জাতীয়

যা-কিছু হবে সংবিধান ও আইনের মধ্যেই হতে হবে : আইনমন্ত্রী

2
ainmontri

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর দেয়া সংবিধানে জনগণকে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক বানিয়েছেন। এই সংবিধানের ২৬-৪৭ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারের বিধান সন্নিবেশ করা হয়েছে। সেখানে সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংসদ কিভাবে গঠিত হবে, সরকার কিভাবে গঠিত হবে, নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে তার সকল বিধান সংবিধানে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামীতে যা-কিছু হবে, সংবিধান ও আইনের মধ্যে থেকেই হতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দেশ আবারও পিছিয়ে পড়বে।

‘জাতীয় সংবিধান দিবস ২০২৩’ উদযাপন উপলক্ষে শনিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর র‍্যাডিসন হোটেলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, বিগত অর্ধশত বছরের অভিজ্ঞতা বলে, যখনই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত সাংবিধানিক শাসন থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তখনই দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার ব্যাহত হয়েছে। দেশে অরাজক ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং মৌলিক মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত হয়েছে। সর্বোপরি দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। তাই অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আগামীতে যা-কিছু হবে, সংবিধান ও আইনের মধ্যে থেকেই হতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে আবারও জাতি পিছিয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। বাঙালি জাতি স্বাধীনতার মাত্র ১০ মাসের মাথায় একটি গণমুখী ও বিশ্বমানের সংবিধান পেলেও এর পেছনের ইতিহাস অনেক বিস্তৃত ও কন্টকিত। একটি গণমুখী সংবিধান পাওয়ার জন্য তৎকালীন পাকিস্তান আমলে সামরিক ও স্বৈর শাসকদের বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন করতে হয়েছে, অনেক রক্ত দিতে হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

তবে বঙ্গবন্ধু তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সবসময় নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করেছিলেন। দাবি আদায়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। ছয় দফার সমর্থনে জনমত তৈরিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এবং বেনাপোল থেকে তামাবিল পর্যন্ত দিনরাত গণসংযোগ করেছিলেন। তিনি কখনোই জ্বালাও পোড়াও কিংবা সন্ত্রাসী কায়দায় দাবি আদায়ের রাজনীতি করেননি। পাকিস্তানী সামরিক শাসকরা তাকে বারবার মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠালেও তিনি কখনোই সহিংস পন্থা অবলম্বন করেননি। অধিকার আদায়ে তিনি অহিংস আন্দোলনের পাশাপাশি আদালতের আশ্রয় নিয়েছিলেন, বলেন আনিসুল হক।

তিনি ইচ্ছে করলে একাত্তরের ৭ মার্চেই স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে পারতেন কিন্তু তা দেননি। তিনি সেদিন বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কারণ বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা। তিনি নিজেকে কখনোই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ দেননি। তিনি তাঁর প্রগাঢ় রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে ধাপে ধাপে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ভিত্তিকে মজবুত করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে যখন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র-নিরপরাধ বাঙালির উপর অস্ত্র চালিয়েছিলো ঠিক তখনই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং তা বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলো, যোগ করেন মি. হক।

একইভাবে স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপই ছিলো নিয়মতান্ত্রিক এবং আইনের আওতায়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পরের দিনই তিনি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেছিলেন এবং এই সংবিধানের আওতায় তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর একটি স্থায়ী সংবিধান তৈরির জন্য তিনি ১৯৭২ সালের ২৩ শে মার্চ জারিকৃত বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশের আওতায় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান হতে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠন করেছিলেন। সংবিধানের খসড়া তৈরির জন্য তিনি গণপরিষদের ৩৪ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। এই কমিটির মাধ্যমে প্রণীত খসড়া সংবিধান দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই দিনে গণপরিষদে গৃহীত হয়েছিলো। তাই এই দিনটি স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সেমিনারে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি ছিলেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের মো. মইনুল কবির এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ।

মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

Previous article

আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে যারা গর্তে ঢুকেছে, তাদের বের করে এনে শায়েস্তা করা হবে : তথ্যমন্ত্রী   

Next article

You may also like

2 Comments

  1. […] প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’ আরও পড়ুনঃ যা-কিছু হবে সংবিধান ও আইনের মধ্যেই হতে… তিনি বলেন, ‘বিএনপি ভেবেছিল কেউ কোলে […]

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *