উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

পরিবারের সহযোগিতায় এগিয়ে চলছেন সাবরিনা ইয়াসমিন

0
WhatsApp Image 2022 06 25 at 6.54.52 PM 1

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা সাবরিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

আমি সাবরিনা ইয়াছমিন। জন্ম ঢাকার মিরপুরে। পড়ালেখা, বেড়ে উঠা ঢাকায়। কলেজে পড়া অবস্থা থেকেই আমি পার্ট টাইম জব করতাম এক সুপার সপে। নিজের পড়ালেখার খরচ চলতো। যেহেতু মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলাম। সুপার সপে চাকরি করার সময় থেকে আমার উদ্যোক্তা হবার আগ্রহ তৈরী হয়। তখন থেকেই দেশি পণ্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার আর পণ্য নিয়ে জানার চেষ্টা করি।

Women and e-Commerce Trust (WE) এর সাথে যুক্ত হয়ে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্য আর বিলুপ্ত পণ্য নিয়ে জানতে পারি। আমি কাজ করছি খাঁটি পণ্য আর হোমমেইড ফুড নিয়ে। গরুর ঘানি ভাংগা সরিষার তেল, ঢেঁকি ছাটা লাল চাল, লাল আটা, তাল মিছরি, এক্সটা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল, ক্লোণ টি, আস্ত পাতার টি, হোমমেইড ঘী, হোম মেইড দই, ফ্রোজেন ফুড ইত্যাদি নিয়ে। আমার সিগনেচার আইটেম হোমমেইড স্পেশাল দই। আমার পেইজের নাম “শুদ্ধতা”। আমি সবসময় পণ্যের কোয়ালিটি মেইনটেন করে কাস্টমার সার্ভিস দেবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকি।

আমি আমার উদ্যোগ শুরু করি ৭০০ টাকা দিয়ে। ২০১৬ সাল থেকে অনলাইন বিজনেসের সাথে যুক্ত আছি। মাঝে কিছু পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণে কিছুদিন বন্ধ রেখেছিলাম। ২০২০ সালে আবার পারিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য আমি আমার স্বপ্নের উদ্যোগ পুরোদমে শুরু করি। আমার কাজের উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা আমার স্বামী আর ছোট ভাই দিয়েছে।

একজন উদ্যোক্তা কে প্রচন্ড রকমের ধৈর্য্যশীল আর পরিশ্রমী হতে হবে। যে পণ্য নিয়ে কাজ করবে উদ্যোক্তা কে সে বিষয়ের উপরে ভালো ধারণা থাকতে হবে। উদ্যোক্তা হতে হলে কাস্টমারের চাহিদা আর সমস্যা সমাধানের গুণাবলী থাকতে হবে। নেতৃত্ব দেবার গুণাবলী থাকতে হবে। যেকোনো সুযোগ কাজে লাগতে হবে। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে।

আমার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে আমিসহ তিনজন কর্মী আছে। এছাড়াও আমার পরিবারের সকলে আমাকে আমার কাজে সাহায্য করে থাকে। যেটি আমার কাজের গতিকে ত্বরান্বিত করে এবং সামনে এগিয়ে যাবার পথপ্রদর্শক হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

চাকরি করার কথা আমি কখনো চিন্তা করিনি। আমি স্বাধীনভাবে সবসময় কাজ করতে চেয়েছি। বর্তমানে চাকরি পাওয়া সোনার হরিণের মতো। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেকে দক্ষ করা এখন সবথেকে বেশি প্রয়োজন। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি কিছু না কিছু করে নিজেকে সাবলম্বী করার পথে ধাবিত করা উচিত।

আমার প্রতিষ্ঠান সর্বদা সচেষ্ট থাকে পণ্যের কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে, আর কাস্টমার সার্ভিস বেস্ট দেবার। যাতে করে কাস্টমার রিপিট কাস্টমারে পরিনিত হয়। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের রিপিট কাস্টমারগুলো তার প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিংয়ে বড় ভূমিকা রাখে নতুন নতুন কাস্টমার পাওয়ার জন্য।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের যেকোনো কাজ করা এখনো অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। বর্তমানে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে এই চিন্তাধারার। এই সময়ে অনেক নারীরাই ঘরে বসে ই-কমার্স এর বদৌলতে কাজ করতে পারছে। এখন অনেক নারীই পরিবার সামলে নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নারীদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা দেবার ব্যবস্থা করেছে। ‘উই’ এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপু নারীদের ইন্টারন্যাশনাল ক্লাস আর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে স্বল্পমূল্যে। Women and e-Commerce Trust (WE) এ যুক্ত হয়ে অনেক নারী তাদের উদ্যোক্তা জীবনের সূচনা করে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

আমার তেমন একটা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় নি, কারণ আমার পুরো পরিবার আমাকে আমার উদ্যোগের জন্য সাপোর্ট করেছে শুরু থেকেই। তবে শুরুর দিকে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে। আলহামদুলিল্লাহ সেগুলো খুব সুন্দরভাবে অতিক্রম করতে পেরেছি পারিবার আর ‘উই’ এর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। যেকোনো উদ্যোক্তার জন্য পারিবারিক সাপোর্টটা অনেক বড়।

আলহামদুলিল্লাহ আমার সেল সন্তোষজনক। আমি আমার পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহয্য করতে পারছি। আমার রিপিট কাস্টমার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সাথে নতুন কাস্টমারও যুক্ত হচ্ছে। কাস্টমারকে খাঁটি পণ্য দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া ‘শুদ্ধতা’র একমাত্র লক্ষ্য।

সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য এখন পর্যন্ত পাই নাই, তবে আমি আশাবাদী ইনশাআল্লাহ পাবো। আমার প্রতিষ্ঠানের অর্জন কাস্টমারের বিশ্বাস। কাস্টমার সন্তুষ্টি আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমার কস্টমাররাই আমার উদ্যোগের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। এটা আমার জন্য অনেক বড় সৌভাগ্য। তারাই আমার উদ্যোগের প্রাণ।

উদ্যোগের শুরু থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে নারীদের স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করা। আগামী ৫ বছর পর আমি আমার উদ্যোগ “শুদ্ধতা” কে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে মার্কেটে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। যেখানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।

সব বাধা পিছনে ঠেলে উদ্বোধন হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু

Previous article

হাউজ ওয়াইফ হওয়াটাই যেনো দোষেরঃ শান্তু হাসানাত

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *