তথ্য ও প্রযুক্তিবিজ্ঞান

ফাইভজি স্পেকট্রাম নিলামে তিন অপারেটর

0
5g

দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে ফাইভজি স্পেকট্রাম নিলামে অংশ নিচ্ছে তিন মোবাইল ফোন অপারেটর। নিলামের নির্দেশনার কিছু শর্তে বিটিআরসির ছাড় দেয়ার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অপারেটরগুলোর এ সিদ্ধান্ত নেয়। নিলাম অনুষ্ঠিত হবে ৩১ মার্চ। মূলত রোলআউট অবলিগেশন পুর্নবিবেচনা এবং স্পেকট্রামের দাম ও তা পরিশোধ আরও সহনীয় করা যায় কিনা এই বিষয়গুলোতেই অপারেটরদের আলোচনার জায়াগা।

নিলামের নির্দেশনায় ছয় মাসের মধ্যে ফাইভজি সেবা চালুর রোলআউট অবলিগেশন দেয়া রয়েছে। এছাড়া সেলুলার মোবাইল ফোন অপারেটর লাইসেন্স গাইডলাইনের খসড়ায়ও ফাইভজি চালুর বাধ্যবাধকতায় বলা হয়েছে, লাইসেন্স নেয়ার পর প্রথম বছরে দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছরে ২০ শতাংশ, তৃতীয় বছরে ৩০ শতাংশ, চতুর্থ বছরে ৪০ শতাংশ এবং পঞ্চম বছরে ৫০ শতাংশ কাভারেজের আওতায় আনতে হবে ।

১০ মার্চ বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনায় অপারেটরগুলো তাদের আপত্তির বিষয়গুলো উত্থাপন করে। বিটিআরসি রোলআউট অবলিগেশন পুনর্বিবেচনা এবং স্পেকট্রামের দাম পরিশোধ আরও সহনীয় করার আশ্বাস দেয়, যা ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছে দুই পক্ষই। তবে অংশগ্রহণের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটলেও উল্লেখিত দামে ফাইভজির জন্য প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম অপারেটরগুলো কিনতে সমর্থ হবে কিনা, তা নিয়ে তারা চিন্তিত। কারণ দাম কমাতে বিবেচনায় নেয়ার মতো বিষয় এখনও দেখছে না বিটিআরসি। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বলছে, আন্তর্জাতিক দামের তুলনায় এই বেইজ প্রাইস কম। এছাড়া আগের নিলামে স্পেকট্রাম বিক্রির তুলনামূলক বিবেচনায়ও এটি কম।

এদিকে বিটিআরসি চাইছে অপারেটরগুলো নিলামে তোলা সব স্পেকট্রাম কিনুক। অপারেটরগুলো বলছে, আরও আলোচনা প্রয়োজন, তারা আশাবাদী বিটিআরসি স্পেকট্রামের দাম নিয়ে চিন্তাও দূর করে দেবে। বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র জানান, অপারেটরদের সঙ্গে যে সভা হয়েছে সেখানে মোটামুটি উভয়পক্ষে কিছু ছাড় আমরা দিয়েছি। যেমন পেমেন্টে ছাড় আছে, রোলআউট অবলিগেশন ছাড় আছে, যা আলোচনা করে ঠিকঠাক করে নেয়া হবে। এই হলো মূল বিষয়। তবে তার আগে তাদের সব স্পেকট্রাম বরাদ্দ নিতে হবে। তখন আমরা আলোচনা করে রোলআউট অবলিগেশনের বিষয়টি ঠিক করবো, উল্লেখ করেন তিনি।

স্পেকট্রামের দাম কমানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, না, এটা কমানো হয়নি। ওরা বলছিলো কিন্তু এটা সরকার হতে অনুমোদিত, কমানোর কোনো সুযোগ নেই। তাদের কিস্তি করে দেয়া, কিস্তির সময়টা আমরা সহনীয় করে দিচ্ছি। আমরা বলেছি স্পেকট্রাম নেন পরে আমরা দেখবো।মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এস এম ফরহাদ বলেন, স্পেকট্রাম নিলাম নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে আমাদের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে এবং আরও আলোচনা হবে।

অপারেটরদের পক্ষ থেকে কিছু বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে এবং আমরা আশা করি বিটিআরসি বিষয়গুলো বিবেচনা করবে। সরকার ও অপারেটর উভয়েই গ্রাহকদের কাছে উৎকৃষ্ট মানের সেবা পৌছে দিতে চায়, উল্লেখ করেন তিনি। গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হোসেন সাদাত বলেন, স্পেকট্রাম নিলামকে স্বাগত জানায় গ্রামীণফোন। অপারেটরটি মনে করে ফোরজি সেবার উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ ফাইভজি চালু করার প্রস্তুতি হিসাবে এই স্পেকট্রাম নিলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ইতিমধ্যে স্পেকট্রাম নিলামের গাইডলাইন পেয়েছি এবং অংশগ্রহণের বিষয়ে শর্তাবলী পর্যালোচনা করা হচ্ছে, উল্লেখ করেন তিনি। বাংলালিংকের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সাস্টেনিবিলিটি আংকিত সুরেকা জানান, তারা বিশ্বাস করেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ফাইভজি চালু করার পরিকল্পনা যৌক্তিক নয়। ফাইভজি চালুর আগে এর নীতিমালা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন। অনুষ্ঠিতব্য স্পেকট্রাম নিলামের সব দিক নিয়ে বাংলালিংক বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আশা করছেন এর মাধ্যমে সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে, বলছিলেন তিনি।

একটি অপারেটরের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলছেন, ধরা যাক, কোনো অপারেটর ৫ হাজার কোটি টাকার স্পেকট্রাম কিনলো। এখন এই স্পেকট্রামেই যে অপারেটরটির বড় বিনিয়োগ, এমন নয়। ফাইভজিতে এই স্পেকট্রাম কাজে লাগাতে তাকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। এতো বিনিয়োগে তার ব্যবসায়িক ক্ষেত্র কী? ফাইভজি সেবা যারা নেবে তারা প্রস্তুত কিনা, বলছিলেন তিনি। গ্রাহক সংখ্যায় দেশের অন্যতম অপারেটরের এই কর্মকর্তা বলছেন, আমরা স্পেকট্রাম কিনে তা ফোরজি নেটওয়ার্ক আরও উন্নত করতে কাজে লাগাতে পারি এবং ফাইভজির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি। ফাইভজির টেস্ট ট্রায়ালও করতে পারি কিন্তু এখনই সেবা চালু করে দেয়ার বাস্তবতা দেখছি না।

ফাইভজি রোলআউটের ক্ষেত্রে অপারেটরদের দিকটা যুক্তিসঙ্গত। তারা সেখানেই ফাইভজি সেবা দিতে চাইবে যেখানে ব্যবসা আছে বা ব্যবহারকারী আছেন। এটি গড়ে করার বাধ্যবাধকতা যুক্তিসঙ্গত নয়। অপারেটররা শুরুতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকাগুলোতে নেটওয়ার্ক দিতে চাইবে অন্যদিকে সাধারণ আবাসিক এলাকায় নেটওয়ার্ক চালু করতে যদি বাধ্যবাধকতা দেয়া হয় সেটি তো অপারেটরা মানতে চাইবে না, উল্লেখ করেন তিনি। এই কর্মকর্তার সঙ্গে অন্য দুই অপারেটরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, দামের কারণে পুরো স্পেকট্রাম বিক্রি হয় কিনা সেটি নিয়ে সংশয় আছে।এরআগে বিটিআরসি ২০২২ সালের ৩১ মার্চ এই নিলামের তারিখ চূড়ান্ত করে আবেদন আহবান করে ৩ মার্চ ‘রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অকশন-২০২২’ নামে বিস্তারিত নির্দেশনা জারি করে।

এরপরই অপারেটরগুলো নিলামের সময়, স্পেকট্রামের দাম, রোলআউট অবলিগেশনসহ কিছু বিষয়ে আপত্তি তোলে। এসব বিষয়ে তারা বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনার দাবি তোলেন এবং এরপর সিদ্ধান্তে আসার কথা বলেন। এবারের নিলামে প্রতি মেগাহাটর্জ স্পেকট্রামের ফ্লোর প্রাইস বা বেইজ প্রাইস থাকছে ৬ মিলিয়ন ডলার, টাকার হিসাবে যা ৫১ কোটি ৯০ লাখের একটু বেশি। এতে স্পেকট্রাম ক্রয়কারীদের জন্য ফাইভজি সেবা চালুর জন্য ৬ মাসের রোলআউট অবলিগেশন দেয়া রয়েছে। নিলামের দিন হতে এই সময় ধরা হবে।এবারে মোট ১৮ ব্লকে স্পেকট্রাম নিলাম হবে। এরমধ্যে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ বা ২৩০০-২৪০০ মেগাহার্টজে ৬টি ব্লক এবং ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজে বা ২৫০০-২৬৯০ মেগাহার্টজে ১২ টি ব্লক রয়েছে।

২৩০০-২৪০০ মেগাহার্টজে প্রতি ব্লকে ১০ মেগাহার্টজ করে স্পেকট্রাম নিলাম হবে। ২৫০০-২৬৯০ মেগাহার্টজেও প্রতি ব্লকে ১০ মেগাহার্টজ করে স্পেকট্রাম উঠবে। বিড আর্নেস্ট মানি রাখা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। যা অপারেটরগুলোকে জমা দিতে হবে ২৩ মার্চের মধ্যে। এছাড়া স্পেকট্রাম ক্রয়মূল্যের ১০ শতাংশ অর্থ নিলামের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার দিন হতে ৬০ দিনের মধ্যে দিতে হবে ক্রেতাকে। আর অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ অর্থ ৯ বছরে সমান কিস্তিতে দেয়া যাবে। নিলাম নিয়ে ভাবনা নেই সরকারি অপারেটর টেলিটকের। তারা ৩৫০০ মেগাহাটর্জ ব্যান্ডে ৬০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম পেয়েছে।

থার্মোমিটার যুক্ত হচ্ছে স্যামসাং গ্যালাক্সি ঘড়িতে

Previous article

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম জয় বাংলাদেশের

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *