উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তামতামত

নিরাপদ থাকতে গিয়ে আপনি কি নিজের স্বপ্নটাই হারিয়েছেন : এলিন মাহবুব

1
aleen

আমরা সবাই একসময় স্বপ্ন দেখি বড় কিছু করার। কিন্তু জীবনের পথে চলতে চলতে আমরা এমনভাবে নিরাপদ হতে শিখি, যেন ব্যর্থতা আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। আমরা ভাবি —“এইটুকু থাকলেই তো চলে”, “আর ঝুঁকি নেওয়ার দরকার কী?”

এভাবেই ধীরে ধীরে আমরা এমন এক পথে হাঁটি, যেখানে ব্যর্থতার ভয় নেই, কিন্তু সফলতার দীপ্তিও নেই। উদ্যোক্তাদের জীবনে এই সত্যটা আরও স্পষ্ট। অনেকে ছোট একটা ব্যবসা শুরু করেন—একটু আয়, একটু নিরাপত্তা, আরামদায়ক একটা সীমা। কিন্তু যারা বড় হতে চান, তারা জানেন—প্রতিটি সাফল্যের পেছনে একটা ব্যর্থতার গল্প থাকে।

যেমন, ব্র্যাকের স্যার ফজলে হাসান আবেদ—যিনি নিরাপদ চাকরি ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়িয়েছিলেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করেছিলেন পরিবর্তন সম্ভব। কিংবা পাঠাও-এর প্রতিষ্ঠাতা—যাদের শুরুটা ছিল কেবল এক মোবাইল অ্যাপ, অথচ আজ তারা দেশের লজিস্টিক ও রাইডশেয়ার খাতের প্রতীক। এমনকি এক দোকানি, যিনি পাড়া-মহল্লার ছোট মুদি দোকান থেকে অনলাইনে বিক্রি শুরু করেছেন—তার সাহসটাও সমান মূল্যবান।

উদ্যোক্তার পথ: ঝুঁকির ভেতরেই অর্জনের ঠিকানা

বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হওয়া মানেই প্রতিদিনের এক নতুন সংগ্রাম। কখনো পুঁজির সংকট, কখনো বাজারের অনিশ্চয়তা, কখনো সমাজের অবিশ্বাস—এই বাস্তবতার মধ্যেও যারা পথ খুঁজে নেন, তারাই আসল সাহসী মানুষ। অন্যদিকে, অনেকেই বেছে নেন নিরাপদ জীবন। একটি ছোট ব্যবসা, নিয়মিত আয়, সীমিত ঝুঁকি—এই আরামের ঘেরাটোপে তারা স্বস্তি খোঁজেন। তারা ভাবে, ” ভালোই তো আছি, অন্তত ক্ষতি তো হচ্ছে না।” কিন্তু তারা বুঝতে পারেন না, এই নিরাপত্তার দেয়ালের ভেতরেই তাদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার আলো আস্তে আস্তে নিভে যাচ্ছে।

নিরাপত্তার অদৃশ্য মূল্য:

নিরাপদ পথে হাঁটলে ক্ষতির ভয় থাকে না ,কিন্তু সেই সঙ্গে হারিয়ে যায় নতুন কিছু করার আনন্দও। যে উদ্যোক্তা প্রতিবার ভাবে “এই কাজটা ঝুঁকিপূর্ণ, করব না,”সে ধীরে ধীরে নিজের স্বপ্নের দরজাগুলো নিজেই বন্ধ করে দেয়। যারা সাহস নিয়ে নতুন পথে হাঁটেন, তারা নিজের স্বপ্নের পথ প্রশস্ত করেন। যারা কম্ফোর্ট জোনকে বেঁছে নেয়, তারা নিজের বড় স্বপনগুলোকে হারিয়ে ফেলে।

সাহসের মুহূর্ত:

প্রত্যেক উদ্যোক্তার জীবনে একদিন না একদিন আসে এমন একটি মুহূর্ত—যেখানে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়: নিরাপত্তা নাকি সাহস? হয়তো সেটা ছিল দোকান বড় করা, নতুন পণ্য বাজারে আনা, অথবা নতুন কোনো ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া।

আরও পড়ুনঃ আবেগের নিয়ন্ত্রণই উদ্যোক্তার আসল শক্তি : এলিন মাহবুব

প্রথমে সেটা অসম্ভব মনে হয়েছে,কিন্তু সেই একটিমাত্র সিদ্ধান্তই বদলে দিয়েছে পুরো জীবন। সেই এক সাহসের মুহূর্তই তাকে করেছে আলাদা, করেছে স্মরণীয়। স্মরণীয় হওয়া মানে শুধু সাফল্য নয়,বরং নিজের ভয়কে অতিক্রম করার ক্ষমতা অর্জন করা।

স্মরণীয় উদ্যোক্তা হওয়ার পথ:

১️) প্রতিদিন একটু করে সাহসী হোন:

প্রতিদিন এমন কিছু করুন  যা আপনার কাছে  সামান্য হলেও চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। চ্যালেঞ্জের  মুখে এগিয়ে যাওয়া মানেই জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করা।

২️) ব্যর্থতা থেকে শিখুন:

ব্যর্থতা মানে শেষ নয়—এটা শেখার একটি সুযোগ। যারা ব্যর্থতাকে সম্মান করতে শেখে, তারা একদিন নেতৃত্ব দেয়।

৩️) নিজের গল্প বলুন:

মানুষ ব্যবসার পেছনের গল্প ভালোবাসে। আপনার পরিশ্রম, হার-জিত, সাহস—এই গল্পগুলোই আপনাকে সবার থেকে আলাদা করবে।

৪) প্রতিনিয়ত শিখুন:

সময় বদলাচ্ছে প্রতিদিন। নতুন ধারণা, নতুন প্রযুক্তি, নতুন গ্রাহকের মন—সবকিছু সম্পর্কে জানুন, শিখুন এবং নিজেকে আপডেট করুন।

৫️) “কেন” প্রশ্নটি মাথায় রাখুন:

যেদিন আপনি  আপনার শুরু করার কারণ ভুলে যাবেন, সেদিন আপনার আগ্রহও হারিয়ে যাবে। প্রতিদিন নিজে স্মরণ করতে হবে — “আমি কেন শুরু করেছিলাম?”

নিরাপদ জীবন শান্ত হতে পারে, কিন্তু সেই জীবনের কোনো ইতিহাস থাকে না।সাহসী জীবন ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু তাতেই থাকে অর্থ, তাতেই থাকে পরিচয়। আজ আপনার  সামনে হয়তো এমন একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে—যা আপনার কাছে চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে , কিন্তু ভেতর থেকে ডাকছে। সেই ডাকই আপনার প্রকৃত দিশা।

যারা সাহস বেছে নেয়, তারাই ইতিহাসে থাকে। যারা শুধু নিরাপত্তা খোঁজে, তারা সময়ের স্রোতে মিলিয়ে যায়। আজ আপনার সুযোগ আছে—নিজের ভয়কে জয় করার, নিজের গল্পকে নতুনভাবে লেখার। প্রশ্ন শুধু একটাই—আপনি  কি প্রস্তুত সেই সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য?

এলিন মাহবুব

 

উদ্যোক্তার সকাল : সফলতার সূর্যোদয় এখান থেকেই – জয়া মাহবুব 

Previous article

নারী উদ্যোক্তার প্রকাশ্য উপস্থিতি : অর্থনীতির বাইরে এক সামাজিক বিপ্লব – জয়া মাহবুব 

Next article

You may also like

1 Comment

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *