জাতীয়রাজনীতিশীর্ষ সংবাদ আগাছাকে কি করতে হবে সেটা ভাবতে হবে: প্রধানমন্ত্রী By নিজস্ব প্রতিবেদক February 22, 20220 ShareTweet 0 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের ‘আগাছা-পরগাছা’ আখ্যায়িত করে তাদের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে দেশবাসীর প্রতিই আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগাছাকে কি করতে হবে সেটা বাঙালিদের নিজেদেরই ভাবতে হবে।’ ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২: প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা একটা কথা বলতেন-‘বাংলাদেশের মাটি এত উর্বর এখানে যেমন ফসলও হয় তেমনি সেখানে অনেক পরগাছা-আগাছাও জন্মে। এই আগাছা থাকবে এটা ঠিক। কিন্তু এই আগাছাকে কি করতে হবে সেটা বাঙালিদের নিজেদেরই ভাবতে হবে। কারণ, আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। মানুষের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে চাই।’ ‘শিক্ষা-দীক্ষায়, সংস্কৃতি চর্চায় সবদিক থেকে এই বাঙালি নিজের মর্যাদা নিয়ে স্বমহিমায় স্বগৌরবে বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে-এটাই আমাদের কামনা। ভাষা শহিদ, স্বাধীনতার শহিদ এবং জাতির পিতার প্রতি এটাই আমাদের অঙ্গীকার’, বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদেরই কিছু রয়েছে, যাদের অর্জনটা মনপুতই হয় না। কারণ, পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ থাকতেই তারা পছন্দ করে। এই শ্রেণীটা কখনো আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে জানে না। তারা মর্যাদা বিকিয়ে দিয়েই আত্মতুষ্টি পায়। আর সেই শ্রেণীটা এখনও আমাদের সমাজে রয়ে গেছে। তিনি বলেন, সেজন্য যতই আমরা উন্নতি করি, সারা বিশ^ সেই উন্নয়ন দেখলেও দেশের কিছু মানুষ যেন অন্ধই তাকে তারা কোন উন্নয়ন দেখে না। আর এই অর্জনের কথা বলতে গেলেও তাদের দ্বিধা। এধরনের মানসিকতা কেন, নিজের কাছেই তা অবাক লাগে এবং প্রশ্ন আসে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই বিশ্ব দরবারে মর্যাদা পেয়েছে। আজকে স্বাধীন হয়েছি বলেই যাঁরা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে সেই রক্তের মর্যাদা তাঁরা পেয়েছেন। কেননা, আজকে ২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের নয় সারাবিশে^ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কাজেই তাঁদের এই মহান আত্মত্যাগের জন্যই আমাদের এই মহৎ অর্জন সম্ভব হয়েছে। যেটা জাতির পিতা সবসময় বলতেন-‘মহান অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার’। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই মর্যাদা নিয়েই চলতে হবে। আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, আব্দুর রহমান এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ. এইচ. এম. খায়রুজ্জামান লিটন, দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি গণভবন থেকে সভাটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন হয়। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদে ১৯৪৮এর ১১ মার্চে ডাকা ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জাতির পিতার গ্রেফতার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন সংগঠনে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে রক্তদান, পরবর্তীতে দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে পালনে জাতির পিতার বিভিন্ন ভূমিকার উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে পরিনত করতে শেখ মুজিব দেশব্যাপী সফর করেন এবং সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। পরিণতিতে বারংবার গ্রেফতার হলেও তিনি থেমে থাকেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবার গ্রেফতার হয়ে জুলাই মাসে মুক্তি পান। এরপর তিনি ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হলে ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান। শেখ মুজিব ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থেকেও ভাষাসৈনিক ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলেন এবং নানা পরামর্শ দিয়েছেন। পাকিস্তান গোয়েন্দা রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ভাগ্য হলো আমাদের যারা আঁতেল শ্রেণি তারা এগুলোকে কোনদিন মূল্যই দেয়নি। আমি আর বেবী মওদুদ যখন এই রিপোর্টগুলি পেলাম, আমি একটা বক্তৃতা দিলাম বাংলা একাডেমিতে। তো আমার সেই ভাষণের পর বদরুদ্দীন উমর আমার বিরুদ্ধে একটা বিরাট আর্টিকেল লিখলো যে, এই কথা নাকি আমি বানিয়ে বানিয়ে বলেছি। শেখ মুজিবের কোনো অবদান ভাষা আন্দোলনে নাই।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্ট তো শেখ মুজিবের বিরুদ্ধেই আছে। আর কারো বিরুদ্ধে তো এত নাই। তার বিরুদ্ধেই তো লিখেছে-তিনিই ছাত্রদের উস্কানি দিচ্ছেন, তিনিই আন্দোলন করছেন, তিনিই সবখানে যাচ্ছেন, লিফলেট তৈরি করা, রেজুলেশন তৈরি করে সেগুলো সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এর মাঝে অনেক বার গ্রেফতার হয়েছেন আবার মুক্তি পেয়েছেন। ’ পাকিস্তানী ইন্টেলিজেন্স ব্র্যাঞ্চের রিপোর্টগুলো যদি তিনি বই আকারে প্রকাশ না করতেন বা জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ যদি প্রকাশিত না হোত তাহলে অনেক সত্যই অন্ধকারে থেকে যেতে পারতো বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার আগে যেমন বার বার এসেছে ঠিক একই রকম ভাবে ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর আমাদের ভাষা-সহিত্যের ওপর আঘাত এসেছে। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম যেমন ভাষা আন্দোলন থেকে তেমনি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রমের ইতিহাস থেকেও মুছে ফেলার চেষ্টা হল। জাতির পিতার যে ৭ মার্চের ভাষণ আজকে আড়াই হাজার বছরের মানুষকে উদ্বুদ্ধকারি শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে সেই ভাষণও এদেশে নিষিদ্ধ ছিল। তাহলে এরা কারা এরা এদেশে পাকিস্তানীদের প্রেতাত্মা ও খুনীরা। জাতির পিতার খুনীদের পুরস্কৃত করার পরও সত্য আজ উদ্ভাসিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার সেই অমোঘ আহবান-‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবানা’র উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, বাঙালিকে কেই দাবিয়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। সরকার প্রধান বলেন, ২১ শে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং দিবসটি বিশে^র সকল ভাষাভাষীরা পালন করছে। যেটা বাঙালিদেরকেই একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে এবং যেটা আসলে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। যেমন স্বাধীনতাটাও তিনি দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, যেকোন সংগ্রাম এবং রক্তদান কখনো বৃথা যায় না, বৃথা যেতে পারে না। যদি সততার সাথে এগিয়ে যাওয়া যায় যে কোন অর্জনই সম্ভব এবং সেই অর্জনটা আমরা করতে পেরেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা বিষয় সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে যখনই বাঙালি কিছু পায় বা মর্যাদা অর্জন করে বা এগিয়ে যেতে থাকে উন্নয়নের পথে তখনই কিন্তু চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের প্রস্তাব এবং প্রচেষ্টায় ইউনেস্কো আজকে ২১শে ফেব্রুয়ারীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রদান করায় বিশে^র অনেক দেশেই দিবসটি আজকে পালিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে নিজস্ব মাতৃভাষাতে ২১শে ফেব্রুয়ারি পালন হচ্ছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত তাঁকে মেসেজ দিয়েছেন নেদারল্যান্ডের বিভিন্ন প্রদেশে নিজস্ব মাতৃভাষাতে একুশ পালিত হচ্ছে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি অনেক ভাষায় অনুদিত হচ্ছে, দিনটা পালিত হচ্ছে এবং আমাদের শহীদ মিনারের মত অনেক শহীদ মিনার অনেক দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এটাও আমাদের জন্য গৌরবের। সরকার প্রধান বলেন, বাঙালি রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করে গেছে। সারাবিশে^র যারা যে মাতৃ ভাষাভাষী তাঁদের মাতৃভাষার প্রতি সম্মান আমরা দেখাচ্ছি এবং আমাদের এই চেতনা এবং আত্মত্যাগ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী তাঁদের মাতৃভাষাকেও সম্মান দেখাচ্ছে যেটাও আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। শহিদের রক্ত দিয়েই লেখা আমাদের মাতৃভাষা। কাজেই, এই ভাষার মর্যাদা যেমন রক্ষা করতে হবে তেমনি ভাষা শেখা এবং ভাষার ব্যবহারে তিনি যতœবান হবার পরামর্শ দেন। কেননা, এই মাতৃভাষার সংগ্রামের মধ্যদিয়েই আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির তোষণ না করলে দেশ আরো এগিয়ে যেতো : পররাষ্ট্রমন্ত্রী June 23, 20240
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন June 23, 20241
শেখ হাসিনা-মোদি বৈঠক ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করার ব্যাপারে আশাবাদী June 10, 202449 views
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন স্থাপনার অনুমতি দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না : প্রধানমন্ত্রী June 5, 202478 views
জ্বালানি ঘাটতি প্রশমিত করতে অফশোর গ্যাস উত্তোলন বেছে নিয়েছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী February 28, 202482 views
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231565 views