জাতীয়রাজনীতিশীর্ষ সংবাদ

বিমানের সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তি শিক্ষা রপ্ত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

0
image 31697 1645615988

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবার গুণগত মান উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে অন্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং নতুন প্রযুক্তি শিক্ষা ও গ্রহণে মনোযোগী হবার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি শেখা এবং সেটাকে নিয়ে আসা এবং কার্যকর করার দিকে আমাদের আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যাতে আমাদের আর অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে না হয়। এতে আমাদের অনেক বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হয়।’

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২: প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে আরো বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং দক্ষ জনবল দ্বারা অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার রিপ্লেসমেন্ট এবং বোয়িং ৭৮৭ এর সি-চেক কার্যক্রম বিমানই সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বলাকা ভবনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
অতীতে দুরাবস্থা থাকলেও বর্তমানে একটি দক্ষ এবং অত্যন্ত কার্যকর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সততা এবং দক্ষতার সঙ্গে যেন গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করতে পারে সেদিকে নজর  দেওয়ার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন। এ জন্য প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় লোকবল যেমন দরকার তেমনি যত দ্রুত সম্ভব ইউনিটটা তৈরি করা দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সরকার প্রধান বিমান কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে বলেন, ‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দিকে আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা চাই আমাদের কার্গো হ্যান্ডেলিং এবং বিমান হ্যান্ডেলিং সবকিছু খুব আন্তর্জাতিক মানের হোক। যাত্রীরা যেন কষ্ট না পায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। তাহলে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করা যাবে।’

তিনি বলেন, আমাদের কাস্টমস সিস্টেমটাও সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করতে হবে। কারণ, মানুষ যখন বিদেশ থেকে আসে, হয়তো কিছু পণ্য ক্রয় করে নিয়ে আসতে চায়। কাজেই, তারা যেন কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হয। যদি পুরো ডিজিটালাইজড হয়ে যায় তাহলে খুব সহজেই যাত্রীসেবা দেয়া সম্ভব হবে। সে বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে।

বিমানের আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনও বক্তৃতা করেন। বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ বিমানের অতীত এবং বর্তমান কর্মকান্ড নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রায় ১ কোটির মতো প্রবাসী আছে। তারা বিভিন্ন সময়ে ছুটিতে আসেন। তারা এসে যেন বিমান বন্দরে হয়রানির শিকার না হন। তাদের যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

সরকার প্রধান বলেন, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে নতুন টার্মিনাল ভবনটি হয়ে গেলে আমাদের বিমানের দক্ষতা আরো বাড়বে। করোনা মহামারির মধ্যেও এর কাজ বন্ধ হয়নি, অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া, একেবারে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন নতুন র‌্যাডার স্থাপন করার পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। যেটা আমাদের আকাশ সীমায় চলাচলকারী সকল বিমানের জন্য সুবিধাজনক এবং লাভজনক হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আগামী মার্চ ২০২২-এর প্রথম সপ্তাহ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিশ্বনন্দিত এয়ারলাইন্স সেবা প্রযুক্তি তথা পিএসএস (প্যাসেঞ্জার সার্ভিস সিস্টেম) এর মাধ্যমে অনলাইন টিকেটিং, রিজারভেশন, বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পূর্বে চেক-ইনসহ অত্যাধুনিক সেবা গ্রহণের পথ উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এতে আমাদের সুনাম বাড়বে।

বাংলাদেশ বিমানের রুট আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল রুটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়ায় আমাদের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষা এবং যোগাযোগ সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা বৃদ্ধির বিষয়েও গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিবেশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ আরো বাড়ানো দরকার। ঢাকা-মালদ্বীপ বেসরকারিভাবে ফ্লাইট চালু হয়েছে। বিমানও যেন ফ্লাইট চালু করতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

সব জায়গার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু এবং কার্গো পরিবহনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বিমানের নিজস্ব কার্গো বোয়িং রাখার প্রয়োজনীয়তারও উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বিমানের নিজস্ব পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা থাকলে বিমানই লাভবান হবে। সে ক্ষেত্রে অন্তত দু’টি কার্গো বিমান ক্রয় করা একান্তভাবে জরুরী বলে মত দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি তাঁর সরকারের সময়ে দেশের পরিবহন বিমান খাতে এক ঝাঁক অত্যাধুনিক বিমান সংযোজন এবং অতীতের সরকারগুলোর সময়কার বিমানের দুরাবস্থার কথাও তুলে ধরেন।

বিএনপি-জামাত জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমানকে পরিণত করে দুর্নীতি আর লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে। তারা নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, ফ্রাংকফুর্ট, মুম্বাই, নারিতা এবং ইয়াঙ্গুন রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। চরম লোকসান আর অব্যবস্থাপনায় বিমান মুখ থুবড়ে পড়ে। তখন বিমানে উইন্ডো সিটে বসলে উপর দিয়ে এসির পানি পড়তো, ছিল না কোন বিনোদন ব্যবস্থা। যাকে প্রধানমন্ত্রী ‘জরাজীর্ণ ঝরঝরে বিমান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

বিমানের সুবর্ণ জয়ন্তীতে স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী

Previous article

বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে এক্সপো ২০২০ দুবাইয়ে এফবিসিসিআই’র প্রতিনিধিদলের যাত্রা

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *