খবরজীবনযাপন

বাংলার প্রথম সিরিয়াল কিলার

1
1606320881 5fbe82f1066bf 18

বিশ্বজুড়ে বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু মানুষের কারণে হাজার হাজার মারা গেছেন। তারা মানুষ হত্যা করতেন নেশায় আবার কেউবা পেশা হিসেবেই নিয়েছিল। বিশ্বের প্রথম সিরিয়াল কিলার হিসেবে মনে করা হয় জ্যাক দ্য রিপারকেই। যদিও ভারতবর্ষে তারও আগে এক সিরিয়াল কিলার ছিলেন, আশ্চর্যের বিষয় হলো তিনি একজন নারী।

তিনি ছিলেন সাধারণ এক গৃহবধূ। তার সিরিয়াল কিলারের তকমা সবাইকে অবাক করেছে। তাকেই বিশ্বের প্রথম ও বাংলার প্রথম সিরিয়াল কিলার হিসেবেই ধরা হয়। যদিও জ্যাক দি রিপার বা জিল দ্য রাইয়ের ভিড়ে ইতিহাসে প্রায় হারিয়েই গেছেন এই নারী।

ত্রৈলোক্যতারিণী দেবী। দারোগা প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের লেখা দারোগার দপ্তর থেকে জানা যায় তারিণীর এই জীবন সম্পর্কে। পুলিশের পাশাপাশি সেই সময়ের একজন স্বনামধন্য লেখক হিসেবে পরিচিতি ছিলেন প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়।

১৮৭৮-১৯১১ সাল পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন পুলিশ বিভাগে। তার প্রকাশিত বই ‘দারোগার দপ্তর’ থেকেই জানা যায় বাংলার প্রথম সিরিয়াল কিলার তারিণীর সম্পর্কে। পরবর্তীকালে দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের ‘বাবু ও বারবনিতা’ বইটিতে বাংলার প্রথম সিরিয়াল কিলার হিসেবে একাধিকবার উঠে এসেছে তারিণীর নাম।

ভারতের বর্ধমানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম তারিণীর। আর দশটা গ্রামের মতোই এখানকার চিত্র। ঘরের নারী সদস্যরা ব্যস্ত ঘর সংসার আর সন্তান লালন পালনে। আর বাড়ির পুরুষেরা বেশিরভাগই ব্যস্ত থাকেন চাষের

তখনও সংস্কারের আলো সেভাবে ছুঁতে পারেনি হিন্দু সমাজকে। পুরোদমে চলছে বাল্যবিবাহ। ১৩ বছর বয়সে ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধের সঙ্গে বিয়ে হয় তারিণীর। সেই সময় অনুযায়ী বিয়ের বয়স পেরিয়ে গিয়েছিল তার। তবে সংসার করা হয়নি কিশোরী বধূ তারিণীর। সতীনের ঘরে যাওয়া হয়নি। স্বামীর সঙ্গেও দেখা হয়েছিল মাত্র একবার। বাবার বাড়িতেই রয়ে গেলেন তারিণী। ফলে সময়ের নিয়মে একসময় শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ কমতে থাকে। স্বামী কিছুদিন পর মারা গেলে শ্বশুরবাড়ির দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় তার।

তবে সবে যৌবনে পা রাখা মেয়েটি জড়িয়ে যায় নতুন এক সম্পর্কে। গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে রাতের অন্ধকারে হঠাৎ করেই গ্রাম থেকে পালিয়ে যায় তারিণী। এরপরই তারিণীর ভোলবদল। বিয়ের পরেও প্রেমের সম্পর্ক, গ্রামে কানাকানির সূত্রপাত ঘটেছিল আগেই। এতে তারিণীর জন্য তার বাপের বাড়ির দরজাও চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে গেল।

এদিকে তারিণীকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারেনি স্বামী। দুজনে কলকাতার সোনাগাছি অঞ্চলে ভাড়া থাকতে শুরু করে তারা। বেশ ভালোই দিন যাচ্ছিল তাদের। তবে তারিণী সেই যুবকের সঙ্গে থাকতে চান না। নিজের মতো করে জীবনযাপন করার ইচ্ছা তার। সোনাগাছিতে থাকতে শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই মৃত্যু হয় তারিণীর প্রথম প্রেমিকের। এই ঘটনায় সন্দেহের তীর যায় তারিণীর দিকেই।

এর মধ্যেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে পতিতাবৃত্তি। তবে অনেকে আবার বলেন প্রেমিকই নাকি তাকে পতিতাপল্লীতে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এই পতিতাবৃত্তির সূত্রেই তার পরিচয় ঘটল অপরাধ জগতের মাথাদের সঙ্গে তারিণীরে পদার্পণ ঘটল অপরাধ জগতের বৃত্তে। পুলিশও শুরু করল তদন্ত। কিছুদিনের মধ্যেই আটক করা হয় তারিণীকে। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় সে। সেই শুরু। তারপর দিন যত এগিয়েছে, ততই লম্বা হয়েছে খুনের লিস্ট। এরই মধ্যে একের পর এক পুরুষ এসেছে তারিণীর জীবনে।

সেসব পুরুষ সঙ্গীদের সাহায্যেই ধনী বাড়ির মেয়েদের শিকারে পরিণত করত তারিণী। কিছুদিনের মধ্যেই প্রায় পাঁচটি খুন করে ফেলে। কয়েকদিনের ব্যবধানে উধাও হয়ে গেলেন পাঁচজন নারী। সবাই বেশ ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যা ছিলেন। টনক নড়ে পুলিশের। শুরু হল তদন্ত। তদন্তের শুরুতেই অদ্ভুত এক তথ্য উঠে এলো পুলিশের হাতে। তারা জানতে পারল, পাঁচটি মৃত্যুর প্রত্যেকটি হয়েছে মানিকতলা এলাকায়। এমনকি পাঁচটি মৃত্যুর প্রতিটির ধরন একই।

প্রত্যেকের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। কিছুদিনের চেষ্টায় পুলিশের জালে ধরা পড়ল তারিণী। পুলিশি তদন্ত শেষে উঠে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু গয়নার লোভেই একের পর এক খুন করে গেছে ত্রৈলোক্যতারিণী। এই ব্যাপারে তার মূল ঘাঁটি ছিল মানিকতলা এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাগানবাড়ি। এখানেই বিভিন্ন ছলনায় তার শিকারদের ডেকে এনে গয়না লুঠ করে তারপর তাদের পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করত।

আরও পড়ুনঃ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গভীর মহাকাশে আলোর সবচেয়ে উজ্জ্বল ঝলকানি দেখে বিস্মিত

৩টি মমি নিয়ে গবেষণা করে যা জানা গেলো

Previous article

পুরুষ তিমির দাঁত নিতে হয় বিয়ের প্রস্তাবে!

Next article

You may also like

1 Comment

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More in খবর