উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা নিজ দক্ষতায় উদ্যোগ শুরু করা কনিকা আজ সফল উদ্যোক্তা By নিজস্ব প্রতিবেদক November 15, 20222 ShareTweet 2 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন কনিকা ভট্টাচার্য। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প। আমি কনিকা ভট্টাচার্য। নরসিংদী জেলার মনোহরদীতে জন্ম। আমার ছেলেবেলা কেটেছে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে, মায়ের সাথে ঘরের কাজে সাহায্য করতাম, আর পড়াশোনার পাশাপাশি নানান ধরনের সেলাই করে নকশা করতে পছন্দ করতাম। হাতের কাজের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষন ছিলো আমার। পাড়ার অন্যান্য মেয়েরা কোনো ডিজাইন করলে সাথে সাথে সেটা রপ্ত করার চেষ্টা করতাম। আমি বিবিএ শেষ করে চাকরি করতাম একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে। তারপর এমবিএ’র পড়াশোনা, সংসার-সন্তান, চাকরি সব মিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলাম। সময়ের সাথে পেরে উঠেছিলাম না, তাই বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দেই। তার কিছুদিন পর আমার দ্বিতীয় সন্তান আসে পৃথিবীতে। তখন আরো বেশি কষ্টকর হয়ে যায় নতুন করে চাকরি শুরু করা। চাকরিতে যে সময়টা দেবার প্রয়োজন সেই সময়টা ছোট বাচ্চাদের সামলে দেয়া কষ্টকর হবে ভেবে দিন পার করি। কিন্তু কিছু না করতে পারার যে দুঃখ তা আমাকে তাড়া করে বেড়াতো। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম কিছু একটা করতে হবে। সেই কিছু একটা কি খুঁজে বেড়াতাম। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম যাতে আমার দক্ষতা আছে তা নিয়ে কাজ করবো, আর তখনই অনলাইন ব্যবসার চিন্তা করি এবং কাজ শুরু করি। আমার উদ্যোগের নাম “Trinoyoni : ত্রিনয়নী”। ২০১৯ সাল থেকে ত্রিনয়নী পেইজ এর যাত্রা শুরু। হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি, ব্লক প্রিন্ট শাড়ি, হ্যান্ড মেড জুয়েলারি, বেডশীট, পর্দা, ইত্যাদি দেশী প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করি। শুরুটা ছিলো একদম ঘরে থাকা একটা নতুন জামদানি শাড়ি থেকে। একটা হালকা কাজের জামদানি শাড়ি নিজের জন্য কিনেছিলাম, সেটা দিয়েই পেইজ খুলে কাজ শুরু করি। পরিচিতজন এবং বন্ধু-বান্ধব থেকে মোটামুটি ভালো সাড়া পাই। অনেকেই বলছিলেন ‘তুমি পারবে’। এই কথাটা খুব সাহস যুগিয়েছিলো। আর খুব বেশি মূলধন নিয়ে কাজ শুরু করিনি, পণ্য বিক্রি করে সেই টাকাটা দিয়ে আবার পণ্য কিনছি। এভাবেই কাজ করেছি। মূলধন প্রায় ৫,০০০ টাকা ছিলো। আমার কাছে মনে হয় একজন উদ্যোক্তা হতে দরকার দৃঢ় মনোবল, ঝুঁকি নেয়ার সাহস, ধৈর্য এবং সহনশীলতা। আমাদের নানা শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে কাজ করতে হয়, একজন নারী উদ্যোক্তার জন্য ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জিং। ধৈর্য, সহনশীলতা, বিচারবুদ্ধিতা দিয়ে কাজ করতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে এবং নিজের কাজের ডিজাইনকে উন্নত করতে হবে। আমার প্রতিষ্ঠানে আমিসহ ৩ জন নিয়মিত কর্মী রয়েছেন। প্রথমত, আমি একজন মা। সন্তান ও সংসারের পাশাপাশি নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে চেয়েছি। তাই এই পেশাকে বেছে নিয়েছি। এছাড়াও এই পেশার মাধ্যমে আমি আমার সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারি। আমার প্রতিষ্ঠানে কাস্টমাইজড কাজকে প্রাধান্য দেয়া হয় বেশি। ক্রেতার পছন্দ অনুসারে কাজ করে দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এটা অন্যদের থেকে কাজে আমার ভিন্নতা আছে বলে আমি মনে করি এবং ক্রেতা এতে বেশি আকৃষ্ট হয়। এছাড়াও আমি যেহেতু শাড়ি, গয়না, বেডশীট, শাল ইত্যাদি নানান পণ্য নিয়ে কাজ করি তাই ক্রেতা একই পেইজে প্রায় অনেক ধরনের পণ্য পেয়ে থাকে একসাথে, যাতে করে ক্রেতার সময় বাঁচে, ডেলিভারি চার্জ কমে আসে, তাই ক্রেতা বেশি আকৃষ্ট হয়। একটা সময় ছিলো নারীদের সকল কাজে বাধার সম্মুখীন হতে হতো। পরিবার থেকে, সমাজ থেকে নানানভাবে নারীদের বাইরে কাজ করতে নিরুৎসাহিত করা হতো। কিন্তু সময় পাল্টেছে, মানুষের মানসিকতা বদলাচ্ছে। তারপরও অনেক নারীদের এখনো নানান কাজে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তবে তারপরও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট নারী উদ্যোক্তার জন্য উপযোগীই আমার মনে হয়। আমাদের দেশের অনেক মানুষ নারী উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট দিচ্ছে, সরকার নানান পদক্ষেপ নিয়েছেন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য, বিভিন্ন কুরিয়ার কোম্পানি ডোর টু ডোর সার্ভিস দিচ্ছে, যাতে করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করাটাও অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে নারী উদ্যোক্তাদের কাজ করার পথ আরো সহজ হয়ে যাবে। আমি ব্যবসা শুরু করার কিছুদিন পর থেকে করোনা শুরু হয়, তাই সত্যি বলতে ব্যবসার গ্রোথ করোনার মধ্যেই হয়েছে। এই মহামারিতে মানুষের জীবন যখন থমকে গিয়েছিলো, তখন চেষ্টা করেছি ক্রেতার পছন্দের পণ্যটি ঠিক সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার। বেশকিছু বাধার সম্মুখীন হয়েছি তারপরও চেষ্টা করে গিয়েছি। ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রেতার সঙ্গে সমন্বয়কে আমি সবসময়ই ভালো চোখে দেখি। আমি সবসময় চেষ্টা করি ক্রেতার চাহিদা অনুসারে পণ্যের যোগান দিতে। তাই কাস্টমাইজ প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। হয়তো এই জন্যই আমার রিপিট কাষ্টমার বেশি। তাই আমি আমার উদ্যোগে সেল নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। একজন ক্রেতা যখন পন্য ক্রয়ের পর একটা রিভিউ দেয় তখন খুব ভালো লাগে। ক্রেতার ইতিবাচক রিভিউ বেশি পেয়েছি। আরও পড়ুনঃ দেশীয় পণ্যের বিশাল সমারোহ গড়তে চান সিন্ধু সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতার কখনো আবেদন করিনি। তবে বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য সাড়া পেয়েছিলাম। ‘ত্রিনয়নী’র অর্জন বলতে আমি বুঝি একদম স্বল্প পুঁজিতে শুরু করা একটা ক্ষুদ্র উদ্যোগকে এখন দেশ ও দেশের বাইরে অনেক মানুষ চিনতে পারে। যারা নিজেদের খুশির মূহুর্ত, উৎসব এবং আনন্দে ত্রিনয়নীর পোশাক, গয়না পরিধান করে এবং হাস্যোজ্জ্বল মুখে একটা ছবি দেয় সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় অর্জন মনে হয়। তবে ত্রিনয়নীর সিগনেচার প্রোডাক্ট টিপ, নাকফুল এবং হ্যান্ড পেইন্টেড পোশাক। ত্রিনয়নীতে অন্তত ১০০ ধরনের ডিজাইনের হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়ি রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত আমরা নতুন এবং ইউনিক ডিজাইন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রত্যেক উদ্যোক্তার জীবনে কিছু স্বপ্ন থাকে নিজের উদ্যোগকে নিয়ে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমি স্বপ্ন দেখি ‘ত্রিনয়নী’ বাংলাদেশের একটা ভালো মানের ব্র্যান্ড হবে। ত্রিনয়নীর পণ্য দেশের সীমানা পেরিয়েছে বহুবার। এর পরিধি বিস্তৃত হবে, আমাদের দেশীয় পণ্যের আরো একটু বিস্তার ঘটবে ত্রিনয়নীর হাত ধরে। আশা করি, আগামী ৫ বছর পর ত্রিনয়নীর অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইন আউটলেট হবে। যেখানে আমাদের ক্রেতাদের আমরা আরো ভালো পণ্য ও সেবা দিতে পারবো।
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231561 views