উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

বাচ্চাদের থেকে আগ্রহ পেয়ে উদ্যোগ শুরু করেন সিনথিয়া রূম্পা

1
cvr 2 2

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা সিনথিয়া রূম্পার সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

“ঝুঁকি আছে জেনেও লাভের আশায় ব্যবসা পরিচালনা করা, সৃজনশীলতা ও কঠোর পরিশ্রম করাই একজন উদ্যোক্তার কাজ”। আসসালামু আলাইকুম। আমি একজন রাজধানী ঢাকার স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা সিনথিয়া রূম্পা। পুরান ঢাকা লালবাগে আমার জন্ম।

আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছি।

ছোটবেলা থেকেই আমি বিভিন্ন রকমের মেহেদীর ডিজাইন, ক্রাফটিং এর কাজ এবং আলপনা করতে পছন্দ করি। এছাড়াও পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা সহ মেধা বিকাশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিজেকে তুলে ধরেছি অনন্য উচ্চতায়।

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একজন আদর্শবান শিক্ষক হওয়ার। ছোটবেলার সেই স্বপ্ন সত্যিও হয়েছিলো আমার। শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসর সময় গুলোকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্নের পরিধিকে বাড়িয়ে গড়ে তুলেছিলাম আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান টোকেন অব লাভ

বর্তমানে আমি একজন গৃহিণী এবং একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছি। আমরা তিন বোন, এক ভাই। বাবা মারা যান যখন আমি স্কুলে পড়তাম। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো আমি শিক্ষিকা হবো। আলহামদুলিল্লাহ পড়াশোনার পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করলাম। আলহামদুলিল্লাহ পরিবার থেকে সবসময় সহযোগিতা পেয়েছি। আমার সকল স্বপ্ন পুরণে আমার পরিবার পাশেই ছিলো। তাই তো পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত হলাম।ftre 2 3যেহেতু আমার ছোট বাচ্চাদের অনেক পছন্দ তাই আমি বাচ্চাদের স্কুলে জয়েন করি। ‘লিটল বার্ডস্ কিন্ডার গার্ডেন’ স্কুলে আমার প্রথম কর্মজীবন শুরু হয়। ছোট বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে আমার অনেক ভালো লাগতো। এই ভালো লাগাটা আরো বেড়ে যাওয়ায় আমি প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেছিলাম।

আমার ব্যবসায়ের আগ্রহটা শুরু হয় বাচ্চাদের মাধ্যমেই। একটা সময় স্কুলের সকল বাচ্চারা আমাকে এতোটাই ভালোবেসে ফেলে যে প্রায় সময় সবাই আমার জন্য কিছু না কিছু গিফট নিয়ে আসতো। আমিও তাদের জন্য গিফট নিয়ে আসতাম। সে গিফট গুলো পেয়ে তাদের মুখে যে কি পরিমাণ হাসি খুশি আর আনন্দ দেখতাম তাতেই মনটা ভরে যেতো।

সফট টয়, ডল এগুলো পেলেই যেনো তাদের খুশির শেষ ছিলো না। তা থেকেই আমার আগ্রহ জাগলো নতুন কিছু করার। তাই বাচ্চাদের পছন্দের গিফট এবং খেলনা আইটেম নিয়ে শুরু করলাম “Token of Love” নামে ছোট একটা ব্যবসায়িক কার্যক্রম। শুরু থেকেই আমার ইচ্ছা ছিলো নিজে কিছু করবো। তাই পড়াশোনা এবং জবের পাশাপাশি ছোট করে অনলাইন বিজনেস শুরু করলাম গিফট আইটেম নিয়ে।

শুধু ছোট বাচ্চাদের কেনো বড় ছোট অনেকেই এখন টেডিবিয়ার, সফট টয় এই সব গিফট আইটেম পছন্দ করে। গিফট পেতে কার না ভালো লাগে। তাই ভালো লাগার মতো আইটেম নিয়ে শুরু করলাম আমার উদ্যোগ ২০২১ সালের মে মাসের ১ তারিখে। তখন আমার মূলধন খুব সামান্য ছিলো। মাএ ১০০০ টাকা দিয়ে আমি প্রথমে কার্ড রেডি করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনি। তারপর নিজের হাতে কিছু কার্ড বানাই। এরপর আস্তে আস্তে সফট টয় এবং ইমোজি পিলো কিনি।

আইটেম গুলোর মধ্যে থাকছে বিভিন্ন ডিজাইনের পিলো, দেয়াল ঘড়ি, টেডিবিয়ার, সফট টয়, হাতের তৈরি কিছু কার্ড সহ ঘর সাজানোর মতো বেশকিছু সামগ্রী। আমি আমার নিজ হাতের তৈরি করা কিছু কার্ড বানাই যেগুলো ঈদে, জন্মদিনে বা যেকোনো উপলক্ষে গিফট করে প্রিয়জনের মুখে হাসি ফুটাবে সেটা আমার জন্যে অনেক আনন্দের।

চেষ্টা করেছি আরো কিছু নতুন কালেকশন নিয়ে আসার, সাথে ভালো সার্ভিস দেয়ার যাতে করে ক্রেতাদের মন জয় করতে পারি। আমার প্রোডাক্টসের দাম গুলো আমি সব সময় রিজেনেবল রেখেছি। যাতে সবাই কিনতে পারে প্রয়োজন অনুযায়ী, কারণ একমাত্র ক্রেতাদের খুশিতেই আমার কার্যক্রম এগিয়ে যাবে।

আরও পড়ুনঃ দেশ বিদেশের মানুষের মাঝে দেশীয় পণ্য ছড়িয়ে দিতে চান আফরিন মমতাজ

আলহামদুলিল্লাহ এখন আমার পেইজে অনেক রকমের সুন্দর কালেকশন আছে। যেমন লেডিস কালেকশন এর মধ্যে কিছু জুয়েলারি আইটেম, কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস, ব্যাগ, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের কিছু জিনিস এবং ছোট বাচ্চাদের কিছু আইটেম। অনলাইনে আমার এই উদ্যোগটি “Token of Love ” নামে পরিচিত।।

যখন আমার এই পেইজে নতুন কাজ শুরু করেছিলাম তখন সেল অনেক কম হতো। সহজে অর্ডার আসতো না। অনেক ফেইক কাস্টমাররাও বিরক্ত করতো। লাভ থেকে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতো। কিন্তু এতে আমি হতাশ হই নি। পরে আস্তে আস্তে আলহামদুলিল্লাহ সেলের পরিমাণ বাড়তে শুরু করলো। তখন ভরসা পেলাম সামনে এগিয়ে যাওয়ার। আমার পরিবারের এবং আমার হাসব্যান্ড এর সহযোগিতা ও দোয়ায় প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছি আমার এই নতুন উদ্যোগের সাথে।

আলহামদুলিল্লাহ কাস্টমারদেরও ভালো সাড়া পেয়েছি এবং এখনও পাচ্ছি। সবাই আমার সার্ভিস এবং প্রোডাক্ট নিয়ে খুশি ছিলো।

সফল হওয়ার আশায় সকল ব্যর্থতা এবং হতাশাকে ভুলে ক্রেতার পছন্দের দিক খেয়াল রেখে আমার এই “Token of Love” কে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ আমার এই ছোট উদ্যোগটি একসময় আরো অনেক বড় এবং সকলের কাছে আরো বেশি পছন্দের হবে।

ব্যবসায় লাভ ক্ষতি তো থাকেই, তা নিয়েই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাই ক্ষতির কথা না ভেবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে।

বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করলেও খুব শীঘ্রই ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শোরুম দেয়ার এবং দেশের হাজারো বেকার তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার প্রত্যাশা আছে।

EDF এর কথা না বললেই নয়, এটি এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা আমাদের পরিচিতি এবং পেইজের পরিচিতি খুব সুন্দরভাবে প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি। EDF এর যাত্রা যখন থেকে শুরু হয়েছিলো তখন থেকেই আমি সাথে আছি। এই গ্রুপের সাথে থেকে আমার পণ্যের প্রচার খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও আমাদের কে অনেক সুযোগ সুবিধা, ট্রেনিং এর মাধ্যমে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সহযোগিতা করেছে।

উদ্যোক্তা জার্নাল/মাসুদুজ্জামান রাসেল

দেশ বিদেশের মানুষের মাঝে দেশীয় পণ্য ছড়িয়ে দিতে চান আফরিন মমতাজ

Previous article

আমি স্বপ্ন দেখি একটা চেইনশপের : নাজনীন সুলতানা রিমি

Next article

You may also like

1 Comment

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *