উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

নাচের পাশাপাশি নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরী কর‍তে চান বনানী এস চৌধুরী

2
Cherry Blossom Watercolor Facebook Cover 13

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন বনানী এস চৌধুরী। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আমি বনানী এস চৌধুরী। সিলেটে জন্ম ও সেখানেই বেড়ে ওঠা। আমি একজন নৃত্যশিল্পী। ৬ বছর বয়স থেকেই আমার নাচের প্রতি একটা ভালোবাসা কাজ করে, সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমি আমার নাচকে নেশা হিসেবেই নিয়েছি। এর পাশাপাশি ১৩ বছর চাকরি করার পর যখন সন্তানের কথা চিন্তা করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকি, তখন অনেকটা সময় জীবন থেকে চলে গেছে। প্রায় ৭ বছর পর আমার সহযোদ্ধা বিপ্লব করের অনুপ্রেরণা, উৎসাহ ও সহযোগিতায় আজ আমি উদ্যোক্তা। জামদানি নিয়ে আমার পথ চলা শুরু। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম “বঙ্গজ”/bangaj.com

জামদানি ইনোভেশন, জামদানি শার্ট যা জামদানির ইতিহাসে “বঙ্গজ” প্রথম করে। প্রথম বলার কারণ হলো এতোদিন আমরা দেখে আসছি জামদানি শাড়ি বা কাপড় কেটে শার্ট, ফতুয়া তৈরি করতে যা ট্রান্সফর্মেশন। আর আমি ও বঙ্গজের ডিজাইনার বিপ্লব করের নিজস্ব ভাবনা ও ডিজাইনে জামদানির শার্ট ও ফতুয়া তৈরি করেছি, যা বাসায় খুব সহজে নরমাল ওয়াশ করে নিতে পারবেন। আগে যে শার্টগুলো তৈরি হতো তা ধোয়া যেতো না এবং কয়েকদিন ড্রাই ওয়াশ করার ফলে সুতা নষ্ট হয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যেতো। আমি সেই সমস্যার সমাধান বের করে জামদানিতে শার্ট তৈরি করেছি।

“বঙ্গজ” স্পেশাল জামদানি থ্রি পিস জামদানি শার্টের মতো এটিও আমার প্রথম ইনোভেশন, যা আগে কেউ করেননি। “বঙ্গজ” স্পেশাল জামদানি থ্রি পিস বানানোর আইডিয়া মাথায় আসলো কারণ জামদানি থ্রি পিস সবসময়ই দেখে আসছি ড্রেসের গলায় কাজ, নিচের অংশে সামান্য পাড় দেয়া থাকে। যারা বড় ওড়না পরেন বা হিজাব পরেন তারা অনেকেই এক সাইডে ওড়না পরেন না, তাই জামদানি থ্রি পিসের দিকে আকর্ষণ কম থাকে। কিন্তু কাপড়ের কোয়ালিটি, ধোয়া এবং পরতে এতোটাই আরামদায়ক, যে একবার ব্যবহার করবেন সে বারবারই পরতে চাইবেন। সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে আমরা বঙ্গজে নতুন কিছু করার প্ল্যান করি।

এই ড্রেস বানানোর পরই মাথায় আসে এতো সুন্দর জামার সাথে যদি ম্যাচিং জামদানি হিজাব থাকে তাহলে পুরো গর্জিয়াস একটা লুক আসবে হিজাব প্রেমীদের।

বঙ্গজের বিশেষত্ব হলো –

💥 বঙ্গজ- বঙ্গে জন্মেছে যে, এখানে দেশীয় কাপড় ছাড়া বিদেশি কোনো পণ্য পাওয়া যাবে না।

💥 ডিজাইন এবং কালার কাস্টমাইজ করার সুবিধা

💥 কোয়ালিটি ঠিক রেখে সাধ্যের মধ্যে জামদানিকে নিয়ে আসা

Grey Brown Simple Photo Collage 7
২০২০ সালের করোনাকালীন সময়ে নিজের হাত খরচের জমানো ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বঙ্গজের যাত্রা শুরু করি ১২ জুলাই। উদ্যোগ শুরুর ৪ মাসের মাথায় ৪ লাখ টাকার জামদানি সেল করি। সেই নিউজ “আমাদের সময়” পত্রিকায় বের হবার পর “গ্রামীণ ফোন” কোম্পানি আমাকে নিয়ে OVC তৈরি করে, যার নাম ছিলো “আমরা চাইলে কী না সম্ভব”।

তারপর গত ঈদে বঙ্গজের জামদানি শার্ট এর ক্রেতা ছিলেন নায়ক রিয়াজ। আমি আমার “বঙ্গজ” কে একনামে সবার কাছে পরিচিত করে তুলে ধরতে চাই। নাচের পাশাপাশি আমি নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে চাই।

সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাইনি। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে সিলেট হাইটেক পার্কের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে “বঙ্গজ” সিলেট হাইটেক এ একটি স্পেস বরাদ্দ পেয়েছে এবং জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডকে র‌্যাম্প আপ করার জন্য এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে SDG গুলিকে এগিয়ে নিতে জলবায়ু অর্থায়ন এবং বিনিয়োগের প্রবাহকে অনুঘটক করা বিষয়ক আসন্ন গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যা COP27-এর মিশরীয় প্রেসিডেন্সি, জলবায়ুর জন্য জাতিসংঘের উচ্চ স্তরের চ্যাম্পিয়নদের দ্বারা সহ-সংগঠিত। গোলটেবিলটি আগামী ২৫ আগস্ট ২০২২ তারিখে ব্যাংককের জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে (UNCC) অনুষ্ঠিত হবে। এটি আমার উদ্যোগের ২ বছরের মাঝে সবথেকে বড় অর্জন।

আরও পড়ুনঃ নিজস্ব গার্মেন্টস কারখানা করতে চান উদ্যোক্তা সৈয়দ মোঃ হোসাইন

বঙ্গজে এ পর্যন্ত সেল হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকার উপর এবং প্রতিটি ক্রেতা পণ্যের গুনগত মান ঠিক থাকায় আবার রিপিট ক্রেতা হোন খুব তাড়াতাড়ি দেশে ও প্রবাসে।

আগামী ৫ বছরের মধ্যে জামদানিতে নিজস্ব স্বকীয়তা ঠিক রেখে আরো নতুন নতুন ইনোভেশন করা ও দেশের ৬৪ জেলাসহ বাইরের ১০ টি দেশে বঙ্গজকে সুন্দরভাবে পৌঁছে দিয়েছি এবং আগামীতে বিশ্বের দরবারে দেখতে চাই। “বঙ্গজ” ও দেশীয় পণ্যের মাধ্যমে দেশকে আরো এগিয়ে নিতে চাই। প্রবল ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম আর দৃঢ় মনোবল স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে আমি মনে করি।

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

Previous article

বিডা-আইএলও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

Next article

You may also like