উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

নিজের একটা পেস্ট্রি শপের স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা উম্মে হানি

1
hanny

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা উম্মে হানির সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

আমি উম্মে হানি। ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় জন্ম, এখানেই বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা।

আমার বাবা ব্যবসায়ী ছিলেন, তাই ছোট থেকেই আমারও নিজের কিছু করার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু নিজে এমন উদ্যোগ নিবো কখনো ভাবিনি। আমি চাকরিকে প্রাধান্য দিতাম না, কারণ আমার মনে হতো সেখানে নিজের স্বাধীনতা নেই। তাই নিজের কিছু হবে যেটা একান্ত নিজেকে প্রকাশ করতে পারবো, সেই আলোকে নিজেই উদ্যোগ গ্রহণ করি।

সত্যি বলতে নিজের একটি আলাদা পরিচয় ও নাম চেয়েছি, যা এখন একটু হলেও সম্ভব হয়েছে। প্রথমত বিভিন্ন ধরনের রান্নার প্রতি অনেক ঝোঁক ছিলো কিন্তু বেকিং টা কেনো জানি আয়ত্তে আসছিলো না, তাই একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেকিং কে শুধুমাত্র ফোকাস করে প্রতিনিয়ত শিখে চলেছি এবং এটাকে প্রফেশন হিসেবে নিয়েছি।

প্রথম দিকে পরিবার থেকে কোনো ধরনের সাপোর্ট পায়নি, কারন কেউ চায়নি আমি এই কাজ করি। কিন্তু নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রমান করেছি, তারপর আসলেই কাজটা স্থিরভাবে করতে পারছি, আলহামদুলিল্লাহ।

আমার উদ্যোগ মূলত হোম মেইড কেক নিয়ে, এবং বিশেষত্ব হচ্ছে থিম বেইজড কেক যা আমার কাজকে আলাদা করে প্রকাশ করে। আমার উদ্যোগের নাম “The Desserts Queen” (দ্য ডেজার্টস কুইন)। আমি সাধারণত কেকের উপর পুরো স্টোরিকে তুলে ধরার চেষ্টা করি এবং হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকি।

শুরুটা বেশ কষ্টের ছিলো, পরিবারের সাপোর্ট ছিলো না। তাদের বুঝাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তারা কোনোভাবেই আমার এই কাজকে মেনে নিতে চায়নি, তাদের আত্মসম্মান এর কথা ভেবে। এটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিলো। এছাড়া তেমন কোনো সমস্যা বা বাঁধার সম্মুখীন হয়নি। মূলধন বলতে যেহেতু আমি শখের বশে বেকিং করতাম মোটামুটি অনেক কিছু ছিলো, তাই আলাদা তেমন কিছু প্রয়োজন পড়েনি।

কিন্তু প্রাথমিকভাবে ডেলিভারি সম্পন্ন করবার জন্য ইনভেস্ট করেছিলাম ৫,২০০ টাকা এবং পরবর্তীতে ৩০,০০০ টাকা এটাই বলতে গেলে ইনভেস্টমেন্ট। এছাড়া বড় ধরনের কোনো ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন পরেনি। তবুও এটা আমি আমার উদ্যোগের অর্থেই বহন করেছি এবং প্রতিমাসে নির্দিষ্ট একটা এমাউন্টের কাঁচামাল লাগে, যেটা আমি আমার উদ্যোগের উপর্জিত অর্থেই সেরে ফেলি, আলহামদুলিল্লাহ।

আমার মতে একজন উদ্যোক্তা হতে সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হলো দৃঢ় মনোবল, সুস্থ মানসিকতা, নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ। নিজেকে দক্ষ করে তুলতে যেকোনো চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষমতা ও সর্বোপরি পরিশ্রম করার মানসিকতা।

rfgefl

আমার উদ্যোগ যেহেতু এখনো অনেক ছোট এবং আমি সংসার, পরিবার সামলে নিজেই কাজের চাপ সামলে ডেলিভারি সম্পন্ন করতে পারি তাই এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের কর্মী বা সাহায্যকারীর প্রয়োজন পড়েনি। ঐ যে প্রথম থেকেই বললাম, আমার পরিবারে তেমন কেউ চাকরি করেনি, তাই আমিও এদিকে মনোনিবেশ করিনি। প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিলো নিজের একটা কিছু হবে এবং আমি আমার উদ্যোগের মাধ্যমে সেটি করতে সক্ষম হয়েছি।

আমি মনে করি আমার প্রতিষ্ঠান এখনো সেভাবে ছড়াইনি বা সুপরিচিত নয়। কিন্তু আমার উদ্যোগের হোম মেইড কেক এখন পর্যন্ত অনেক বড় বড় অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হয়েছে। আমার কাস্টমার বেইজ অনেক এবং বেশিরভাগ রিপিট, যেটা আমার অনেক বড় অর্জন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১,৬০০ এর অধিক কেক করার সুযোগ হয়েছে। যেটা আমার জন্য অনেক আনন্দের ও সম্মানের।

আমাদের দেশে সত্যি বলতে চাকরি কিংবা উদ্যোক্তা নারীদের জন্য কোনোটাই তেমন অনুকূলে নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাঁধা ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেহেতু উদ্যোগ মোটামুটি ঘরে থেকেই সম্পন্ন করা যায় তাই এটা নিরাপদ সাথে ঘর, পরিবার সামলে ও তাদেরকে সময় দিয়ে উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। তাই নিজেকে পরিচিত ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে নিজের দক্ষতা অনুযায়ী উদ্যোগ নেয়া খুবই প্রয়োজন।

প্রতিবন্ধকতা বলতে খাবার বিক্রি করি, এই যে হেয় করা বা একটু বাঁকা চোখে দেখা এটাই মূলত প্রতিবন্ধকতা। এছাড়া তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা এখন পর্যন্ত মোকাবিলা করিনি।

আরও পড়ুনঃ প্রতিবন্ধকতা জয় করে ক্যাটারিং ব্যবসায় নিশাত সুলতানা

আমার প্রতিমাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার উপরে সেল হয়। কিছু সময় কমবেশি হয়। প্রায় প্রতিদিন কাজ করার সুযোগ থাকে। আমার ক্রেতার মাঝে প্রায় ৯৫ ভাগই আমার সেবায় সন্তুষ্ট ও রিপিট আলহামদুলিল্লাহ।

এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো ধরনের সহায়তা পায়নি, তবে অদূর ভবিষ্যতে এমন সহায়তা পেলে অবশ্যই সেই সুযোগ গ্রহণ করবো ইনশাআল্লাহ।

আমার অর্জন হলো মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছি, এবং রিসেন্টলি একটা ওয়েভের মধ্যে আমি মোট ১০০+ অর্ডার পেয়েছি এবং ১ লক্ষ টাকার সেল করেছি মাত্র দুই দিনে, এটা আমার জন্য নিঃসন্দেহে অনেক বড় প্রাপ্তি ও সম্মানের।

আমার অদূর ভবিষ্যতে একটি ছোট পরিসরে পেস্ট্রি শপ খোলার ইচ্ছে আছে। সেখানে কিছু লোকের কাজের সুযোগ হবে যেটা আমার জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের হবে। আমার বেকিং ক্লাস এরেঞ্জ করার ইচ্ছে আছে যেখানে বিনামূল্যে মেধাবী ও বেকিং লাইনে পরিশ্রমী লোকরাও সুযোগ পাবেন, যাতে তারা এই কাজের মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছলতা পায়। জানি পথটা বেশ কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ, তবুও হাঁটতে চাই বহুদূর। নিজের কাজের মাধ্যমেই পরিচিত হতে চাই, কাজের মধ্য দিয়েই বাঁচতে চাই।

প্রতিবন্ধকতা জয় করে ক্যাটারিং ব্যবসায় নিশাত সুলতানা

Previous article

শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মেসির আর্জেন্টিনা

Next article

You may also like

1 Comment

  1. নিজে একজন উদ্যোক্তা। তাই উদ্যোক্তাদের গল্পগুলো পড়তে ভালোই লাগে।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *