তথ্য ও প্রযুক্তিবিজ্ঞান

মিথ্যা শনাক্তকরণের পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন ইসরাইল

0
isra

ইসরাইলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপক অধ্যাপক হানেইন এবং তার সহযোগী অধ্যাপক দিনো লেভি। তারা লাই ডিটেকশন অর্থাৎ মিথ্যা শনাক্তকরণের একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তারা বলছেন, মিথ্যাবাদী আছে দু’রকম। এক দল আছেন মিথ্যা বলার সময় নিজের অজান্তেই যাদের চোখের উপরের ভ্রু নড়াচড়া করতে থাকে। আরেক দল আছেন, মিথ্যা বলার সময় যাদের ঠোঁটের খুব সামান্য একটা নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, যে সময় তাদের ঠোঁট তাদের গাল স্পর্শ করে।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হানেইন বলছেন, তারা যে সফটওয়্যার এবং এ্যালগরিদম তৈরি করেছেন তা ৭৩% মিথ্যা শনাক্ত করতে পারে এবং এখন তারা কাজ করছেন এ পদ্ধতিকে আরো উন্নত করার জন্য। আপনি যখন মিথ্যে বলছেন এবং তা লুকানোর চেষ্টা করছেন, তখন আপনি চেষ্টা করেন যাতে আপনার শরীরে কোন প্রতিক্রিয়া না হয়। অধ্যাপক লেভি বলেন এই প্রযুক্তির হাত থেকে একটা মিথ্যাকে গোপন রাখা খুবই কঠিন।

প্রাচীন যুগেও মিথ্যা ধরার নানা কায়দা ছিল। সম্ভবত কারও মিথ্যা ধরার চেষ্টার ইতিহাস মানুষের মিথ্যা বলার মতই পুরোনো। এই প্রয়াসের সবচেয়ে পুরোনো দৃষ্টান্তগুলোর একটি পাওয়া যায় চীনে প্রায় ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। পদ্ধতিটি হলো, কেউ মিথ্যা বলেছে কিনা তা ধরার জন্য তার মুখ ভর্তি করে শুকনো চাল ঢুকিয়ে দেয়া হতো। কিছুক্ষণ পরে সেই চালের দানাগুলো পরীক্ষা করা হতো। যদি দেখা যেতো যে চালগুলো শুকনো রয়ে গেছে তাহলে ধরে নেয়া হতো যে সে মিথ্যা বলেছে। এর পেছনের তত্ত্বটা হলো, কেউ যদি সত্যি মিথ্যা বলে থাকে তাহলে ধরা পড়ার ভয়-উৎকণ্ঠায় তার মুখের ভেতরটা শুকিয়ে যাবে- যা বোঝা যাবে শুকনো চাল থেকে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে আবিষ্কৃত হয় প্রথম মিথ্যা ধরার যন্ত্র বা লাই-ডিটেকটর মেশিন। একে বলা হয় পলিগ্রাফ।

সবচেয়ে পরিচিত যন্ত্রটি হচ্ছে “এ্যানালগ পলিগ্রাফ।” যাতে তিন-চারটি কালি-ভরা সূঁচ থাকে যা একটি চলন্ত কাগজের উপর দাগ-কাটতে থাকে। অন্য প্রান্তে সন্দেহভাজন ব্যক্তিটির হাতের আঙুল, বাহু ও শরীরে লাগানো থাকে সেন্সর। তাকে অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব দিতে হয় এবং সেই সময় তার শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি, হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ কত এবং তার ঘাম হচ্ছে কিনা এগুলো মাপা হয়। তবে এসব মেশিন কতটা নির্ভুল এবং একে ফাঁকি দেয়া সম্ভব কিনা এ নিয়ে অনেক দিন ধরেই উদ্বেগ আছে। সেকারণেই সারা বিশ্বের গবেষক এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে আরো উচ্চ প্রযুক্তির পলিগ্রাফ তৈরির জন্য।

নেদারল্যান্ডসের রটারডাম শহরের ইরাসমুস বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. সেবাস্টিয়ান স্পিয়ার এবং তার দল ব্যবহার করছেন একটি এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) মেশিন । কেউ মিথ্যা বলছে কিনা বা প্রতারণা করছে সেটা এই যন্ত্র দিয়ে ধরাটাই ছিল উদ্দেশ্য। তারা যেটা করছেন তা হলো- একজন লোক যখন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন, তখন তার মস্তিষ্কের স্ক্যান করা হলে তাতে রঙের কোন পরিবর্তন ধরা পড়ে কিনা। “কেউ যখন সততার পরিচয় দিচ্ছে বা প্রতারণা করছে, তখন মস্তিষ্কের কোনো বিশেষ এলাকা বেশি সক্রিয় হয়ে উঠছে কিনা মূলত সেটাই আমরা দেখি।”

যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের কনভেরাস নামে একটি প্রতিষ্ঠান আইডিটেক্ট নামে একটি উচ্চ প্রযুক্তির পদ্ধতি বের করেছে, যা ইতোমধ্যেই অনেকে ব্যবহার করছেন। এটা মিথ্যা ধরার জন্য চোখের অনৈচ্ছিক নড়াচড়াকে ধরতে পারে। এতে একজন ব্যক্তিকে এমন কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয়, যার উত্তর “সত্য বা মিথ্যা” অথবা “হ্যাঁ বা না” দিয়ে দেয়া যায়। তারা যখন এই জবাবগুলো দিচ্ছেন তখন একটি সফটওয়্যার তাদের চোখের নড়াচড়ার উপর নজর রাখে এবং তাদের জবাবগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে। এর পর পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফলাফল জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এই ফলাফল ৮৬ থেকে ৮৮ শতাংশ সঠিক।

isrl2

কনভেরাস বলছে, তাদের এই আইডিটেক্ট এখন ৫০টি দেশে ৬০০’রও বেশি গ্রাহক ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫টি এবং সারা বিশ্বের শতাধিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এটি ব্যবহার করছে। কনভেরাসের প্রধান নির্বাহী টড মিকেলসন বলছেন, এই পরীক্ষাটিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষ নানা কাজে ব্যবহার করছে।

যেমন, অনেক আগে ঘটে গেছে এমন অপরাধ, অতীত বা বর্তমানে মাদক সেবন, কারো বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকলে তা গোপন রাখা হয়েছে কিনা, চাকরির আবেদনে মিথ্যে বলা, বা সন্ত্রাসবাদের সাথে যোগাযোগ – এরকম নানা ক্ষেত্রে এটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেন তিনি। অন্যদিকে পুলিশের গোয়েন্দারাও কোনো অপরাধের ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করতে পারে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে আইনের প্রশ্নটি একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। লাই ডিটেক্টরের বৈধতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের আইন বিভিন্ন রকম।

যৌন অপরাধ এবং পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে পলিগ্রাফকে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। কিন্তু এর ফলাফলকে ফৌজদারি মামলায় ব্যবহার করা যাবে কিনা- সে প্রশ্নে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের নিয়ম আলাদা। তা ছাড়া যুক্তরাজ্যে নিয়োগদাতারাও তাদের স্টাফদের ক্ষেত্রে লাই ডিটেকটর পরীক্ষার প্রস্তাব দিতে পারেন, তবে তা বাধ্যতামূলক হতে পারবে না।

যুক্তরাষ্ট্রেও লাই ডিটেকটর সংক্রান্ত আইন একেক অঙ্গরাজ্যে একেক রকম। যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায় রাজ্য-স্তরের ফৌজদারি মামলায় উভয় পক্ষ রাজি হলে লাই ডিটেকশন পরীক্ষা তথ্য প্রমাণ গ্রহণযোগ্য। কিন্তু নিউইয়র্ক রাজ্যে এটি কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশও কোনো সন্দেহভাজন বা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে এই টেস্ট নিতে বাধ্য করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল আইনে কোন প্রতিষ্ঠানই চাকরির আবেদনকে লাই ডিটেকটর পরীক্ষা করাতে পারে না। সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার বার্জেস সতর্ক করে দিচ্ছেন- কোনো গুপ্তচর বা অপরাধীর দোষ প্রমাণের অবিসংবাদিত উপায় হিসেবে লাই ডিটেকটরকে দেখা ঠিক হবে না।

কোনো একটা তদন্তের জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের সময় একে একটা উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মিথ্যাবাদী, দুশ্চরিত্র, প্রতারক বা অতিরঞ্জনকারীরা সত্য বলছে কিনা তা বের করার জন্য। মি. বার্জেস একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলছেন, এসব যন্ত্র সম্পূর্ণ নির্ভুল নয়। তিনি বলেন, তিনি নিজেই একবার ১৯৯০ এর দশকে লাই ডিটেকটরের একটি ভুল ফলাফলের জন্য একটি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলছেন, মিথ্যা ধরার জন্য যতই আরো উন্নত প্রযুক্তি আসুক, এ ব্যাপারে নৈতিক প্রশ্নগুলো এখনও রয়েই গেছে।

তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মনে করেন, একসময় এখনকার ভিডিও ক্যামেরার জায়গা নেবে ইলেকট্রোড। তারা বলছেন, এমন এক সফটওয়্যার আসবে যার ফলে দূর থেকে বা এমনকি ইন্টারনেটে লিংকেও একজন মিথ্যাবাদীকে চিহ্নিত করা যাবে তার মুখের পেশীর নড়াচড়া থেকে। অধ্যাপক লেভি বলছেন, ব্যাংকে, বিমান বন্দরে, অনলাইনে চাকরির ইন্টারভিউ বা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময়, শক্তিশালী ক্যামেরা থাকবে যা মুখমণ্ডলের পেশীর নড়াচড়া দেখেই ধরা যাবে কোনটি সত্য বক্তব্য এবং কোনটি মিথ্যা।

সূত্র: বিবিসি

চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর ব্যবসায়ী আবু মহসিন খানের আত্মহত্যার ভিডিও ৬ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট

Previous article

দ্রুত চালের উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ হচ্ছে:- কৃষিমন্ত্রী

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *