উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা মায়ের হাত ধরেই উদ্যোক্তা জীবনে পা রাখলেন জান্নাত মনি By নিজস্ব প্রতিবেদক July 1, 20221 ShareTweet 1 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা জান্নাত মনির সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। আমি জান্নাত মনি। ঢাকায় জন্ম এবং বেড়ে ওঠাও ঢাকায়। আমার শিক্ষা বৃত্তান্ত-স্কুলঃ শেরবাংলা নগর গার্লস হাই স্কুল এন্ড কলেজকলেজঃ হলি ক্রস কলেজইউনিভার্সিটিঃ এসিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ মূলত আমি পড়ালেখা করি। পরিবারের সবাই চায় পড়ালেখা শেষ করে আমি যেনো চাকরি করি। কিন্তু লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি কখনোই বসে থাকতে চাই নি। পরিবার থেকে যতোই আর্থিক সাপোর্ট করুক না কেনো, আমি চেয়েছি নিজে কিছু করতে এবং নিজেই সাবলম্বী হতে। আর এজন্য আমাকে বারবার উৎসাহ দিতেন শুধুমাত্র আমার মা।আমার উদ্যোগের শুরুটা তার হাতেই। দুই বছর ধরে আমার উদ্যোগ জীবনের শুরু আলহামদুলিল্লাহ। এছাড়া আমার সবসময় মনে হয় মেয়েদের আর্থিক অবস্থা যতোই ভালো হোক নিজের কিছু করা উচিত। নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার আনন্দটাই যেনো অন্য রকম । আমি কাজ করছি সব ধরনের অর্গানিক পণ্য নিয়ে ।যেমন- সজনে পাতার গুড়া, নিমের গুড়া ইত্যাদি। সজনে পাতার গুড়া দিয়েই আমি আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছিলাম। আমরা সবাই জানি সজনে পাতার গুনাগুন সমূহ। এছাড়াও মেয়েদের সুতি ড্রেস, কুর্তি নিয়েও আমি কাজ করি। আমার সিগনেচার এবং বেস্ট প্রোডাক্ট যেটা থেকে আমি সবথেকে বেশি সাড়া পেয়েছি আর পাচ্ছি, সেটি হলো ‘জান্নাতস গ্লোরি অর্গানিক ফেসপ্যাক’। যেটা আমার বিজনেসের টার্নিং পয়েন্টই বলা চলে। আমার এ পন্যের অনেক অনেক রিভিউ আছে আলহামদুলিল্লাহ। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম “SanJans lounge” (সানজানস লন্জ)। একদম ঘরে বসেই আমার উদ্যোগ আমি চালিয়ে থাকি অনলাইনের মাধ্যমে এবং কাস্টমারদের সকল সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী আমি সার্ভিস দিয়ে থাকি। ভবিষ্যতে আরো কিছু নতুন নতুন পণ্য যুক্ত করার ইচ্ছা আছে আমার। সেই সাথে ইচ্ছা আছে কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করার। শুরুটা একদমই ভালো ছিলোনা। কারণ তিন ভাইয়ের এক বোন আমি, সবার ছোট। বাবা বেঁচে নেই, মা আছেন। আমার ভাইয়েরা কেউই চাননি আমি একজন উদ্যোক্তা হই। তাদের কথা কিসের অভাবে আমি উদ্যোক্তা হবো বা ব্যবসা করবো? আমার যা দরকার হয় তার সব চাহিদা তারা পূরণ করেন এবং করবেন। তাই তারা কখনোই চায়নি আমি ব্যবসা কিংবা কোনো চাকরি করি। কিন্তু আমি বদ্ধপরিকর ছিলাম এবং সেই সাথে আমার মা আমার সাথে ছিলো বলেই আমি আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করতে পেরেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। শুরুতে আমার ভাইয়ারা রাগ করলেও এখন আমার সফলতায় আমার ভাইয়ারা আমাকে নিয়ে অনেক খুশি। শুরুতে ২০০ টাকা মূলধন নিয়ে আমি আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করি। যেটা ছিলো শুধুমাত্র মরিঙ্গা পাউডারের কৌটাগুলোর দাম। আমার কাছে মনে হয় একজন উদ্যোক্তা হতে সবথেকে আগে যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে প্রবল ইচ্ছাশক্তি, যার বহিঃপ্রকাশ হবে হ্যাঁ আমি পারবো। মানুষ চাইলে সব পারে, আর তাই সকল প্রতিবন্ধকতা কে দূরে সরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেটাই মূখ্য। আরেকটা বিষয় যেটা না বললেই নয় তা হলো সততা। সৎ এবং হালাল উপায়ে ব্যবসা করলে সে ব্যবসায় অবশ্যই রহমত এবং বরকত থাকে। সর্বশেষ যেটা হলো, কিছু কিছু অত্যাবশ্যকীয় ধারণাও জরুরী যা বিজনেস রিলেটেড। আমার উদ্যোগ আমি একাই সামলাই। সেই সাথে আমার হেল্পিং হ্যান্ড শুধুমাত্র আমার মা। আমি মনে করি গ্র্যাজুয়েশন করা অবস্থায় বা শেষ করে চাকরির পিছনে না দৌড়ে নিজের যাই আছে, যতোটুকু আছে তাই দিয়ে কিছু না কিছু শুরু করার। বসে থাকাটা হচ্ছে বোকামি। আমি বলছি না যে সবাইকে ব্যবসায়ীই হতে হবে, কিন্তু ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আপনি, আমি ও আমরা যে স্বাধীনতা পাই বা পাবো তা একজন চাকরিজীবীর থাকেনা বা পায় না। একজন চাকরিজীবী স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে পারে না। বাসায় বসে অনলাইনে বিজনেস করার থেকে সহজ পন্থা আর কি হতে পারে? তাই আমি মনে করি বিজনেসটা একটা মেয়ের জন্য অনেক নিরাপদ যদি তা বাসায় বসে করা যায়। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে আমি আরো নতুন নতুন কিছু পন্য যুক্ত করতে চাই আমার উদ্যোগে, যা একদমই আনকমন হবে। ঠিক আমার ‘জান্নাতস গ্লোরি ফেসপ্যাক’ এর মতো। যার দ্বারা সকলে অনেক উপকৃত হবে এবং শুধু দেশে না দেশের বাইরেও আমার দেশীয় পণ্য বিস্তার লাভ করবে, এটাই আমার স্বপ্ন। আমি মনে করি, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বেস্ট। বর্তমানে নারীরা সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে। সর্বক্ষেত্রে তাদের বিচরণ রয়েছে কম আর বেশী। তাই ব্যবসাক্ষেত্রে নারীরা এখন পুরুষের পাশাপাশি অনেকটা এগিয়ে। পরিবারের সাপোর্ট পেলে নারীরা সামনে আরো অনেক ভালো করবে আমার বিশ্বাস। প্রতিবন্ধকতার অভিজ্ঞতা অনেক তিক্ত। কারণ একটার পর একটা বাধা অতিক্রম করে আমি আজ এ পর্যন্ত এসেছি। নিজের কষ্ট, শ্রম ও সাধনার পর আজ আমি এ অবস্থানে।শুরুতে সেল একদমই কম ছিলো। প্রথম তিন মাস আমার প্রচুর স্ট্রাগল করতে হয়েছিলো। তারপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি আল্লাহর রহমতে। কারণ যারা একবার আমার থেকে পণ্য নিয়েছে সবাই আমার রিপিট কাস্টমার হয়েছে। পণ্যের গুনগত মানের কারণে আমার এই প্রাপ্তি আলহামদুলিল্লাহ। আমার সেবায় কাস্টমাররা অনেক বেশি সন্তুষ্ট, কারণ আমি একটা পণ্য ডেলিভারি দিয়েই ক্ষান্ত হইনা। ঠিকমতো হাতে পেয়েছে কিনা, ব্যবহারবিধি এবং এর পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আমি তাদের খোঁজখবর নিতে থাকি সবসময়। এজন্য আমার কাস্টমাররা আমার প্রতি অনেক বেশি সন্তুষ্ট। এখন পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমি যদি আমার বেস্ট পণ্যের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি এবং এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি ভবিষ্যতে পেতে পারি ইনশাআল্লাহ। আমার প্রতিষ্ঠানের সবথেকে বড় অর্জন বিশ্বস্থতা। ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জনে আমি সক্ষম হয়েছি এবং হচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আমি চাই এখন যেমন আমার পণ্য দেশের বাইরে যায় ১০ ভাগ; পরবর্তীতে যাতে তা ৫০-৬০ ভাগে পৌঁছাতে পারে ইনশাআল্লাহ। দেশসহ দেশের বাইরে আমার এই অর্গানিক পণ্য ছড়িয়ে পড়ুক এটাই চাই। আমি একটা ছোট্ট শপ নিতে চাই, যেটা একদমই আমার অর্গানিক পণ্যের একটি শপ হবে। পাঁচ বছর পর যদি বেঁচে থাকি তাহলে নিজেকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই ইনশাআল্লাহ।
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231560 views