উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থা এখন অনেক ভালো : রত্না

1
cvr 2 1

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা রত্নার সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

আমি রত্না। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার মিরপুরে তবে দাদা বাড়ি চাঁদপুর।

নিজের জীবনের প্রয়োজনে চাকরি জীবনে প্রবেশ ২০০৯ সাল থেকে তবে চাকরি কতোদিন করবো বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জবের নিশ্চিয়তা নেই এমন চিন্তা থেকে কিছু একটা করার ইচ্ছে হয়। তখন আমাকে মানসিক সাপোর্ট এর জন্য আমার ক্লোজ কিছু বন্ধুরাই উৎসাহিত করে। তারা আমাকে বিভিন্নভাবে সাপোর্ট করে- পেজ ওপেন, প্রোডাক্ট সোর্সিং, পেজ চালানো, লাইভে কথা বলার সাহস যোগানো সবকিছুতে তারা পাশে ছিলো।

আমার প্রতিষ্ঠানের নাম Montaka-মুনতাকা। শাড়ি দিয়ে শুরু করলেও আমার পেজে এখন কামিজ, কুর্তি, থ্রিপিস, শাড়ি, পান্জাবী এবং কসমেটিকস নিয়ে কাজ চলছে।

শুরুটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিলো, কারণ ২০১৭ সালে অনলাইন বিজনেজ জনপ্রিয় তো ছিলোই না বরং অনলাইনে এতো বেশি ফ্রট ব্যবসায়ী ছিলো যে মানুষ কে বিশ্বাস করানো অনেক বেশি কষ্টসাধ্য ছিলো। আর মুলধন বলতে একটা ছোট্ট ডিপিএস ভেঙে মাএ ৩৫,০০০ টাকা দিয়ে শুরু করি।

একজন উদ্যোক্তা হতে প্রয়োজন রিস্ক নেয়ার সাহসিকতা। আর অবশ্যই প্রোপার ট্রেনিং। আর প্রোপার প্ল্যানিং।ftre 2 1বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে আমরা ২ জন কাজ করছি। আমি ও আমার মেয়ে।

চাকরি করা খারাপ কিছু না। অবশ্য চাকরি করলে আপনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন এবং সেই অভিজ্ঞতা হবে বাস্তবমুখী। যে ব্যক্তি চাকরির পাশাপাশি বিজনেজ করে বা চাকরি শেষে ব্যবসা করে তার ব্যবসার ফলাফল দ্রুত ভালো হয়। তবে চাকরি সারাজীবন না করার প্ল্যান থাকাই ভালো। নিজের জ্ঞান, অর্থ, উদ্যোমী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ব্যবসায় আসলে নিজের একটি আলাদা পরিচয় গড়া যায়।

আমার প্রতিষ্ঠান খুব আস্তে আস্তে প্রসার করি, আস্তে আস্তে প্রোডাক্টের ভেরিয়েশন আনি। তবে আমি চেষ্টা করি ১০০% অথেনটিক প্রোডাক্ট দেয়ার জন্য। এমনকি যদি কেউ কোনো রকম অবজেকশন দেয় আমি সেই প্রোডাক্ট রিটার্ন আনার ব্যবস্থা করি। আমার কাছে ক্রেতা সন্তুষ্টি সবার আগে।

আগে মেয়েদের উদ্যোক্তা হওয়া বিষয়টি ছিলো খুব হাস্যকর ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার একটি বিষয়। কিন্তু বর্তমানে অনেক ভালো পরিবারের মেয়েরা এই উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস করেছেন এবং সফল হয়েছেন। এখন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থা অনেক ভালো।

অনেক অনেক বাজে অভিজ্ঞতার মধ্যে পরেছি। একসময় আমি ঢাকার মধ্যে ডেলিভারি দেয়ার জন্য বিশেষ করে কাছাকাছি এলাকার হলে অনেকেই আমার বাসার কাছে এসে প্রোডাক্ট নিয়ে যেতো। এমনও হয়েছে কাস্টমার সেজে বাসার কাছে এসে আজেবাজে কথা বার্তা বলেছে এবং পরে জেনেছি তাদের কেউ পাঠিয়েছে কাস্টমার সাজিয়ে। আবার অনেক ফেক আইডি থেকে অর্ডার কনফার্ম করে ডেলিভারি ম্যান গেলে ফোন বন্ধ করে রাখে।

আরও পড়ুনঃ চীন থেকে নারীদের ইমপোর্টেড পণ্য নিয়ে কাজ করছেন জিনিয়া

সেল আলহামদুলিল্লাহ, আমি যতোটুকু সময় দিচ্ছি জবের পাশাপাশি সেই তুলনায় ভালো। আর কাস্টমার সন্তুষ্ট আছে বলেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মতো ওপেন প্লেসে ৬ বছর ধরে বিজনেস চালিয়ে যেতে পারছি।

আসলে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমার মতো ছোট্ট উদ্যোক্তাদের জন্য না। তারা তেল মাথায় তেল দেয়। আমি এখনো নিজের সেলারির একটা অংশ বিজনেসে ইনভেস্ট করে বিজনেস কে বড় করছি।

আমার প্রতিষ্ঠানে কোনো নকল বা রেপলিকা প্রোডাক্ট সেল করি না। কোনো অনলাইন ডাউনলোড ছবি দেখিয়ে রেপলিকা প্রোডাক্ট দেই না। আমার বেশিরভাগ প্রোডাক্ট আমার নিজের মডেল হওয়া। তাই মানুষ এটা অন্তত বুঝে, যে প্রোডাক্ট টা দেখছে ছবি তে তাই সে হাতে পাবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটি শোরুম দেয়া। ২০৩০ সালের মধ্যে একটি শোরুম দিবো। পাশাপাশি পোশাক, কসমেটিকস এর একটি অথেনটিক শপ হিসেবে সবার কাছে মুনতাকা একটি ব্র্যান্ড তৈরি করা।

উদ্যোক্তা জার্নাল/মাসুদুজ্জামান রাসেল

চীন থেকে নারীদের ইমপোর্টেড পণ্য নিয়ে কাজ করছেন জিনিয়া

Previous article

সিদল আমার সিগনেচার পণ্য : আফরিন হোসেন সেঁজুতী

Next article

You may also like

1 Comment

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *