উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

প্রতিবন্ধকতা জয় করে ক্যাটারিং ব্যবসায় নিশাত সুলতানা

1
nskhj

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন নিশাত সুলতানা আঁখি। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আমি নিশাত সুলতানা আঁখি। জন্মস্থান এবং বেড়ে ওঠা খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায়। বর্তমানে বসবাস করছি রাজধানী ঢাকার মিরপুরে।

ছোটবেলা থেকেই দেশি-বিদেশি রান্না শেখার প্রতি আমার ভীষণ আগ্রহ ছিলো। তখনকার সময়ে বিভিন্ন পত্রিকা বিশেষ করে নকশাতে নতুন নতুন রান্নার রেসিপি দিতো। আমি সেগুলোকে কেটে কেটে জমিয়ে রাখতাম এবং পরবর্তীতে ট্রাই করতাম। ২০০৯ সালে যখন আমার আম্মু মারা যান তখন আমার ভাই সবে মাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছে।

সবার আম্মু যখন বাচ্চাদের জন্য নানা রকম টিফিন নিয়ে আসতেন তখন দেখলাম ওর মনটা একটু খারাপ হতো! কারণ আমি তখন তেমন কিছুই পারতাম না। ভাইকে স্কুলে টিফিন দেয়ার জন্য আমি নতুন নতুন আইটেম বানাতে শুরু করলাম এবং সেগুলো যখন অনেক মজাদার হতো সবাই অনেক প্রশংসা করতো, তখন থেকেই নতুন কিছু শেখার আগ্রহ আরো বেড়ে যেতে থাকে।

এভাবেই চলে যায় অনেকগুলো বছর। পড়াশোনা শেষ করার পর আমার বিয়ে হয়ে যায় চলে আসি ঢাকায়। এতোদিনে ইউটিউবে রান্নার চ্যানেলগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমি সেখানে ঘুরে ঘুরে দেশি-বিদেশি নানারকম রান্না দেখি আর বাসায় ট্রাই করি, কিন্তু এটাকে প্রফেশনালি নিবো তা চিন্তা করি নাই। তাই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জবে ঢুকে যাই।

সেখানে চাকরি করে বেশ ভালোই মাইনে পাই, কিন্তু এই কাজে নিজেকে কোথাও পাই না, মনে হয় টাকা ইনকামের জন্যই শুধু কাজ করছি! আমার হাজব্যান্ড ব্যাপারটা বুঝতে পারে। সে আমাকে বলে চাকরিই করতে হবে এমন তো নয়! তুমি চিন্তা করো তুমি কি ভালোবাসো? তুমি কি করতে চাও? তখন আমি বললাম আমি খাবার নিয়ে কাজ করতে চাই।

সে বললো তবে তাই করো। আমি কোনো কিছু চিন্তা না করেই চাকরিটা ছেড়ে দেই। আশেপাশে যারা পরিচিত আছেন সবাইকে জানাই যে আমি খাবার নিয়ে কাজ করছি, যদি কারো কিছু লাগে যেনো আমাকে জানায়। অনেকেই আমাকে বোঝায় চাকরি ছেড়ে অনেক বড় ভুল করেছো, আমি কারো কথা শুনি নাই।

এর মাঝে আমার হাজবেন্ডের প্রমোশন হয়। সে তার অফিসের কিছুর কলিগদের খাওয়াবে তাই সেই অর্ডারটা সে আমাকে দেয়। তার অফিসে যখন আমি খাবারটা পাঠাই সে কাউকে বলেনি যে এটা আমি দিয়েছি, বলে একটা পেইজ থেকে অর্ডার করছি। সবাই খেয়ে অনেক প্রশংসা করে এবং বলে এরপর অফিসের কোনো অনুষ্ঠান হলে এখান থেকেই খাবার আনবো। এটা শুনে আমার আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যায়।

ud 1

এর কিছুদিন পর এক আপু তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে যাবার জন্য দাওয়াত করতে ফোন করেন। পরে যখন জানতে পারেন আমি খাবার নিয়ে কাজ করছি তখন আমাকে সাপোর্ট করার জন্য ওই অর্ডারটি উনি আমাকে দেন। জীবনে প্রথম ১০০ জনের অর্ডার! আলহামদুলিল্লাহ সেটাও সুন্দরভাবে দিতে সক্ষম হই।

এরপর আমি চিন্তা করি আসলে এটাকে প্রফেশন হিসেবে নিতে গেলে আমাকে এই বিষয়ে আরো ধারনা রাখতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে সমস্যায় পড়তে পারি। সেই চিন্তা থেকেই আমি শেফ কোর্সে ভর্তি হয়ে যাই এবং কোর্স এবং ইন্টার্নি সম্পন্ন করি।
আলহামদুলিল্লাহ এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কারণ এতোদিনে বন্ধু-বান্ধব পরিচিতজন এবং যারা রিপিট কাস্টমার এদের মাধ্যমে একটি ভালো পরিচিতি লাভ করে ফেলি।

আমি আমার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছি ” The Daily Foods” (দ্য ডেইলি ফুডস)। আমরা অফিস পার্টি, জন্মদিন, বিয়েসহ যেকোনো অনুষ্ঠানের খাবার সরবরাহ করে থাকি। এছাড়াও পিঠাপুলি, ফ্রোজেন আইটেমসহ সবধরনের কাস্টমাইজ ফুড ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী দিয়ে থাকি।

এখন আমার অর্ডারগুলো থাকে ১৫০ জন, ১০০ জন, ৯০ জন এমন কোয়ান্টিটির। এমনকি বিয়ে বাড়ির অর্ডারের কাজও আমরা করেছি। আমার প্রতিষ্ঠানে আমিসহ বর্তমানে চারজন কর্মী কর্মরত আছেন।

আমার মতে উদ্যোক্তা হতে গেলে সব থেকে বেশি যে জিনিসটি প্রয়োজন সেটা হলো সৎ থেকে কঠোর পরিশ্রম করে যাবার মানসিকতা। সত্যি বলতে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারী উদ্যোক্তাদের এখনো অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। সেটা পরিবার থেকে কিংবা সমাজ থেকে। তবে খুব ধীরে হলেও আগের থেকে এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। ইনশাআল্লাহ সামনে আরো হবে বলে আশা করি। তবে কাজ করতে গেলে তো প্রতিবন্ধকতা আসবেই। আমারও ছিলো। আল্লাহর রহমতে কিছু সমস্যাকে সাথে নিয়ে এবং কিছু পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছি।

আরও পড়ুনঃ ডেজার্ট নিয়ে কাজ করে বড় স্বপ্নের পথে হাটছেন তাসমিয়াহ মৌ

সরকারি-বেসরকারি সহায়তা বলতে আর্থিক কোনো সহায়তা এখনো আমি নেইনি। তবে সরকারি অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়েছি। যেটা আমার বিজনেস পরিচালনার ক্ষেত্রে ভীষণভাবে সহায়ক হয়েছে।

আলহামদুলিল্লাহ সরকারি বড় বড় অফিস, মন্ত্রণালয়, বেসরকারি অফিস, বিভিন্ন ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আমাদের খাবার যাচ্ছে। পাশাপাশি সেখান থেকেই আবার নতুন কাস্টমার তৈরি হচ্ছে। যার মাধ্যমে আমরা কাস্টমারের সন্তুষ্টি বুঝতে পারি। এটা আমার জন্য একটি বড় অর্জন।

আগামী পাঁচ বছর পর আমার প্রতিষ্ঠানকে ঢাকার সব থেকে জনপ্রিয় ক্যাটারিং হিসেবে দেখতে চাই। মানুষের মনে আমাকে নিয়ে যে বিশ্বাস আছে আমার প্রতিষ্ঠানে শুধু সুস্বাদু খাবারই পাওয়া যায় না, আমরা সুস্বাস্থ্য এবং হাইজিন মেইনটেনে কোনো আপোষ করি না। এই বিশ্বাস আজীবন ধরে রাখতে চাই এবং সকলের দোয়ায় সে লক্ষ্যেই পরিশ্রম করে যাচ্ছি।

চাঁদে সফল অভিযানের পর প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করেছে নাসার ওরিয়ন মহাকাশযান

Previous article

নিজের একটা পেস্ট্রি শপের স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা উম্মে হানি

Next article

You may also like

1 Comment

  1. […] আরও পড়ুনঃ প্রতিবন্ধকতা জয় করে ক্যাটারিং ব্যবসা… […]

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *