উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নতুনদের আইকন হতে চান পপি হিমাদ্রি By নিজস্ব প্রতিবেদক August 31, 20222 ShareTweet 2 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো সংগ্রামী উদ্যোক্তা পপি হিমাদ্রির সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। আমি পপি হিমাদ্রি। কুমিল্লা জেলা বরুড়া থানার দেওড়া গ্রামে জন্ম। বাবা মায়ের বড় সন্তান। সবার খুব আদরের ছিলাম। লেখাপড়া আর গান নিয়ে পড়ে থাকতাম সবসময়। বরুড়ার তলাগ্রাম স্কুল থেকে এসএসসি আর বরুড়া কলেজ থেকে এইচএসসি এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করি। পড়াশোনা চলমান অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় কুমিল্লাতে, বিয়ের পর ঢাকায় চলে আসি। কিছু করবো মাথায় আসেনি। অবশ্য করার দরকার প্রয়োজন হয়নি। এক মেয়ে নিয়ে আমাদের ছোট সংসার। মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে পড়ে। আমার কাজ ছিলো মেয়ে নিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা, বিকেল হলে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বাহির হওয়া। হঠাৎ একটা ঝড় আসলো ২০১৭ সালে, এই ঝড়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। স্বামীর কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়লো। ঐ যাত্রায় ঝড় টা থামলো। তারপরও ভালো চলছিলো। আবার ঝড় আসলো ২০২০ এ। এই ঝড় সবকিছু তছনছ করে দিলো। ২০২১ এ এই ঝড়টা শান্ত হয়ে গেলো। আমার স্বামী ওপারে চলে গেলো। ২০২১ সালে যখন আমার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি হয়, তখন জাপান থেকে একটা ফোন আসে আমার স্বামীর কাছে। ফোন টা আমি ধরি, তারপর আমার স্বামী কথা বলে। আমার স্বামী আমাকে বলে, তুমি এই কাজ টা করতে পারবে? আমি বলে বলে দিবো কোথায় কোথায় যেতে হবে। আমার স্বামীর উৎসাহ পেয়ে রাজি হয়ে গেলাম। তারপরের দিন থেকে শুরু হলো নতুন করে পথ চলা। স্বামী হাসপাতালে, মেয়ে বাসায় আর আমি মাঝখানে। বসুন্ধরা, বারডেম, হাজারীবাগ, হেমায়েতপুর ১৫ দিন একা সবকিছু সামলিয়েছি। হাসপাতালে স্বামীর অপেক্ষা, বাসায় মামনির অপেক্ষা, বারডেম, হাজারীবাগ, হেমায়েতপুর সবকিছু সামলিয়ে বাসায় ফিরতাম রাত ১২/১ টায়। সময়মতো স্বামী কে খাওয়াতে হতো। রাতে যখন খাবার খাইয়ে বাসায় আসার সময় হতো তখন বলতো আর একটু থাকো। বাসায় এসে কখন ঘুমিয়ে পড়তাম টেরও পেতাম না। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই আবার সকাল শুরু হতো বসুন্ধরা, বারডেম, হাজারীবাগ, হেমায়েতপুর। এমন করে টানা ১৫ দিন চলে। তারপর শুরু হলো নতুন আরেক যুদ্ধ, সপ্তাহে দুই দিন সকালে হাসপাতালে আশা যাওয়া। এরপর আমার যুদ্ধটা শেষ হয়ে গেলো ১৯ আগস্ট’ ২০২১ সালে। আমার স্বামী ফিনিস চামড়া নিয়ে কাজ করতো। আর আমি শুরু করেছি লেদার গুডস আইটেম নিয়ে। যেমন বেল্ট, ম্যানিব্যাগ, চাবির রিং, ওয়ালেট ইত্যাদি নিয়ে। ও সবসময় বলতো তুমি একদিন অনেক দূর যাবে, সেদিন আমি থাকবোনা। প্রথম আমি আমার কোম্পানির পরিচয়ে ২০২১ এর ১৮ তারিখ একটা কোম্পানিতে যাই। বাসায় যখন আসি, তখন উনি বলে তুমি অনেক বড় হবে সেদিন আমি থাকবোনা। ১৮ তারিখ বলে আর ১৯ তারিখই আমাদের ছেড়ে চলে যায়। স্বামী মারা যাওয়ার ১৮ দিনের দিনের মাথায় এক বিধবা মা তার মেয়ে কে নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসে। ২০ দিনের দিন কাজে বাহির হই। শুরু হয় মেয়ে নিয়ে একা পথ চলা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে আমার কোম্পানির নামে প্রথম ৪৫০ পিস ব্যাগের অর্ডার পাই, আমার স্বামীর পরিচয়ে। কারণ চামড়ার লাইনে আমার স্বামী বিশ বছর ছিলো। তবে মুলধন ছিলো ২০,০০০ টাকা। আমার অনুপ্রেরণা আমার স্বামী অপু রাউত। আজ আমি এতো তারাতাড়ি কাজের জায়গায় পরিচিত হতে পেরেছি আমার স্বামীর পরিচয়ে। কারণ এই ট্যানারী এরিয়ায় আমার স্বামী ২০ বছরের উপরে ছিলো। আমার পৃথিবী আমার রাজকন্যা। আমার মামনি অর্পি রাউত যদি সাপোর্ট না দিতো ওর বাবা মারা যাওয়ার পর আমি এতোদূর আসতে পারতাম না। যে মামনি মা ছাড়া কিছু বুঝতো না সেই মামনি মা ছাড়া থাকা শিখে গেছে, কোনো অভিযোগ নাই। মামনির বাবা মারা যাওয়ার পর ২০ দিনের দিন ওকে একা রেখে বাহির হই। কিন্তু আমি তো মা আমি তো ওকে বুঝি কতোটা কষ্ট চেপে রেখে আমাকে বলতো তুমি যাও। আমি তো জানতাম মামনি একা থাকতে পারে না, তারপরও ছিলো। যদি সাপোর্ট, সাহস না দিতো আমি কিন্তু বাহির হতে পারতাম না। আমার পুরো পৃথিবী একদিকে আর আমার মামনি একদিকে ছিলো। যখন আমাকে খুব দরকার ছিলো মামনির, ওর বাবা মারা যাওয়ার পর আমি একদিন ভালোমতো সময় দিতে পারি নি। আমার মামনির সাপোর্ট না থাকলে আমি কিছুই করতে পারতাম না। আমার শুরুটা হয় একজন কে নিয়ে, সে আমার কোম্পানির জি এম আকাশ। এতোটুকু আসতে আকাশের সাপোর্টও ছিলো। আমাকে সবসময় সাপোর্ট না করলে এতো জলদি বিজনেস টা শুরু করতে পারতাম না। একজন উদ্যোক্তা হতে গেলে আমি মনে করি সৎ সাহস থাকতে হবে, ঝুঁকি নেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। পাশাপাশি ধৈর্য ও চ্যালেঞ্জ নেয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে এবং কাজ করার জেদ থাকতে হবে। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে ১২ জন কর্মী আছে। অনেক চাকরির অফার ছিলো, কিন্তু আমার একটা জেদ ছিলো আমি চামড়া নিয়ে কিছু করবো। আমার প্রতিষ্ঠান নতুন, কাজের অভিজ্ঞতা নতুন। প্রতিবন্ধকতার অভিজ্ঞতা অনেক। তবে এই নয় মাসে একটা জিনিস শিখেছি। উপরে উঠার রাস্তা টা নিজেরই করে নিতে হয়। আরও পড়ুনঃ প্রত্যাশার বাস্তবতা খুঁজে পেয়েছেন আরিফা সুলতানা আমি বেশি পরিচিত ‘উই’ এর মাধ্যমে। তবে আমার প্রতিষ্ঠানের অর্জন হলো কম সময়ে বড় বড় ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করার সুযোগ পাওয়া, অল্প সময়ে লেদার সেক্টরে আমার প্রতিষ্ঠান কে অনেক উপরে নিয়ে যাওয়া। আমার অনেক স্বপ্ন ১২ জনের জায়গায় ১,০০০ জন কর্মী হবে, নিজের জায়গায় বিশাল বড় একটা ফ্যাক্টরি হবে। নিজের ব্র্যান্ড টা কে আর কোম্পানি কে দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত করা। সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নতুনদের আইকন হতে চাই। কখনো কারো উপর মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল হতে নেই। যে ব্যক্তি আপনাকে নির্ভরশীল হতে সহায়তা করে সে আপনার উপকার করছে না বরং আপনাকে পঙ্গুু বানিয়ে দিচ্ছে দিনদিন। পৃথিবীতে কেউ আজীবন পাশে থাকে না। সেই নির্ভরতার ব্যক্তিটিও কোনো একসময় তার জায়গা থেকে সরে দাঁড়াবে যদি তার স্বার্থে আঘাত লাগে। তখন আপনার মাঝ সমুদ্রে পড়ে যাবার মতো অবস্থা হবে। এক কদম স্বনির্ভরতার সাথে হাঁটতে না পারায় নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে অসহায় মানুষ বলে মনে হবে। কারো উপর ভরসা করে নিজের জীবনটা সঁপে দেয়া ভীষণ বোকামি। যার ফল ভোগ করতে হবে আপনাকে একদিন না একদিন, দেখবেন ততোদিনে হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। নিজেকে স্বনির্ভর করে তোলাটা ভীষণ জরুরী। ভালোবাসা, স্নেহের নামকরণে কারো সহায়তায় বেঁচে থাকা মানে একটা দায়বদ্ধতার জীবনে বাস করা।
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231560 views