, প্রসার এবং পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। উদ্যোক্তা জার্নাল ও EDF কে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।

উদ্যোক্তা জার্নাল/মাসুদুজ্জামান রাসেল

আমার প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ অর্জন কাস্টমারের সন্তুষ্টি : রওনক জাহান

Previous article

বাচ্চাদের থেকে আগ্রহ পেয়ে উদ্যোগ শুরু করেন সিনথিয়া রূম্পা

Next article

You may also like

1 Comment

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *