উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

নারীদের সচেতনতায় অনলাইনে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কনিকা হোসেন’র 

0
k5

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌’উদ্যোক্তার গল্প’-র এ পর্বে কথা হলো অনলাইনে ব্যতিক্রমী পণ্য নিয়ে কাজ করা কনিকা হোসেন’র সঙ্গে। তিনি জানালেন তার উদ্যোগের পেছনের গল্প।

আমি কনিকা হোসেন। জন্ম ঢাকার মিরপুরে। স্কুল জীবন কেটেছে মিরপুরে। বাবা সরকারি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত হবার পরে চলে যেতে হয়েছে গাজীপুরে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কেটেছে গাজীপুরে। ছোট বেলা থেকেই নিজেকে সাবলম্বী রূপে দেখার ইচ্ছে ছিল। আর সেই ইচ্ছে থেকেই মাধ্যমিক পড়াকালীন সময় চাকরিতে জয়েন করি।

বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি এনজিওতে রিসার্চ অফিসার পদে দীর্ঘ ৯ বছর চাকরি করি। পাশাপাশি প্রি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতাও করি। চাকরিরত অবস্থায় বিয়ের প্রস্তাব আসে। পরবর্তীতে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়।দীর্ঘ ৯ বছরের ক্যারিয়ারকে বিদায় জানিয়ে আদর্শ গৃহিণী হওয়ার চেষ্টায় নেমে পরি।

তারপর দীর্ঘ ৮ বছর আর কিছু করা হয়নি। তবে মনের মধ্যে কিছু করার বাসনা ঠিকই ছিল সবসময়। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যদি বলা হয় কিভাবে উৎসাহ পেয়েছেন। আমি বলবো আমার জীবনের খারাপ সময় গুলো, খারাপ সম্পর্ক গুলো আমাকে উৎসাহিত করেছে নতুন রূপে নিজেকে আবিষ্কার করতে। যারা আমাকে কথায় কথায় নিচু করে কথা বলতো আমি জানিনা, পারিনা, আমি কি বুঝি, আমার চেয়ে অন্যরা বেশি ভালো জানেন, ভালো বোঝেন এমনকি আমার যোগ্যতা নিয়ে যাদের হাজারো নেগেটিভ কথা তারাই আমার আজকের কাজের উৎসাহ হিসেবে কাজ করছেন।

তবে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা পেয়েছি আমার বাবা, মা, ভাই বোনদের কাছ থেকে। এছাড়া আমার বর, আমার দাদা ও বন্ধুবান্ধব সবার কাছ থেকে প্রচুর অনুপ্রেরণা পেয়েছি এবং এখনো পাচ্ছি। মানুষের উপকারে আসে এমন কিছু নিয়েই চিন্তা করে কাজে নামি।

k3

আমি আমার উদ্যোগটা শুরু করেছিলাম নারীদের উপকার হয় এবং আমার তরফ থেকে যেন সবাই একটা সোশ্যাল মেসেজ পায় এটা চিন্তা করে। শুরু করি স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কাজ। পরবর্তীতে পেইন রিলিজ বাম, হোমমেইড হেয়ার ওয়েল ও ফুড আইটেম নিয়ে কাজ শুরু করি।

আমি যেহেতু একটা নিষিদ্ধ বা টেবু টাইপের জিনিস নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম তাই শুরু টা আমার একটু কষ্টেই গিয়েছে। এখনো মানুষ এতোটা আধুনিক হয়নি যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বা নারীদের রোগ প্রতিরোধ এসব নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে পারে। আমি যেহেতু অনলাইনে কাজটা শুরু করেছিলাম তাই কিছু কথার সম্মুখীন আমাকে বহুবার হতে হয়েছে। আমি যখন চিন্তা করি আমি একজন উদ্যোক্তা হবো তখন খুব সীমিত  মূলধন নিয়ে কাজে নেমে পরি।

একজন উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য্য, পরিশ্রম, পরিকল্পনা ও প্রচুর ইচ্ছে শক্তি থাকতে হবে। আমার উদ্যোগের সব কাজ আমি নিজ হাতে সম্পূর্ণ করি। কারণ ক্রেতা সন্তুষ্টি একজন উদ্যোক্তার মূল লক্ষ্য। যেহেতু আমি ফুড আইটেম নিয়ে কাজ করি তাই আমি নিজে তৈরি করে ক্রেতার হাতে পৌঁছাই। সংসার ও সন্তানকে ঠিক রেখে যেহেতু আমাকে কাজ করতে হবে। তাই আমার মনে হয়েছে আমার জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে ঘরে বসে কিছু করে নিজেকে পুনরায়  সাবলম্বী করে তোলা। সেখান থেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা। বর্তমানে অনলাইনে উদ্যোক্তা প্রচুর।

k2

নারীদের জন্য আমার মনে হয় সব চেয়ে নিরাপদ ও সম্মানের একটি কাজ হলো উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করা। প্রতিটি কাজেই প্রতিবন্ধকতা থাকে। আমরা যারা ফুড আইটেম নিয়ে কাজ করছি তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো ফুড ডেলিভারি দেওয়া।

এজন্য মাঝে মাঝেই বিপাকে পড়তে হয়। এখন পর্যন্ত যারা আমার উদ্যোগের সেবা গ্রহন করেছেন তারা সবাই অনেক অনেক সন্তুষ্ট হয়েছেন। বেশির ভাগই আমার রিপিট কাস্টমার হয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। এখনও আমি কোন সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা নেইনি।

আমার উদ্যোগ নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনেক বড়। নিজেকে আমি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই। চাই নিজের নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে, যেখানে অসহায় নারীদের নিয়ে আমি কাজ করতে পারবো। তাদের সাথে থাকতে পারবো।

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর হবে ডিএনসিসি

Previous article

বাংলাদেশের কালজয়ী চলচ্চিত্রগুলো স্বাধীন দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছে: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *