উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা চাকরি নামক সোনার হরিণের অনিশ্চয়তায় উদ্যোক্তা খাতায় নাম লিখালেন শামীম আরা ডালিয়া By নিজস্ব প্রতিবেদক June 21, 20224 ShareTweet 4 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন শামীম আরা ডালিয়া। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প। আমি শামীম আরা ডালিয়া। পুরান ঢাকার মেয়ে, অরিজিন পুরান ঢাকার। লালবাগে বেড়ে ওঠা। পুরান ঢাকার অলিগলিতে দূরন্তপণা, লালবাগ কেল্লা ছিলো খেলাঘর, স্থানীয় একটা স্কুল রহমতুল্লাহ মডেল হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি। তেজগাঁও কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করি। অনার্স শেষবর্ষ চলাকালীন সময়ে বিজেম থেকে সাংবাদিকতার ওপর ডিপ্লোমা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ঠশীলন থেকে শুদ্ধ উচ্চারণের কোর্স সম্পন্ন করি। স্কুলে থাকাকালীন সময়ে টেলিভিশন স্কুল বিতর্কে অংশ নিয়েছি। সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা শেষ করে একটা বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ইন্টার্নিশিপ করেছিলাম। সংসার জীবনে পদার্পণ করার ফলে সেই চ্যানেলে আর জয়েন করা হয়ে উঠেনি। বর্তমানে দুই সন্তানের জননী। আমার উদ্যোগের নাম “খন্ড-ত”। কাজ করছি ওমেন্স ক্লোথিং নিয়ে। তবে সিগনেচার প্রোডাক্ট কুর্তি। কাজে অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহিত করার পেছনে আমার স্বামী ও খালাতো বোনের অবদান ছিলো। শুরুটা ছিলো করোনাকালীন সময়ে। একটা বেসরকারী স্কুলে চাকরিরত ছিলাম৷ সেখানে আমরা ফুল বেতন তুলে দিতাম কিন্তু মালিক পক্ষ বেতন দিত ৫০%-৬০%। টিচারদের খুবই অসুবিধায় রাখত। বলতে গেলে মালিক পক্ষ আমাদের করোনার দোহাই দিয়ে টাকা কমিয়ে দিত। তখন আমি Women and e-Commerce Trust (WE) গ্রুপে আমার এক বান্ধবী রাবেয়া বশরীর মাধ্যমে জয়েন হই। সেখানে সবার জীবন পরিবর্তনের গল্পে নিজের কিছু করার ইচ্ছা থেকেই আমার উদ্যোগ গ্রহন করা। কারন তখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। শুরুতে ১২০০ টাকা ছিলো আমার মূলধন। একজন উদ্যোক্তাকে অল রাউন্ডার হতে হবে। বিভিন্ন পেশার একটা নিদিষ্ট ছকের কাজ থাকে। কিন্তু উদ্যোক্তা তার ব্যতিক্রম। একই সাথে তাকে বিচক্ষণ, দক্ষ, পরিশ্রমী, সিন্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, উত্তম পরিকল্পনাকারী এবং যোগ্য লিডার হওয়ার গুনাবলী ধারণ করতে হবে। চৌকস বুদ্ধিমত্তা, সময়ের সাথে ফ্যাশন জ্ঞান রাখা ইত্যাদি নানা যোগ্যতা থাকাটা খুব বেশি দরকার। আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মী বলতে আমি নিজেই। এখন পর্যন্ত একাই সব দেখভাল করে আসছি। তবে ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক পরিধি বৃদ্ধিতে কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারী চাকরি ছাড়া দেশে আর কি কোনো চাকরির নিশ্চয়তা আছে? নিজের ইনকাম কম হলেও আমার বেশি হলেও আমার। চাকরি না খুঁজে চাকরি দেওয়ার প্রতি শুধু আমার না সবার মনোভাব হওয়া উচিত৷ আমি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এখানে সব ধরনের ওমেন্স ক্লোথিং আইটেম এর সার্ভিস দিয়ে থাকে। ভালো প্রোডাক্ট আমরা দিয়ে থাকি৷ আমাদের প্রোডাক্টে আজ অব্ধি কোনো অভিযোগ আসেনি আলহামদুলিল্লাহ। কাস্টমারদের সাথে আমাদের রিলেশন ভালো এবং আমরা নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি দিয়ে থাকি। নারী উদ্যোক্তাদের সুযোগ অনেক। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নারীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ করে দিয়েছেন। উই গ্রুপের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপুও আমাদের নারীদের যোগ্য এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। যাতে আমারা স্বনির্ভর হই। উই গ্রুপের মাধ্যমে লাখো নারী স্বনির্ভর হয়েছে। সুযোগ অনেক আছে, কিন্তু এখনো নারীরা সামাজিকতা এবং নানা পারিপার্শ্বিকতা চিন্তা করে ওইভাবে এগিয়ে আসছেনা। তবে আমি মনে করি তাদের আরো এগিয়ে আসা উচিত। কেননা বর্তমান সময়ে নারীদের জন্য অনেক কাজের ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। প্রতিটি কাজেই প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। এখনো আমরা পুরুষ মনতান্ত্রিক সমাজেই বাস করছি। পরিবার থেকে সাপোর্ট দেয় সেই উদাহরন খুব অল্প। বেশির ভাগই সাপোর্ট দেয়না। আবার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী পুরুষ, তাই প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে প্রতিবন্ধকতা অনেক আসে। এসব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করেই এগিয়ে চলতে হবে। আমার মাসিক আয় আলহামদুলিল্লাহ ভালো এবং আমাদের সার্ভিস নিয়েও কাস্টমার সন্তুষ্ট। সরকারি-বেসরকারি কোনো সুবিধা এখানো নেয়া হয়নি। ভবিষ্যতে নিয়ে এর উত্তম ব্যবহার করবো ইনশাআল্লাহ। প্রতিষ্ঠানের অর্জন কাস্টমার সন্তুষ্টি। তাদের আস্থা রয়েছে আমাদের প্রতি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। যাতে করে একটি অনুকরণীয় ব্র্যান্ড হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠান কে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। আগামী ৫ বছর পর নিজ ব্র্যান্ডের একটি সফল শোরুম দেখতে চাই এবং ই-কমার্স খাতে অনন্য ভূমিকা পালন করতে চাই।
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231562 views