বিজ্ঞান

পৃথিবীতে পানির সন্ধান নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি বিজ্ঞানীদের

0
wtr

পৃথিবী যেন এক গোলকধাঁধা। তবে এই গোলকধাঁধার সৃষ্টির ইতিহাস আজও বিস্ময়কর। কথায় বলে পানিই জীবন। পানি থেকেই জীবনের সৃষ্টি। এই সত্য সামনে এসেছে বহুকাল আগেই। কিন্তু পৃথিবীতে পানি এলো কোথা থেকে, তাই নিয়েই নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

কেননা পানির উৎপত্তি থেকেই জানা যাবে পৃথিবী সৃষ্টির আদি রহস্য। মহাকাশের উল্কা বৃষ্টি থেকেই নাকি পৃথিবীতে পানির উৎপত্তি। বিগত কয়েক দশক আগে গবেষকরা নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় পৃথিবীতে পানির সৃষ্টির এই ধারণাকে উলটপালট করে দিয়েছে এক নিমেষে। এবার দেখে নেওয়া যাক সাম্প্রতিক গবেষণায় পৃথিবীতে পানির উৎপত্তি নিয়ে গবেষকরা ঠিক কী মত পোষণ করেছেন।

তারা দাবি করেন, উল্কাপিণ্ড বা মহাকাশের গ্রহাণুদের মধ্যে সংঘর্ষে নয়, মূলত সৃষ্টি থেকেই পৃথিবীতে পানি রয়েছে। সম্প্রতি লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির একদল গবেষকের গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়েছে পিএনএস-এ। ওই গবেষণা পত্রে দাবি করা হয়েছে, কোটি কোটি বছর আগে থেকে চাঁদের গায়ে লেগে থাকা পাথর থেকেই জানা যাবে পৃথিবীতে পানি সৃষ্টির ইতিহাস। তবে ওই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য রসায়নবিদ গ্রেগ ব্রেনিকা বলেছেন, পৃথিবীতে পানি আগে থেকেই ছিল, উল্কাপাত বা মহাকাশে বিভিন্ন গ্রহের মধ্যে সংঘর্ষ বা বিচ্ছুরণের মাধ্যমে জলের সৃষ্টির ধারণা একেবারেই সঠিক নয় বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন ওই গবেষকদল। তারা বলেছেন, পৃথিবীতে পানির উৎপত্তি নিয়ে একাধিক ধারণা রয়েছে অনেক দিন আগে থেকেই।

এ বিষয়ে বিগত কয়েক দশক আগে গবেষকদের ধারণাকে উল্লেখ করে তারা জানিয়েছেন, আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন মূলত মহাকাশের উল্কাপিণ্ড এবং পৃথিবীর বাইরের কোনও গ্রহাণু থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাতের মাধ্যমেই পৃথিবীতে জলের সৃষ্টি হয়েছে। আবার কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে, একেবারে সৃষ্টি থেকেই পৃথিবীতে জলের অস্তিত্ব রয়েছে। সম্প্রতি গবেষকরা এই ধারণাকে সমর্থন করেছেন বলে জানা গিয়েছে প্রকাশিত গবেষণা পত্রে।

ওই গবেষণা পত্রে আরো দাবি করা হয়েছে, বাইরে থেকে নয়, সৃষ্টি থেকেই পৃথিবীতে পানি ছিল এবং পৃথিবী সৃষ্টির সময় যে বস্তুটির সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়েছিল, তাতেও পানি ছিল বলে দাবি হয়েছে গবেষণা পত্রে। তবে উল্কাপিণ্ড থেকে পৃথিবীতে পানি আসতে পারে না বলেও দাবি করেছেন গবেষকরা। এই বিষয়ে ওই গবেষক মহল দাবি করেছেন প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ কোটি বছর আগে মহাকাশে সংঘর্ষের ফলে পৃথিবী এবং চাঁদ থেকে অনেক বস্তু অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। সংঘর্ষের ফলে মহাকাশের অন্যান্য কিছু গ্রহাণু থেকে ক্রমশ শুষ্ক হয়ে গিয়েছে চাঁদ। পাশাপাশি ওই সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীও শুষ্ক হয়ে যায় বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

এই গবেষণাটি চালাতে গবেষকরা ওই সংঘর্ষের সময় কালের চাঁদের গায়ে লেগে থাকা পাথরের পরীক্ষা করেছেন বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি গবেষকরা তাদের দাবির সমর্থনে বলেছেন, চাঁদে পৃথিবীর মতো ঋতু ও টেকটনিক পরিবর্তন হয় না। তাই কোটি কোটি বছর আগে থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠের গায়ে লেগে থাকা পাথর থেকেই জানা যাবে, পৃথিবীতে জলের উৎপত্তির ইতিহাস। এই জন্য বিগত কয়েক দশক আগে চাঁদ থেকে নিয়ে আসা পাথর গুলি নিয়ে পরীক্ষার পাশাপাশি সেগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।

এ ছাড়াও বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে, শুধুমাত্র পানির উৎপত্তিই নয়, চাঁদের পাথর পরীক্ষা করলেই পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস সামনে উঠে আসতে পারে। কারণ কোটি কোটি বছর আগে মহাকাশে লাগাতার সংঘর্ষের পরেও চাঁদের পাথরগুলি অপরিবর্তিত রয়ে গিয়েছে। আগামীতে চাঁদের ওই অপরিবর্তিত পাথর থেকেই পৃথিবীতে পানির উপস্থিতি ও উৎপত্তির ইতিহাস মিলবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।

সূত্র: রয়টার্স

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ‘ঢেঁকি’ বিলুপ্তির পথে!

Previous article

ঘরোয়া ফেসওয়াশেই দূর করুন তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *