উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা পেইন্টিংয়ে নিজের স্বপ্ন বুনেন উম্মে হানি অরিন By নিজস্ব প্রতিবেদক June 25, 20220 ShareTweet 0 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প শুনবো উম্মে হানি অরিনের কাছে। আমি উম্মে হানি অরিন, আমার জন্মস্থান চাঁদপুরে। জন্মের ২ বছর পর আমার বাবা-মা এবং পরিবারসহ ঢাকার কুড়িল চৌরাস্তা আমরা শিফট হয়ে যাই। এখানেই আমার বেড়ে ওঠা, কুড়িল শেরে বাংলা আইডিয়াল হাই স্কুলে আমার পড়াশোনা শুরু হয়। আমার বিয়ের পর ঘর সংসারের পাশাপাশি সবসময় আমার ইচ্ছে ছিলো নিজের কিছু করার। নিজের একটি পরিচয় তৈরী করা। সেখানে থেকেই আসলে আমার কাজ শুরু করা। ২০২০ সালে করোনাকালীন সময় যখন সবকিছু থেমে যায় তখনই মনে হয়েছে যে কাজ শুরু করার এখনই সময়। তখন থেকেই আসলে কাজ শুরু করার অনুপ্রেরণা বাবা-মা এবং স্বামীর কাছ থেকে পাই। আমার ছোট থেকেই পেইন্টিং করার আলাদা একটি পছন্দ রয়েছে সেই থেকে আসলে আমার কাজ শুরু করা। আমি বিভিন্ন ধরনের গ্লাস পেইন্টিং, ক্যানভাস পেইন্টিং নিয়ে কাজ করি। এছাড়া বাসা সাজানোর জন্য লাইটিং এবং মেয়েদের সাজসজ্জার পণ্য নিয়ে আমি সেবা দিয়ে থাকি। আমার পেইজের নাম Kashnuhaa (কাশনুহা)। আমার দুই মেয়ের নাম কাশফিয়া আর নুহা। আমার পেইন্টিং আমার মেয়েরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। আমার প্রতিটি আঁকা কেমন হলো তারাই আগে আমাকে কমেন্ট করে জানায়। তাই আমার উদ্যোগের নাম ওদের নাম থেকে নেয়া ‘কাশনুহা’। ওরাই আমার কাজের প্রথম অনুপ্রেরণা। আগেই বলেছি শুরুটা ছিলো খুব কঠিন। বিশ্ব যখন থেমে যায় তখনই আমার মনে হয় যে কিছু একটা করা দরকার। আমার বাবার তখন চাকরি যাওয়ার মতো, কাজ নাই ঘরে বসে থাকা মাসের পর মাস। তখন আর্থিক অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হয়ে যায়। যেহেতু আমার বাবার বড় ছেলে ছিলো না, তাই মেয়ে হিসেবে আমি তার বড় সন্তান। আমাকে তখন আমার বাবা-মায়ের সবকিছু কাঁধে তুলে নিতে হয়। মূলধন হিসেবে স্বামীর কাছ থেকে ৫,০০০ টাকা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। একজন উদ্যোক্তা হতে গেলে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য্য ,ভয় নিয়ে আপনি কখনো একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। একজন উদ্যোক্তা হবার যাত্রায় আপনি যদি ভয় নিয়ে চলতে থাকেন, তাহলে আপনি কখনো এগিয়ে যেতে পারবেন না। আপনাকে ভয় দূর করে, যেকোনো সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। বর্তমানে আমার কাজ আমি নিজেই করি। পেইন্টিং করা, পেইন্টিং শুকানো, প্যাকেজিং করা, বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার পেইন্টিং এর সব ধরনের রং তুলি এসব কিছু কালেক্ট করার জন্য সহযোগী হিসেবে অবশ্যই আমার বাবা-মা রয়েছেন আমার পাশে। বেশিরভাগ পণ্য কালেক্ট করার সময় আমার মা অথবা আমার স্বামী আমার সাথে থাকেন এবং কাছাকাছি ডেলিভারিগুলো আমার বাবা দিয়ে থাকেন। এখন পর্যন্ত আমার এই ছোট্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মী প্রয়োজন পড়েনি যেহেতু আমি আমার পরিবারের সাপোর্ট পাই আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষজন পড়ালেখা শেষে চাকরি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, কিন্তু আমি যখন আমাদের Women and e-Commerce Teust (ওমেন এন্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট) গ্রুপে পোস্ট পড়া শুরু করি তখন দেখি বাসায় বসে বিভিন্ন মানুষ যে যা পারছে তা নিয়ে কাজ করা শুরু করেছে। আগে থেকেই আমার চাকরি পছন্দ না, আমার সবসময় ইচ্ছে ছিলো নিজের কিছু করা। আমার নিজের কোনো কাজ দিয়ে মানুষ আমাকে চিনবে জানবে, সে আগ্রহটা অনেক বেশি আরো জেগে উঠে নাসিমা আক্তার নিশা আপুর দেয়া এ প্ল্যাটফর্ম থেকে। যেখানে আপু সবসময় আমাদেরকে বুঝিয়েছেন মেয়েরা বাসায় বসে সবকিছু করতে পারে, তাই আমি ভিন্ন পথে হেঁটেছি আমার নিজের পরিচয় গড়ার জন্য। আমি একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। কমবেশি সবারই ঘর সাজানো নিয়ে অনেক আগ্রহ থাকে, ঘর সাজানো সবকিছুই যে অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে তা কিন্তু না। ক্যানভাস পেইন্টিং সবাই কম বেশি পছন্দ করেন যা গিফট হিসেবে অনেক সুন্দর একটি পন্য। গ্লাস পেইন্টিং অনেক ইউনিক একটি পণ্য, ফেলে রাখা গ্লাস, বোতলগুলো রং দিয়ে যখন পেইন্টিং করা হয় তখন সাজানোর জন্য অনেক সুন্দর একটি শোপিস বা ফুলদানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, বিশেষ করে একজন নারী কে। যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সেটি হলো, প্রয়োজনীয় ও সঠিক ধারণা এবং তথ্য পাওয়া। তবে বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি উদ্যোক্তা রয়েছেন, যার ফলে নতুনরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সহায়তা পেয়ে থাকেন। এছাড়া ইন্টানেট ও যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের কারণেও অনেক সহজ হয়েছে উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম। স্বাভাবিকভাবেই শুরুতে একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পূঁজি কম থাকে, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যাবসায়ীর চেয়ে ব্যাংক ঋণ পাওয়া তার পক্ষে অনেক বেশি কঠিন হয়। তাই উদ্যোক্তাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য এরকম দীর্ঘ ও জটিল পদ্ধতির ছোট ছোট সহজ সমাধান তৈরী করা উচিত বলে আমি মনে করি। অনেক সময় শশুর বাড়ি থেকেও পছন্দ করে না যে তার ছেলের বউ কাজ করবে, কিন্তু আমার কাজে কেউ কখনো বাঁধা দেয়নি। আমার বাবা-মা, শশুর-শাশুড়ী পুরো পরিবার আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে। তাদের শুধু একটি কথা নিজের পরিবার আগে ঠিক রাখতে হবে, নিজের সন্তান কে সঠিকভাবে মানুষ করতে হবে। একজন মেয়ে সবার আগে মা, তাই মায়ের দায়িত্ব সবার আগে করতে হবে; তারপর আমি আমার কাজ কে সময় দিবো। ইনশাআল্লাহ আমি সেভাবেই ব্যালেন্স করে আমার পরিবারের সব কাজগুলো করে থাকি, পাশাপাশি আমার উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ Women and e-Commerce Trust (WE) গ্রুপের মাধ্যমে অনেক মানুষের সাথে যেমন চেনাজানা হয়েছে, তেমনি পরিচিতিও বাড়ছে। এতে করে আমার সেল আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়। এখন পর্যন্ত কাস্টমাররা সন্তুষ্ট হয়েছে আমার কাজে এবং সবাই অনেক বেশি পছন্দ করেছে আমার কাজ। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা এখন পর্যন্ত পাইনি, যদি কখনো পাই তাহলে তার যথাযথ ব্যবহার করবো ইনশাআল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ! আমার অর্জন, আমাকে মানুষ এখন এক নামে চিনতে পারে। আমি মানুষ কে তাদের পছন্দ অনুযায়ী আমার কাজ দিতে পারি, তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করি, এটাই আমার প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় অর্জন। এর ফলে আমি রিপিট কাস্টমার পেয়েছি এবং তাদের মাধ্যমে আমি অন্যান্য কাস্টমারদের কেও পেয়েছি। আমার প্রতিষ্ঠান নিয়ে অনেক স্বপ্ন রয়েছে, আশা করি অনেক বড় হবে আমার স্বপ্ন। আমার সিগনেচার পন্য গ্লাস পেইন্টিং একদিন সবার কাছে পৌঁছাবে। স্বপ্ন দেখি আমার প্রতিষ্ঠান একদিন একটা সনামধন্য ব্র্যান্ড হবে, দেশের বাহিরেও যাবে। আমার প্রতিষ্ঠান Kashnuhaa (কাশনুহা) কে একদিন এক নামে সবাই চিনবে ইনশাআল্লাহ।
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231560 views