জীবনযাপন

ব্রিটেনে মৃত স্বজনের সঙ্গে ছবি তোলার প্রথা আভিজাত্যের প্রতীক

0
ছবি তোলা

মৃত স্বজনদের স্মরণে নানা আয়োজন বা রীতি মানা হয়। একেক এলাকায় রীতির পার্থক্যও অনেক। অদ্ভুত মনে হলেও সেসময় বা সেই সমাজের জন্য এটা স্বাভাবিক।

যেমন, ১৮৩৭ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬৫ বছর ইংল্যান্ড শাসন করেছেন রানি ভিক্টোরিয়া। রানির স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর রানি আর কখনো রঙিন পোশাক পরেননি। শুরুতে শোক পালনের জন্যই কালো পোশাক গায়ে জড়িয়েছিলেন। স্বামীর মৃত্যুতে তিনি এতোটাই শোকাহত ছিলেন যে, বাকি জীবন আর কখনো রঙিন পোশাক পরেননি।

তখনকার ব্রিটিশদের কাছে এই ঘটনাটি অত্যন্ত শোচনীয় ও একই সঙ্গে আবেগময় এক ঘটনা হিসেবে পরিচিত পায়। মানুষের মাঝে তাই প্রিয়জনের প্রতি শোক প্রকাশের মাধ্যমটাও গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করলো। তখন থেকে স্বজন বা পরিচিত কেউ মারা গেলে কালো পোশাক পরার চল শুরু হয় ব্রিটেনে।

একই সময় থেকেই মৃতের সঙ্গে ছবি তোলা বা ডেথ ফটোগ্রাফির চল শুরু হয়। রানির স্বামীর সঙ্গে তার অনেক ছবি তুলে রাখা হয়েছিল স্মৃতি ধরে রাখতে। সেই কাজটি সবার কাছেই খুব ভালো উপায় বলেই মনে হয়েছিল। ধীরে ধীরে মৃত স্বজনের সঙ্গে ছবি তুলে রাখতে শুরু করেন ইংল্যান্ডবাসী।

এর শুরুটা হয়েছিল ১৮৫০ ও ৬০ এর দশকের অনেক আগেই শুরু হয়েছিল মৃতের ছবি তোলা। সেটি ছিল পুলিশ কেইসের জন্য। সে ছবিগুলো আদালতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। তবে সেই ছবি তোলাটাই যখন ব্রিটিশরা নিজেদের শোক প্রকাশের মাধ্যম বলে বেছে নেয়। তখন অন্যরা একটু অবাকই হয়েছিল। তবে এই সংস্কৃতি আয়ত্ত করে ফেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক দেশ।

বেশিরভাগ ছবির ক্ষেত্রেই মৃতদেহগুলোকে সুন্দরভাবে সাজানো হতো। যগি কোনো শিশু হতো তাহলে খেলনা দিয়ে ঘিরে দেওয়া হতো তাকে। মৃতের ছবি তোলার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সাবধানের সঙ্গে করা হতো। মৃতের ফটোগ্রাফি মৃতের বাড়িতে বা মৃতের কক্ষেও করা হতো। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক মৃতদের ছবি বেশিরভাগই কফিনে শোয়ানো অবস্থায় তোলা হতো।

 

মৃতের ছবিতে আরও সৃজনশীলতা যোগ করতে কখনো কখনো মৃতকে চেয়ারে বসাতো। আবার অনেকে মৃতের ফটোশেসনের সময় মৃতের হাতে বই ধরিয়ে দিতো। বেশিরভাগ সময়ই মৃতের ছবি তোলার সময় ফটোগ্রাফাররা এমন কায়দা ও পদ্ধতি অবলম্বন করে ছবি তুলতেন যেনো মৃত ব্যক্তিকে জীবিত মনে হয়। আবার মৃতের ছবি তোলার পর যদি তার চোখ বন্ধ থাকতো তাহলে ছবিকে জীবন্ত করতে ফটোগ্রাফাররা নতুন চোখ বসিয়ে দিতেন।

১৮৬০ এর দশকে ইংল্যান্ডে ডিপথেরিয়া, টাইফাস এবং কলেরায় অসংখ্য মানুষ মারা যায়। বিশেষ করে শিশু মৃত্যু হার ছিল অনেক বেশি। ফলে বেশিরভাগ শিশুরাই কৈশোরে পৌছানোর আগে মারা যেতো। শিশুদের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে বাবা-মায়েরা তাদের ছবি তুলে রাখতে। অন্য সন্তানদের সঙ্গে তাকে দাঁড় করিয়ে কিংবা শুইয়ে ছবি তুলে রাখতেন।

প্রায় সব পরিবারই তাদের মৃত সদস্যের সঙ্গে ছবি তুলতেন। তাদের মনে হতো এই মানুষটার প্রতিকৃতি না থাকলে হয়তো মানুষটা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে। একপ্রকার নিজেদের পরিবারের মৃত সদস্যকে নিজেদের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে তারা ছবি তুলতো।

উন্নত বিশ্বে এই প্রথাকে অসুস্থ ও বর্বর প্রথা মনে করতে শুরু করায় ১৯৩০ এর দশক থেকে মৃতের ছবি তোলার প্রথা বন্ধ হতে শুরু করে।

আরও পড়ুনঃ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গভীর মহাকাশে আলোর সবচেয়ে উজ্জ্বল ঝলকানি দেখে বিস্মিত

কাজ শেষ হলেই মেরে ফেলা হতো মমিকর্মীদের

Previous article

প্লেন চালিয়ে ৬ মাসে ৫২ দেশ ভ্রমণ

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *