কৃষি

মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে মেহেরপুরের চাষীদের

1
law

মেহেরপুর জেলায় কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে মাচা পদ্ধতিতে বেড়েছে লাউয়ের চাষ। ৬ হাজার টন লাউ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে লাউচাষীরা। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদনের এক তৃতীয়ংশ লাউ দেশের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবে। লাভজনক হওয়াতে এবার লাউচাষ বেড়েছে যথেষ্ট। লাউচাষে অনেক চাষীর ভাগ্য বদলেছে।

লাউ শীতকালীণ সবজি হলেও সারাবছরই লাউয়ের চাষ করছেন জেলার চাষীরা। মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ করায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। কীটনাশক প্রয়োগ না করে লাউয়ের আবাদ করায় জেলার উৎপাদিত লাউয়ের চাহিদা এখন দেশজুড়ে। তুলনামুলক শ্রম ও ব্যয় কম হওয়ায় মাচা পদ্ধতিতে বেশ জনপ্রিয়। বেশি ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি লাউ চাষীরা। লাউসহ নতুন নতুন সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ।

সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের লাউ চাষি আনসার আলী বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমি পাট ও ধানের চাষ করতাম। গত কয়েকবছর পাটচাষে লোকসানে জর্জরিত হয়েছি। ধানের আবাদেও সার, ও সেচ খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। এ বছর দুই বিঘা জমিতে মাচা পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের লাউয়ের আবাদ করেছি। লাউ আবাদে সেচ ও শ্রমিক খরচ কম। পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন নেই। ফলে কীটনাশক ব্যবহার না হওয়ায় মানুষ বিষমুক্ত সবজি পাচ্ছে। তিনি আরো জানান জমি থেকে প্রতি সপ্তাতে ৫শ থেকে ১ হাজার পিস লাউ বিক্রি করছেন। ইতিমধ্যে লক্ষাধিক টাকার লাউ বিক্রি হয়েছে। তিনি আশা করছেন খরচ বাদ দিয়ে দুই লক্ষ টাকার লাউ বিক্রি হবে।

নওপাড়া গ্রামের লাউ চাষি হায়দার আলী জানান, এক বিঘা জমিতে মাচা পদ্ধতিতে মার্টিনা জাতের লাউ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। লাউয়ের উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে। তবে দাম কখনও কম আবার কখনও বাড়ছে। তবুও তিনি এক বিঘা জমিতে লক্ষাধিক টাকা লাভবান হবেন বলে প্রত্যাশা করছেন।

এছাড়া ঝাউবাড়িয়া গ্রামের জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের জেলায় মুলত দুই জাতের লাউয়ের আবাদ হয়। আমি এক বিঘা জমিতে লম্বা হাইব্রিড জাতের ও এক বিঘায় গোলাকার দেশীয় জাতের লাউয়ের চাষ করেছি। লম্বা জাতের লাউয়ের চাহিদা একটু কম। গোলাকার দেশীয় জাতের লাউয়ের চাহিদা অনেক ভালো। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকার ব্যবসায়ীরা আমাদের জমি থেকে লাউ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করি লাভবান হবো।

আরও পড়ুনঃ বল সুন্দরী কুল বরইয়ে আগ্রহী টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর কৃষকরা

মেহেরপুর জেলার দারিয়াপুর, আনন্দবাস, কালিগাংনী, ঝাউবাড়িয়া, গাংনী উপজেলার সাহারবাটি, কাজিপুর, হাড়াভাঙ্গাসহ বেশ কিছু মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, উর্বর ফসলি জমিতে পরিকল্পিতভাবে কৃষক মাচায় লাউ চাষ করেছেন। উন্নত জাতের লাউ চাষ করায় প্রতিটি মাচায় ডগায় ডগায় ঝুলে আছে লাউ। বর্তমানে বাজারে একটি লাউ প্রকার ভেদে ১৫ টাকা হতে ২০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দাম ভালো পেয়ে খুশি কৃষক।

সাহাবাটি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী রাজন, মিন্টু, সামাউল জানান, প্রতিদিনই কৃষকরা লাউ বিক্রি করছেন তাদের আড়তে। আমরা পাইকারি কিনে ঢাকা, সিলেট,বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের বড়বড় শহরে বিক্রি করি। আমাদের জেলার উৎপাদিত লাউ দেখতে অনেক সুন্দর মসৃৃণ ও সু-স্বাদু হওয়ায় চাহিদা ভালো। একদিকে কৃষকরা যেমন উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন তেমনি বিক্রি করেও আমরা লাভবান হচ্ছি। তাছাড়া যেসকল এলাকায় সবজি আবাদ হয়না সে এলাকার মানুষের সবজির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন- অন্যান্য পুষ্টিকর সবজির মধ্যে অন্যতম লাউ। লাউ শুধু তরকারি হিসেবে নয়, বিভিন্ন অনষ্ঠানে শসার বিকল্প হিসেবে লাউয়ের সালাদ ব্যবহার হয়ে থাকে। লাউয়ের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে তারমধ্যে মেহেরপুর অঞ্চলে মার্টিনা, শীতালাউ ও মার্শাল সুপার জাতের লাউ চাষ হয়ে থাকে।

আগে মানুষ মাটিতে লাউয়ের আবাদ করতো। তাতে ফলন ও রোগবালাই বেশি হতো। আমরা কৃষকদের মাঠ দিবসের মাধ্যমে মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষের চাষ করাচ্ছি। তাতে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। জেলায় এ বছর ২৩০ হেক্টর জমিতে লাউয়ের চাষ হয়েছে। ৬ হাজার টন লাউ উৎপাদন হবে। যা জেলার চাহিদা পূরণ করেও এক তৃতীয়াংশ লাউ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হবে।

শ্রীলংকার বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

Previous article

এবার আরব আমিরাতে মঞ্চ মাতাবেন প্রীতম হাসান

Next article

You may also like

1 Comment

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More in কৃষি