উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

নিজের মতো অন্য নারীদেরও সাবলম্বী করতে চান আয়শা সিদ্দিকী

0
Untitled design 4

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন আয়শা সিদ্দিকী। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আমি আয়শা সিদ্দিকী। আমার জন্ম কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থানার বেড়কালোয়া গ্রামে। ছোট থেকে বড় হয়েছি সেখানেই। সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করি। সৈয়দ মাসুদ রুমি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি সম্পন্ন করি।

আমার উদ্যোগের নাম “আমাতুর ফ্যাশন”। আমার কাজে উৎসাহিত করার পেছনে ছেলে ও মেয়ের অনুপ্রেরণা ছিলো। মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক ও বেডশিট আইটেম নিয়ে কাজ করছি, এছাড়া আমি একজন দর্জি।

শুরুটা ছিলো ২০২০ সালের শেষের দিকে। অফলাইনে ১০ বছর ধরে দর্জির কাজ করছি, তবে ‘উই’তে জয়েন করার পর অনলাইন এর প্রতি আগ্রহ জন্মায়। সে থেকে অল্প অল্প করে বিভিন্ন ধরনের পোশাক নিয়ে কাজ করি। অনলাইন পেজ খুলি, কিন্তু তেমন কিছু বুঝতাম না। এরপর ২০২১ এ কাস্টমাইজড ড্রেস নিয়ে কাজ শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো রেসপন্স পাই৷

তবে শেখার অনেক কিছু বাকি ছিলো। Women and e-Commerce Trust (WE) গ্রুপে সেখানে সবার জীবন পরিবর্তনের গল্প দেখে, নিজের উদ্যোগ কে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আরো প্রবল হয়। এই গ্রুপ থেকে বিভিন্ন ধরনের মাস্টার ক্লাস ও ট্রেনিং এর মাধ্যমে অনেক কিছু শিখেছি, যা আমার উদ্যোগ কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক ভূমিকা রেখেছে। তাছাড়া করোনাকালীন সময় আমার স্বামীর ব্যবসায় লস হয়। পরিবারের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়, তখন ভাবলাম আমি যা পারি তা দিয়েই শুরু করি। তাহলে পরিবারের কিছুটা হলেও সাহায্য হবে। আমার উদ্যোগের শুরু হয় ১২,০০০ টাকা দিয়ে।

একজন সফল উদ্যোক্তার বাস্তব জীবনের অনেক কিছুই কাগজে কলমের যুক্তিতে মিলে না। কাগজ-কলম এর হিসাব অনেক সময় আমাদের ভুল নির্দেশনা দেয়। এই হিসাবগুলো যদি আমাদের কল্পনার সাথে মিলে যায় তাহলে আমাদের মনে হয় এটাই বুঝি একমাত্র সমাধান। কিন্তু আসলে তা নয়।

সাফল্যের আরো অনেক রাস্তা রয়েছে। সেই রাস্তাগুলো খুঁজে পেতে হয় নিজের বিচার-বিবেচনা দ্বারা। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন। যদি আপনি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনার বিবেক আপনাকে ভুল নির্দেশনা দিবে না। নিজেকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস না করলে আপনার সিদ্ধান্তগুলো যথার্থ হবে না।আমার ছোট বিজনেস, তবে একজন কর্মী আছে আমার সার্বিক সহযোগিতার কাজে।

সরকারি চাকরি ছাড়া দেশে আর কোনো চাকরির নিশ্চয়তা নেই বলে আমি মনে করি। তাছাড়া একজন উদ্যোক্তা তার উদ্যোগ সামলানোর পাশাপাশি ঘরে বসে সন্তানদের খেয়াল রাখতে পারে। আমার ৩ জন সন্তান রয়েছে। আমি সবসময় চেয়েছি বাসায় বসে নিজে কিছু করতে, এতে দুই দিকই ব্যালেন্স হবে।

আমি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এখানে মেয়েদের সবধরনের পোশাক আইটেম এর সার্ভিস দিয়ে থাকি। সবসময় ভালো প্রোডাক্ট দিয়ে থাকি৷ আমাদের প্রোডাক্টে আজ অব্ধি কোনো অভিযোগ আসেনি আলহামদুলিল্লাহ। কাস্টমারদের সাথে আমাদের রিলেশন ভালো এবং আমরা নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি দিয়ে থাকি। আমাদের প্রতিটি কাস্টমার আমাদের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবে কাজ করে, এটা অনেক বড় পাওয়া আমাদের জন্য।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক দিক থেকে বর্তমানে একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

সব কাজে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের কোনো কাজে পরিবার থেকে সাপোর্ট দেয় না, আর যদিও দেয় সেই উদাহরন খুব অল্প। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে প্রতিবন্ধকতা অনেক আসে। তবে যতো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হোক না কেনো, আমি পিছিয়ে আসবো না।

আমার মাসিক আয় আলহামদুলিল্লাহ ভালো এবং আমাদের সার্ভিস নিয়েও কাস্টমার সন্তুষ্ট। আমরা সবসময় কোয়ালিটি বজায় রেখে কাজ করার চেষ্টায় আছি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও তাই করবো। সরকারি-বেসরকারি কোনো সুবিধা এখনো পাইনি। তবে এরকম কোনো সুযোগ আসলে, ভবিষ্যতে তার উত্তম ব্যবহার করবো ইনশাআল্লাহ।

প্রতিষ্ঠানের অর্জনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাস্টমার সন্তুষ্টি। আপনার ক্রেতা কি পছন্দ করে এবং কি অপছন্দ করে এটা শুধু জরিপ বা সার্ভের মাধ্যমেই বের করে আনা সম্ভব। “ক্রেতা সন্তুষ্টি জরিপ” বলে দিবে আপনার কোম্পানি সঠিক পথে আছে কিনা এবং আপনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা! তাছাড়া এটা আপনার “কাস্টমার সার্ভিস” প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি আছে কিনা তা জানতে সাহায্য করবে।

৫ বছর পর নিজের পাশাপাশি আরো নারীদের সাবলম্বী করতে চাই। একটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাই, যাতে সবাই একনামে চিনতে পারে। এছাড়া স্বপ্ন দেখি নিজস্ব শো-রুম থাকবে, আমার পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও দাপিয়ে বেড়াবে। নারীদের কর্মসংস্থান তৈরী করতে চাই।

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো বাংলাদেশি যুবকের

Previous article

ভেজালমুক্ত পণ্য ক্রেতার দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর মারজিয়া সুলতানা

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *