উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা দুই ছেলের সহযোগিতায় উদ্যোগ শুরু করেন আজরীন শরীফা সিমনি By নিজস্ব প্রতিবেদক February 9, 20220 ShareTweet 0 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা আজরীন শরীফা সিমনির সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। আমি আজরীন শরীফা সিমনি। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফরিদপুর শহরে। আমি ফরিদপুর সরকারি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে লেখাপড়া করেছি । ঢাকায় এসে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করেছি। আমার এইচএসসি পড়া চলাকালীন আমার বিয়ে হয়ে যায়। তারপরও আমি হাল ছাড়িনি কখনও। সবসময় স্বপ্ন দেখে গিয়েছি স্বাবলম্বী হওয়ার। আমার জন্য সবকিছু অনেক কঠিন ছিল, সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছি নিজের সাথে। সংসার, ছেলেদের কথা ভেবে কিছু করে উঠতে পারেনি। ২০২০ সালে প্যানডেমিক পরিস্থিতির কারনে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমি ভাবলাম যেটা পারি, সেই কাজটা দিয়ে শুরু করি। আমার ছোট ছেলেকে একটা পেইজ আর একটা লোগো বানিয়ে দিতে বললাম। আমার দুই ছেলের সাপোর্টে আমার ভিতরে লুকিয়ে থাকা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা। আমি কাজ করছি কেক, কুকিজ, ফ্রোজেন আইটেম, চাইনিজ, ডেজার্ট, ফাস্টফুড এবং বিভিন্ন ধরনের হোমমেইড খাবার নিয়ে। আমার প্রতিষ্ঠান Azrin’s Kitchen থেকে জন্মদিনের কেক, যেকোনো ডিজাইনের কাস্টমাইজ কেক করে থাকি। আমার প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য ৫০-১০০ জন লোকের খাবার সরবরাহ করে থাকি। যেমন- গাঁয়ে হলুদ, জন্মদিন ও বিভিন্ন ঘরোয়া অনুষ্ঠান। অফিসের প্রোগ্রাম থাকলেও আমার নিজস্ব ডেলিভারি ম্যান দিয়ে খাবার পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে থাকি। উদ্যোগ শুরু করতে আমার তেমন একটা সমস্যা হয়নি। আমার পরিবারের সবাই, আমার বান্ধবীরা সবসময় আমার পাশে ছিল। আমি কাজটা শুরু করাতে আমার বান্ধবীরা অনেক খুশি হয়েছিল। শুরুতে আমার মুলধন ৩০,০০০ টাকা ছিলো। একটা ওভেন, একটা বিটার মেশিন এবং বেকিং এর জন্য আরো কিছু জিনিস কিনতে হয়েছিল। আমার মতে, একজন উদ্যোক্তা হতে হলে যেসব গুনাবলী থাকা প্রয়োজন তার মধ্যে হলো ইচ্ছা শক্তি, পরিবারের সাপোর্ট, যে কাজটাই করিনা কেনো সেটা ভালোভাবে জানা, মনোবল, আত্মবিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম, নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং ধৈর্য্য। একজন উদ্যোক্তার ধৈর্য্য থাকাটা খুব জরুরি। আমার প্রতিষ্ঠানের কাজগুলো আমি নিজেই বেশি করে থাকি। আমাকে সাহায্যে করার জন্য একজন লোক আছে। আমি চাকরি না করে উদ্যোক্তা হলাম কারন আমার দুইটা ছেলে সন্তান আছে। মা, না হলে উপলব্ধি করা যায় না, তখন নিজের থেকে সন্তান প্রিয় হয়ে যায়। ঘরে থেকে সংসার সন্তানদের দেখা শোনা করার জন্যই বাইরে যেয়ে কিছু করা হয়নি আমার। আমি হোমমেইড খাবার নিয়ে কাজ করি। আমি সবসময়ই বাজার থেকে সেরা মানের পণ্য কিনে, পরিস্কার পরিছন্নভাবে নিজের হাতে খাবার তৈরি করে থাকি। হাইজেনিক, গুনগত মান ও স্বাদ ঠিক রেখে খাবারগুলো তৈরি করে থাকি। আমার খাবারের গুনগত মানের দিক থেকে কখনও আপোষ করি না। আমার উপর অনেকে ভরসা আর বিশ্বাস করে খাবার নিয়ে থাকেন, আর সময় মতো ডেলিভারি করে থাকি, এর জন্য রিপিট কাস্টমার বেশি। প্রতিবন্ধকতা সবসময়ই থাকবে। খাবার নিয়ে কাজ করলে ঝামেলায় পড়তে হয় মূল্য নির্ধারন নিয়ে। বাজারে পণ্যের দাম ওঠা-নামার কারনে বেশি সমস্যায় পরতে হয়। বাইরের রেস্টুরেন্টের সাথে আমাদের তুলনা করলে হবে না। আমরা অর্ডার পাওয়ার পর ফ্রেশ খাবার তৈরি করি, যেখানে হোটেলগুলো অনেক দিনের তেল, বাসি খাবার, প্রিজারভেটিভ ব্যাবহার করে থাকেন। আমি সাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার তৈরি করে থাকি। খাবারের দাম বেশি এই কথাটা মাঝে মধ্যে শুনতে হয়। কেক ডেলিভারি করতে যেয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সেল ভালোই থাকে। আমার সেবায় কাস্টমার সন্তুস্ট। সরকারি, বেসরকারি কোনো সহযোগিতা কখনও পাইনি। আমার কাস্টমাররা অন্য কাস্টমারের কাছে রেফার করে, আমার খাবারের প্রশংসা করে। এভাবেই কাস্টমারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এটাই আমার প্রতিষ্ঠানের বড় অর্জন। আমি স্বপ্ন দেখি, ভবিষ্যতে আমার উদ্যোগ নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাবো। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই। নিজের নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চাই, যেখানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হবে।
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231565 views