উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন নিশি আক্তার By নিজস্ব প্রতিবেদক June 28, 20221 ShareTweet 1 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন নিশি আক্তার। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প। আসসালামু আলাইকুম। আমি নিশি আক্তার, ঢাকার মেয়ে। আমার বেড়ে উঠা ঢকার হাজারীবাগে। আমি খুব শান্তস্বভাবের মেয়ে ছিলাম, তাই বাবা আমাকে গন্ডির বাইরে পড়াশোনা করতে দেয়নি। আমি এইচ.এস.সি পাস করি অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইকোনমিকসে স্নাতক সম্পন্ন করি। অনার্স প্রথম বর্ষ থাকা অবস্থায় আমার বিয়ে হয়ে যায়। এরপর থেকেই আমার জার্নি আরম্ভ হয়।পরাশোনা, সংসার, তারপর টিউশন করে দিন শেষ হতো। পড়াশোনা শেষ করলাম, এরপর অনেক ইচ্ছে ছিলো চাকরি করবো। চাকরির পরীক্ষা দেয়া শুরু করলাম, ঠিক তখনই কনসিভ করলাম। মেয়ের জন্ম হয় এবং মেয়ে কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাই । আমার খুব ইচ্ছে ছিলো কিছু একটা করার, কিন্তু কি করবো সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমার স্বামী অনেক ভালো মানুষ সে আমাকে কোনো সময় কোনো কিছুর অভাবে রাখেনি। করোনাকালীন সময় সে আমাকে চেস্টা করেছে সবকিছু দেয়ার, কিন্তু আমার ভালো লাগতো না তার কাছ থেকে বার বার চেয়ে নেয়া। তাই আমি মন স্থির করলাম, আমি কিছু একটা করতে চাই। সবাই বলতো আমার হাতের রান্না নাকি অনেক মজা, তাই আল্লাহর রহমতে আমি রান্না নিয়ে কিছু করার চেষ্টা করলাম। প্রথমদিকে অফলাইনে শুরু করলাম সবাই বলতো রান্না অনেক মজা হয় এটা নিয়ে যাতে অনলাইনে বিজনেস শুরু করি। আমি ভয় পেতাম যদি ভালো না করতে পারি। মনে সাহস নিয়ে অনলাইনে শুরু করলাম। আমার উদ্যোগের নাম “নিশির রান্না ঘর”। আমি ফুড আইটেম নিয়ে কাজ শুরু করলাম। সব ধরনের খাবার ডেলিভারি দিতাম। আমার সিগনেচার আইটেম হলো মালাই চপ ও মালাই জর্দা। এরপর বাটিক ড্রেস ও শাড়ি নিয়ে কাজ করছি। শুরুটা ২০২০ সালের করোনাকালীন সময়ে। আমি অনেক কস্ট করে পড়াশোনা করেছি। সংসারে খুব মনোযোগী ছিলাম, কিন্তু সবাই যখন বলতো আমি হাউজ ওয়াইফ, সারাদিন কোনো কাজ করি না তখন আমার মনে ভীষণ কস্ট লাগতো। মনে হতো আমার কাজের কোনো মূল্য নেই। সত্যি বলতে আমি কারো কাছ থেকে কোনোরকম অনুপ্রেরণা পাইনি, কারন সবাই বলতো পড়াশোনা করে আমি কেনো অনলাইন বিজনেস করবো। আমার জুনিয়র এক বোনের মাধ্যমে Women and e-Commerce Trust (WE) এ জয়েন হই। সেখান থেকে আমি সবার পোস্ট পরতে শুরু করলাম, সবার গল্প পরতাম আর ভাবতাম সবাই পারলে আমি কেনো পারবো না? আমাকেও পারতে হবে। আমার মূলধন ছিলো ৪৩০ টাকা। এই টাকাটা আমি আমার বড় ভাই এর কাছ থেকে ধার নিয়ে শুরু করেছিলাম। তার জন্যই আজ আমি উদ্যোক্তা। তার ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। একজন উদ্যোক্তা হতে হলে সবার আগে পরিশ্রমী এবং বিচক্ষণ হতে হবে। সবসময় নিজের লক্ষ্যের দিকে স্থির থাকতে হবে। আমার প্রতিষ্ঠানের আমিই কর্মী, আমিই মালিক। আমি একহাতে সব কাজ করি। আমার কাছে মনে হয়, পড়াশোনা কি শুধু চাকরির জন্য? আমি বলবো না। পড়াশোনা করে আমরা ব্যবসাও করতে পারি, আর চাকরি করলে অন্যের অধীনে করতে হবে ৯ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে ব্যবসার করলে আমি আমার নিজের মতো পরিচালনা করতে পারি। আমি একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। সবধরনের হোমমেইড ফুড নিয়ে কাজ করছি। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অভিযোগ আসেনি। কাস্টমারের কাছে থেকে অনেক ভালো রেসপন্স পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। আমি বলবো বর্তমানে নারীদের অনেক সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেটাকে কাজে লাগিয়ে নারীদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের ‘উই’ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপু আমাদের জন্য যে প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেছে, সেটা নিয়ে আমরা নারীরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো। আপু আমাদের জন্য নানা রকমের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন স্বল্প মূল্যে, যাতে করে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারি। ‘উই’ গ্রুপের সুবাদে অনেক নারী এখন ঘরে বসে কাজ করছে, নিজেকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলছে। কাজের অনেক সুযোগ থাকা সত্বেও নারীরা এই প্ল্যাটফর্মে আসতে কিছুটা দ্বিধাবোধ করে। সামাজিকভাবে এগিয়ে আসতে পারছে না। আমার মনে হয় নারীদের এগিয়ে আসা উচিত। আলহামদুলিল্লাহ আমার মাসিক আয় মোটামুটি ভালো, আমি সন্তুষ্ট। কাস্টমার আমার উপর আস্থা রাখে এটা অনেক বড় পাওয়া আমার জন্য। আল্লাহর ইচ্ছে থাকলে ভবিষ্যতের জন্য কিছু পরিকল্পনা করেছি, সেটা বাস্তবায়ন করতে চাই ইনশাআল্লাহ। আমি রিপিট কাস্টমার বাড়াতে কাজ করছি, যাতে তারাই আমার জন্য ভালো রিভিউ দিতে পারে। আগামী ৫ বছর পর ভালো একটা অবস্থানে দেখতে চাই নিজেকে। নারীদের নিয়ে কিছু করার ইচ্ছে আছে মনে। আল্লাহ যদি সহায় হোন ইনশাআল্লাহ সেটা পূরন করবো।
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231560 views