জীবনযাপন

সুস্থ, সুন্দর ত্বকের জন্য ১০টি স্কিন কেয়ার গোপন টিপস : জয়া মাহবুব

2
hero skincare every season

উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর ত্বক পাওয়ার ক্ষেত্রে আসল রহস্যটি অনেক সময়ই লুকিয়ে থাকে আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসে। পরিষ্কার করা আর ময়েশ্চারাইজ করার মতো সাধারণ নিয়মের বাইরে কিছু গোপন ত্বক পরিচর্যার টিপস রয়েছে, যা সময়ের সাথে ত্বকের চেহারা বদলে দিতে পারে। এই গোপনীয়তাগুলো কেবল দামি পণ্যের ওপর নির্ভর করে না—বরং ত্বকের প্রকৃতি বোঝা এবং সেটিকে যত্নসহকারে পরিচালনার ওপর গুরুত্ব দেয়। এমন ১০টি গোপন ত্বক পরিচর্যার টিপস শেয়ার করবো, যা আপনার রুটিনকে আরও কার্যকর করে তুলতে পারে এবং প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ত্বক ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

১. প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

সানস্ক্রিন ত্বকের বার্ধক্য ধীর করতে পারে এবং ত্বক ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এমন একটি সানস্ক্রিন বেছে নিন যেটি ব্রড-স্পেকট্রাম সুরক্ষা, এস পি এফ  ৩০ বা তার বেশি এবং ওয়াটারপ্রুফ। ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ছায়া ও কাপড় দিয়ে সুরক্ষা দিন। সানস্ক্রিন শুধুমাত্র ৬ মাস বা তার বেশি বয়সী শিশুদের ত্বকে প্রয়োগ করা উচিত। আপনার বাচ্চা ত্বকের জন্য কোন সানস্ক্রিনটি উপযুক্ত সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

২. ভিতর থেকে ত্বককে পুষ্টি দিন

আপনি যা খান ও পান করেন, তার প্রভাব আপনার ত্বকে পড়ে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস ত্বকের কার্যকারিতা ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। বাদাম ও শাকসবজি ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে, যা উজ্জ্বল ত্বক গঠনে সহায়ক। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড—যা তেলযুক্ত মাছ ও ফ্ল্যাকসিডে পাওয়া যায়—ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে এবং ত্বকের সুরক্ষা স্তরকে মজবুত করে স্বচ্ছ ও সুস্থ ত্বক নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. ত্বকে ক্যান্সারের জন্য পরীক্ষা করুন

নিজেই নিয়মিত ত্বক পরীক্ষা করুন। তাড়াতাড়ি চিহ্নিত হলে ত্বক ক্যান্সার অনেকটাই নিরাময়যোগ্য। যদি কোনো দাগ অস্বাভাবিক লাগে বা পরিবর্তন হয়, চুলকায় বা রক্তপাত হয়, তবে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

৪. আপনার ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন

আপনার ত্বক কি শুষ্ক, তৈলাক্ত, স্বাভাবিক, সংবেদনশীল নাকি মিশ্র? সেই অনুযায়ী প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। তাতে ত্বক থাকবে আরও স্বাস্থ্যবান। আপনার ত্বকের ধরণ নির্ধারণ করা যায় ত্বক পরিষ্কারের পর ত্বক দেখতে কেমন লাগছে ও অনুভূতির ভিত্তিতে, এবং রোমকূপ কতটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ও ব্রণ হওয়ার প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে। শুষ্ক ত্বক টান টান অনুভব হয়, আর তৈলাক্ত ত্বক উজ্জ্বল বা তেলতেলে দেখায়। কম্বিনেশন ত্বকের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র টি-জোন (কপাল, নাক ও থুতনি) অঞ্চলে ত্বক চকচকে হয় এবং ত্বক অন্য অংশে টান টান অনুভব হতে পারে। সংবেদনশীল ত্বক সহজেই লাল হয়ে যেতে পারে ও জ্বালাপোড়া বা উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।

৫. ত্বক জোরে ঘষবেন না

অতিরিক্ত ঘামার পর বা ব্রণের সমস্যায় অনেকেই মনে করেন জোরে ঘষে পরিষ্কার করলে ভালো হবে। কিন্তু এটা ত্বকের ক্ষতি করে এবং সমস্যা আরও বাড়ায়।

৬. প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে, ঘুমানোর আগে ও ঘামার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন

ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুলে রাতভর জমে থাকা ধুলাবালি ও ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। রাতে ধুলাবালি, ধোঁয়া ও মেকআপ তুলে ফেলাও জরুরি ।

৭. মুখ ধোয়ার সময় ধীরে ও কোমলভাবে পরিষ্কার করুন

মুখ ধোয়ার জন্য হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করুন। মুখ ভিজিয়ে নিয়ে আঙুলের সাহায্যে বৃত্তাকারে ক্লিনজার ম্যাসাজ করুন, তারপর ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে আস্তে করে মুছে ফেলুন।

৮. মানসিক চাপ কমান

আপনি কি জানেন যে স্ট্রেস আপনার ত্বকের স্বাস্থ্যের উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে? এর মূল কারণ হলো কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন, যা স্ট্রেসের সময় শরীরে বেড়ে যায়। কর্টিসলের পরিমাণ বেড়ে গেলে সেবাম উৎপাদনও বেড়ে যায়, যা ব্রণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস ত্বকের সুরক্ষা স্তর দুর্বল করে তোলে, ফলে ত্বক সহজেই জ্বালা, শুষ্কতা এবং সংবেদনশীলতার শিকার হয়। একজিমা ও সোরিয়াসিসের মতো বিদ্যমান ত্বকের সমস্যাগুলোও আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া স্ট্রেস ত্বকের মেরামত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং কোলাজেন উৎপাদন হ্রাস করে, যার ফলে ত্বক তার দৃঢ়তা হারায় এবং বার্ধক্যের লক্ষণ দ্রুত দেখা দিতে শুরু করে। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করুন।

৯. ডার্মাটোলিজস্টের পরামর্শ নিন

ত্বক নিয়ে অসন্তুষ্ট হলে একজন বিশেষজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্ট  দেখান। তারাই ত্বকের রোগ ও সৌন্দর্যচর্চার বিষয়ে সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন।

১০. ত্বকের যত্নে নিয়মিত থাকুন

ত্বকের যত্ন কোনো একদিনের কাজ নয়; বরং নিয়মিত যত্ন ও ধৈর্য প্রয়োজন হয় ভালো ফল পেতে। যখন আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে মুখ পরিষ্কার, ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন ও ত্বক অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করেন, তখন ত্বক সেই পণ্যে অভ্যস্ত হয়ে উপকার পাওয়া শুরু করে। মাঝেমধ্যে রুটিন বাদ দেওয়া বা ঘনঘন পণ্য পরিবর্তন করলে ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং উন্নতির গতি কমে যায়। একে ঠিক  স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়ামের মতো ভাবতে হবে—নিয়মিত অভ্যাসই ধীরে ধীরে দীর্ঘস্থায়ী সুফল এনে দেয়। তাই ধৈর্য ধরে নিয়ম মেনে ত্বকের যত্ন নিন, ত্বকও আপনাকে তার উজ্জ্বলতা ও কোমলতার মাধ্যমে প্রতিদান দেবে।

জয়া মাহবুব
ফিচার রাইটার
উদ্যোক্তা জার্নাল  

 

উদ্যোক্তাদের মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর পমোডোরো টেকনিক : এলিন মাহবুব 

Previous article

জনসমর্থন পেলে আগামী ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন সাইফুল মাদবর চঞ্চল

Next article

You may also like

2 Comments

  1. […] আরও পড়ুনঃ সুস্থ, সুন্দর ত্বকের জন্য ১০টি স্কিন ক… […]

  2. […] আরও পড়ুনঃ সুস্থ, সুন্দর ত্বকের জন্য ১০টি স্কিন ক… […]

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *