উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

বিশ্ব দরবারে দেশীয় পণ্য তুলে ধরতে চান সামিহা

1
Untitled design 3

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন জারিন সালসাবিল সামিহা। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আমি জারিন সালসাবিল সামিহা, কুষ্টিয়ার মেয়ে। ঢাকাতেই বেড়ে ওঠা। ছোট থেকেই আমি অন্যের থেকে চেয়ে নিতে পারতাম না। অনেক লজ্জা লাগতো বাবা-মা’র থেকেও নিতে। তাই স্কুলজীবন থেকেই আমি আমার শখগুলো নিজে মেটাতাম, আমার রিকশাভাড়া ও টিফিন এর টাকা জমিয়ে। আর জমাতাম বলে আব্বু টাকা একটু বেশি দিতো। ছোটকাল থেকেই দেশীয় পণ্যের প্রতি মানুষের অনাগ্রহ আমার অপছন্দ ছিলো। তাই ইচ্ছা ও স্বপ্ন ছিলো দেশীয় পণ্য নিয়ে কিছু করবো। পরবর্তীতে এই রিকশাভাড়া, টিফিন এর টাকা ও ঈদের সালামির জমানো টাকা টাই মূলধন হয়ে যায়।

আমি বর্তমানে দেশীয় শাড়ি ও কামিজ নিয়ে কাজ করছি। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম “Aharsi : আহর্সি”। দেশীয় মানসম্পন্ন পোশাকে ব্লক-বাটিক ও এমব্রয়ডারি করিয়ে উপস্থাপন করছি। এখন “আহর্সি” সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক একটি শপ।

আমি এসএসসি পরীক্ষার পরপরই পুরোদমে ২০২০ সালে কাঠের গহনা দিয়ে অনলাইন বিজনেস শুরু করি। পরীক্ষা শেষের পরের দিনই আব্বুর সাথে গিয়ে কাঁচামাল সংগ্রহ করি। এরপর করোনা আসলো, আমার বিজনেস নিয়ে কোনো আশা ছিলো না। কিন্ত কোভিড আমার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হলো।

করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে আমি ঐ সময়ে গহনা তৈরি করতাম। অনলাইন মার্কেটিং বোঝার চেষ্টা করতাম, পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং করতাম, গ্রুপ-নেটে দেশীয় পণ্য নিয়ে রিসার্চ করতাম! তখন মূলধন ছিলো ১০/১২ হাজার টাকা মতো।

আমার মতে একজন উদোক্তা হতে দরকার আত্মবিশ্বাস, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, সৃজনশীলতা, পরিশ্রমী ও হার না মানা মনোভাব। উদ্যোক্তা মানেই নতুনত্ব, প্রতিনিয়ত নতুনত্ব নিয়ে ভাবতে হবে।

আমার বিজনেসের সকল কাজ আমি একাই করছি। আমার ৭ জন সাপ্লাইয়ার এবং ৩ জন ব্লক ও এমব্রয়ডারির কারিগর আছে ।

আমি এখনও স্টুডেন্ট। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের হাত খরচা ও একটি নিজের পরিচয়ের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। আমি স্বাধীনচেতা, অন্যের অধীনে কাজ করাটা আমার পছন্দ নয় । স্বামী/বাবার পরিচয়টাই কখনোই আমার পরিচয় হতে পারেনা। আমি নিজের খরচ নিজে বহন করতে পছন্দ করি । পড়াশোনা শেষ করে বিজনেস শুরু করলে তা প্রতিষ্ঠা করতে আরো ৫ বছর লাগবে। এজন্যই মূলত ছাত্রজীবন থেকে একটু একটু করে এগোনোর চেষ্টা।

“আহর্সি” অনলাইন ভিত্তিক দেশীয় পণ্যের একটা ব্র্যান্ড। কাঠের গহনা দিয়ে পথচলা শুরু হয়, এরপর আস্তে আস্তে অনেক আইটেম যুক্ত হয়। এখন “আহর্সি” দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করছে। আমি এখন আমার ডিজাইনের কাঠের গহনা আনছি। আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ নিজস্ব পণ্য নিয়ে কাজ করবো। এক টুকরো কাপড়কে ফিউশন করে ভিন্ন করতে পছন্দ করি। দেশীয় মানসম্পন্ন শাড়িতে ব্লক-বাটিক, এমব্রয়ডারি করে ইউনিক করে উপস্থাপন করছি।

Untitled design 1 1
পণ্যের কোয়ালিটিতে আমি আপোষহীন। কোয়ালিটি ও ক্রেতাদের আরাম এর দিকটা আমি সবসময়ই মাথাতে রাখি। আমি সবসময় চেষ্টা করি একদম রিজনেবল দামে বিক্রি করার। যে পণ্য আমি নিজের জন্য কিনবো না তা কখনোই পেইজ এ রাখিনা। প্রতিটা উৎসব ও বিশেষ দিনে “আহর্সি” এখন আপুদের সঙ্গী।

আমাদের চারপাশে সব ধরণের মানসিকতার মানুষ রয়েছে। সবার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। অনেকে মনে করেন জীবনের সফলতা মানেই সরকারি চাকরি না হলে জীবন বৃথা। নারীর কর্মসংস্থান কে বেশিরভাগ মানুষ পজিটিভ ভাবেই নিতে পারেনা। শুরুর দিকে আমাকেও অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। এখন আস্তে আস্তে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে, মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের কাজ করা সহজ হচ্ছে।

অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। প্রথম টা ছিলো পরিবার থেকে। এরপর ২০২১ এ এসে পেইজ রেস্ট্রিকটেড হয়ে রিচ ও সেল কমে যায়, তখন নতুন করে পেইজ খুলি। পরিচিত অনেকে যাদের আমি আপন ভাবতাম তারা পিঠ দেখায়। আমি যাদের জন্য করেছি চরম বিপদে, তারা কেউই ছিলো না পাশে। তাতে আমি ভেঙে পড়িনি মোটেও বরং মানুষ চিনে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, শক্ত হয়েছি। দ্বিতীয়বার ঘুরে দাঁড়ানোর সময় নাফিজা আপু (মডেল) ও আমার মামা প্রমোটর হয়ে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আপু-মামা সাথে না থাকলে হয়তো আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হতো। আমি আসলেই অনেক বেশি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি।

আরও পড়ুন: নিজেই নিজেকে উৎসাহ জোগান শাহিনা সুলতানা ছন্দা

শুরু থেকে সেল আলহামদুলিল্লাহ ভালো ছিলো। কিন্ত পেইজে সমস্যা হবার ফলে আমাকে আবারো নতুন করে সব শুরু করতে হয়। তখন একদমই অর্ডার আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। দেশের মধ্যে কিন্ত তখন ‘আদি’ এর মাধ্যমে দেশের বাইরে থেকে অর্ডার এসেছে। আর বর্তমানে আলহামদুলিল্লাহ আবারো অনেক সাড়া পাচ্ছি। আমার ২০২০ এর ক্রেতা এখনও কিনছেন। আলহামদুলিল্লাহ ৯৫% কাস্টমারই রিপিটেড। ক্রেতাদের থেকে ক্রেতা আসছে।

সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি এখনো। সত্যি বলতে এখন চাইও না, নিজ পুঁজিতে নিজের যোগ্যতায় করতে চাই।

আমার প্রতিষ্ঠান আমাকে নিজস্ব পরিচয় ও আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। মালয়েশিয়া, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, সৌদি আরব, জাপানসহ দেশের বাইরের অনেক দেশ থেকে ১০৬+ অর্ডার সম্পন্ন হয়েছে। আমি বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে পেরেছি। দেশীয় শাড়ি ও পোশাকের প্রতি মানুষকে আবার আকর্ষিত করতে পেরেছি, তারা নিয়মিত কিনছেন।

আমি চাই “আহর্সি”কে দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ড করে দেশের বাইরে উপস্থাপন করতে। বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশ ও দেশের পণ্য কে তুলে ধরতে চাই। আগামী পাঁচ বছর পরে আমি চাই “আহর্সি”র আউটলেট করতে। দেশের প্রতিটা মানুষের কাছে যেনো “আহর্সি” আস্থার একটা জায়গা হয় ও দেশের বাইরের পরিধিটা আরো বাড়াতে চাই।

২২ ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টিতে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড উইন্ডিজ ক্রিকেটারের

Previous article

বধূবেশে নজর কাড়লেন নায়িকা রোজিনা

Next article

You may also like

1 Comment

  1. […] আরও পড়ুন : বিশ্ব দরবারে দেশীয় পণ্য তুলে ধরতে চান … […]

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *