উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তামতামত ভাইরাল কেক পট্টির আড়ালে লুকানো স্বাস্থ্যঝুঁকি, নজর দিতে হবে ক্রেতা ও উদ্যোক্তা দুই পক্ষকে : এলিন মাহবুব By নিজস্ব প্রতিবেদক November 6, 20251 ShareTweet 1 আইসিটি ভবনের সামনের পথটুকুতে বিকেলের ভিড়। অফিস ফেরত মানুষ, তরুণ-তরুণীরা, কেউ হাঁটছে, কেউ দাঁড়িয়ে আছে কৌতূহলভরে—সামনে সাজানো ছোট টেবিলে নানা রঙের কেক। চকোলেট, রেড ভেলভেট, কাপকেক, ব্রাউনি—সবই নিজের হাতে বানানো বলে দাবি করছে উদ্যোক্তারা। তাদের চোখে আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক—“আমরা নিজেরা বানাচ্ছি, নিজেরাই বিক্রি করছি।” তাদের এই সাহস ও উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এই কেকগুলো কতটা স্বাস্থ্যসম্মত? আর আমরা ক্রেতারা, সেই মিষ্টি হাসির পেছনের বাস্তবতা কতটা ভাবি? উদ্যোক্তার স্বপ্ন ও বাস্তবতা: এই উদ্যোক্তারা হয়তো কোনো চাকরি পাচ্ছে না, কিংবা পেতে চাইলেও নিজেদের কিছু করার তাগিদে রাস্তায় নেমেছে। ছোট পরিসরে শুরু—নিজের বাসায় বানানো কেক, বন্ধুদের সহায়তায় বিক্রি। এটাই তাদের উদ্যোক্তা জীবনের প্রথম ধাপ। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। তারা জানে না “ফুড হাইজিন সার্টিফিকেট”, “লাইসেন্স” বা “প্রসেসিং স্ট্যান্ডার্ড” কিভাবে পাওয়া যায়। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছে—এটাই উদ্যোগের সৌন্দর্য। কিন্তু উদ্যোগ যদি টিকে থাকতে চায়, তাহলে শুধু স্বপ্ন নয়, নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণও প্রয়োজন। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার প্রশ্ন: ফুটপাতে বিক্রি হওয়া খাবারে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি—পরিবেশ ও সংরক্ষণ। কেক বা ডেজার্ট এমন খাবার যা তাপমাত্রা, ধুলো, বাতাসে খুব দ্রুত নষ্ট হতে পারে। খোলা পরিবেশে বিক্রি মানে সেখানে ধুলো-বালি, মাছি, দূষিত বায়ু সহজেই লেগে যায়। তারপরও যদি এসব খাবার আমরা চোখ বন্ধ করে খাই, তাহলে ঝুঁকিটা আমাদেরই। উদ্যোক্তার স্বপ্নকে টেকসই করতে হলে অবশ্যই আইনি কাঠামোর আওতায় আসতে হবে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, খাদ্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে। ফুটপাতের উদ্যোক্তাদের এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা না থাকা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক উদাহরণ: সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো স্ট্রিট ফুড বিক্রেতাদের জন্য লাইসেন্সিং, ফুড হ্যান্ডেলিং কোর্স এবং নির্দিষ্ট ‘হকার সেন্টার’ বাধ্যতামূলক করেছে। বাংলাদেশকে এই মডেল অনুসরণ করতে হবে। প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন: নিউইয়র্কের মতো বড় শহরে ‘ফুড প্রোটেকশন সার্টিফিকেট’ ছাড়া কেউ খাবার বিক্রি করতে পারে না। আমাদের দেশেও স্ট্রিট ফুড উদ্যোক্তাদের জন্য বাধ্যতামূলক খাদ্য নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। আরও পড়ুনঃ নিরাপদ থাকতে গিয়ে আপনি কি নিজের স্বপ্নটাই হারিয়েছেন : এলিন মাহবুব ক্রেতা হিসেবে আমাদের ভূমিকা: প্রশ্ন করা: শুধুমাত্র “কোথায় বানানো হয়েছে” নয়, বরং “আপনাদের কি “বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের” রেজিস্ট্রেশন আছে?” বা “কোন প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করেছেন?” এই ধরনের প্রশ্ন করে পণ্যের মান নিয়ে একটি সচেতন চাহিদা তৈরি করা। নিরাপদ প্যাকেজিংয়ে জোর: প্লাস্টিকবিহীন, সিল করা এবং স্বাস্থ্যসম্মত মোড়কের জন্য জোরালো দাবি জানানো। স্বাস্থ্যকর বিকল্পের কদর: যেসব উদ্যোক্তা ভালো মানের উপাদান (যেমন: ব্রাউন সুগার, অলিভ অয়েল, প্রাকৃতিক রং) ব্যবহার করছেন, তাদের পণ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া। উদ্যোক্তাদের সহায়তা দরকার: এই উদ্যোক্তারা যদি প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও নীতিগত সহায়তা পায়—তাদের ছোট ব্যবসা একদিন ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে পারে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত — “স্ট্রিট ফুড উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি” চালু করা। তাদেরকে খাদ্য নিরাপত্তা, প্যাকেজিং, ও ডিজিটাল মার্কেটিং শেখানো। সহজ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ও ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা দেওয়া। এই সহায়তা পেলে, তারা শুধু ফুটপাতে নয়-অনলাইন ও বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্মেও তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবে। স্কেলআপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: আজ যারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছে, কাল তারাই অনলাইন ব্র্যান্ডের মালিক হতে পারে—যদি তারা শেখে কিভাবে ব্যবসা টেকসইভাবে চালাতে হয়। তারা চাইলে ফুড ডেলিভারি অ্যাপের সাথে চুক্তি করতে পারে,অনলাইন প্রি-অর্ডার সিস্টেম চালু করতে পারে,কিংবা ছোট ক্লাউড কিচেন মডেল তৈরি করতে পারে। এইভাবে তারা তাদের উদ্যোগকে অফলাইন থেকে অনলাইনে স্কেলআপ করতে পারবে। আজ যারা ফুটপাতে মিষ্টি কেক বিক্রি করছে, তাদের এই উদ্যোগকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। এই স্বপ্নকে সম্মান জানাতে এবং জনস্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে হলে, তাদের কেবলমাত্র উৎসাহ নয়, বরং সুরক্ষিত ও টেকসই উপায়ে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, আইনি কাঠামো ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। উদ্যোক্তা হওয়া মানে শুধু মুনাফা অর্জন নয়—বরং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব নেওয়াও শেখা। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এই মিষ্টি উদ্যোগগুলো একদিন নিরাপদ ও আন্তর্জাতিক মানের ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এলিন মাহবুব
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদ, কিন্তু অনলাইন হ্যারাসমেন্ট বাঁধা কেন : এলিন মাহবুব 3 days ago0
ডিজিটাল বনাম ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং, উদ্যোক্তাদের জন্য কোনটা বেশি কার্যকর : এলিন মাহবুব October 8, 2025105 views
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231909 views