উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা মাত্র ১৫০ টাকা দিয়ে উদ্যোগ শুরু করেন নুসরাত ইসলাম সোহানা By নিজস্ব প্রতিবেদক June 22, 20224 ShareTweet 4 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা নুসরাত ইসলাম সোহানার সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। আমি নুসরাত ইসলাম সোহানা। আমার জন্ম নারায়ণগঞ্জ কিন্তু বেড়ে ওঠা ঢাকার বসুন্ধরাতে। সরকারি কালাচাঁদপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি. কমপ্লিট করেছি। ঢাকায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ স্কলারস এ বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমার উদ্যোগের নাম “বাংলার পাঁচফোড়ন” ও “মিরাব-সিক্রেট হেয়ার অয়েল”। কাজে উৎসাহিত করার পেছনে আমার স্বামী ও মায়ের অনুপ্রেরণা ছিলো। অর্গানিক সকল ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করছি। তবে আমার সিগনেচার পণ্য সিক্রেট হেয়ার অয়েল ও হেয়ার প্যাক। শুরুটা ছিলো ২০১৭ সালে। আমার এস.এস.সি কমপ্লিট করার পর একটা অনলাইন পেইজ খুলি, তবে তেমন কিছু বুঝতাম না। এরপর ২০১৮ তে কাস্টমাইজড ড্রেস নিয়ে কাজ শুরু করি এবং আলহামদুলিল্লাহ ভালো রেসপন্স পাই৷ তবে তখনো শেখার অনেক কিছু বাকি ছিলো। Women and e-Commerce Trust (WE) গ্রুপে আমার এক বান্ধবী বুসরা ইসলাম এর মাধ্যমে জয়েন হই। সেখানে সবার জীবন পরিবর্তনের গল্প দেখে নিজের উদ্যোগ কে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আরো প্রবল হয়। এই গ্রুপ থেকে বিভিন্ন ধরনের মাস্টার ক্লাস ও ট্রেনিং এর মাধ্যমে অনেক কিছু শিখেছি যা আমার উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক ভূমিকা রেখেছে। তাছাড়া করোনাকালীন সময় আমার স্বামীর চাকরি ছিলোনা, তখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিলো। আমার উদ্যোগের শুরু হয় ১৫০টাকা দিয়ে। বর্তমানে আমার স্বামী ও আমি দুজন মিলে আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করছি। একজন সফল উদ্যোক্তার সবচেয়ে অপরিহার্য গুণ গুলোর একটি হলো সত্যিকারের সুযোগ খুঁজে বের করতে পারা। সত্যি বলতে একজন উদ্যোক্তার প্রধান কাজই এটি। মানুষের এমন একটি সমস্যা খুঁজে বের করা, যা এখনও কেউ সমাধান করছে না; তারপর সেই সমস্যাকে সুযোগ হিসেবে দেখে তার সত্যিকার সমাধান খুঁজে বের করা এবং সেই সমাধান কাজে লাগিয়ে উপার্জন করা। একজন সফল উদ্যোক্তার মাঝে অবশ্যই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার গুণটি থাকতে হবে। একজন ভালো উদ্যোক্তা তাঁদের কাজ ও ব্যক্তিগত ব্যাপারে সবকিছুই খুব সুন্দর করে ম্যানেজ করতে পারেন। বড় বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস ও যোগ্যতা তাদের আছে, যা অন্য অনেকের মাঝেই নেই। যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে একদম সামনে তাদের পাওয়া যায়। তারা শুধু পেছন থেকে নির্দেশ দেন না। আমার ছোট ব্যবসা তাই এখনো কোনো কর্মী নেই। তবে আমার সার্বিক সহযোগিতায় সবসময় মা ও স্বামীর সাপোর্ট পাই। আসলে চাকরির প্রতি ঝোক আমার তেমন ছিলো না। আমি যখন বুঝতে শিখি তখন থেকেই ইচ্ছা ছিলো নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। চাকরি জীবনে আমার মনে হয় স্বাধীনতা নেই, কিন্তু আমরা উদ্যোক্তারা চাইলেই নিজেদের জন্য আলাদা সময় বের করতে পারি। তাছাড়া চাকরি পাওয়া বর্তমান আকাশের চাঁদ ধরার মতো। আমি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এখানে সব ধরনের অরগানিক পণ্যের সার্ভিস দিয়ে থাকি। গুনগত মানসম্পন্ন পণ্য আমরা দিয়ে থাকি৷ এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি আলহামদুলিল্লাহ। কাস্টমারদের সাথে আমাদের রিলেশন ভালো এবং আমরা নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি দিয়ে থাকি। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগে বস্ত্র, গয়না, সাংসারিক পণ্য, শিশু খাদ্য, প্রসাধনীর আধিক্য দেখা গেলেও সীমিতসংখ্যক সেবা ও প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো। এই মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের তুলনামূলক বেশি উপস্থিতি লক্ষণীয়। একটু গভীরে গেলেই বোঝা যায় যে সামাজিক, পারিবারিক দায়বদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা বিশেষ বাধা হয়ে দাঁড়ায় না বলে অনলাইন উদ্যোগে নারীদের এই স্বাচ্ছন্দ পদচারণা। একটা সময় ছিলো যখন দেশের মানুষ বিদেশি পন্যের দিকে আসক্ত হয়ে উঠছিলো দিন দিন। সেখান থেকে মানুষ আবার ফিরে এসেছে দেশি পণ্যের কাছে। এর কারন হচ্ছে ই- কমার্স প্ল্যাটফর্ম। আজ হাজারো নারী উদ্যোক্তা কাজ করছেন দেশী পন্য নিয়ে। দেশের মানুষের কাছেই শুধু নয়, বিদেশেও তারা প্রচারনা চালাচ্ছেন। দেশীয় হাজার হাজার পন্য কে তারা পরিচিতি এনে দিচ্ছেন। আমার দেশের কত কত পন্য আছে যেগুলোর নামই আমি জানতামনা। ই-কমার্সে আসার পর জেনেছি। আমাদের ঐতিহ্য বহন করে যে নকশি কাঁথা সেটাও দিন দিন মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের প্রায় অর্ধেক নারী। তারা একটা সময় অবহেলিত, নির্যাতিত ছিলো কোনো না কোনো ভাবে। কারন তাদেরকে অন্যের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হতো। আজ দিন বদলেছে। সফল নারীর সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। আর নারীদের এগিয়ে নেয়ার জন্য নাসিমা আক্তার নিশা আপু অনেক কিছু করছেন।হাজার হাজার নারী আজ স্বাধীন। তারা নিজের একটা জায়গা তৈরি করতে পেরেছে। নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে পেরেছে। সংসারে স্বামীর পাশে, বাবার পাশে, ছেলের পাশে দাঁড়াতে পারছে। বেশিরভাগ টিভি অনুষ্ঠানে বা খবরে নারীদের দেশি শাড়ি পড়তে দেখা যায়। এটা অনেক বড় পাওয়া আমাদের জন্য। আমার মতে কাজে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। এখনো আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করছি। পরিবার থেকে সাপোর্ট দেয়ার উদাহরণ খুব অল্পই আমরা দেখতে পাই। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার পরিবার বেশ সহযোগিতা পরায়ন। আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করি আমার মা ও স্বামীর প্রচেষ্টায়। আমার মাসিক আয় আলহামদুলিল্লাহ ভালো এবং আমাদের সার্ভিস নিয়েও কাস্টমার সন্তুষ্ট। আমরা সবসময় কোয়ালিটি বজায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করি। সরকারি-বেসরকারি কোনো সুবিধা এখনো পাইনি। তবে এরকম কোনো সুযোগ আসলে ব্যবসায়ে তার সঠিক প্রয়োগ ঘটাবো ইনশাআল্লাহ। প্রতিষ্ঠান এর অর্জনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রিপিট কাস্টমার।বিক্রয় বৃদ্ধির এক অনন্য উপায় রিপিট কাস্টমার তৈরি করা। কম সংখ্যক কাস্টমারের কাছে স্বল্প সময়ের জন্য অতি লাভে প্রোডাক্ট বিক্রি না করে, বেশী সংখ্যক কাস্টমারের কাছে কম লাভে বিক্রি করে অনেক বেশী মুনাফা অর্জন করা যায় এবং এতে করে দীর্ঘদিন ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যায়। এই শিক্ষাটা আমাদের অর্জন করতে হবে। রিপিট কাস্টমার বাড়ানোতে মনোযোগ দিলে ব্যবসা অটোমেটিক বাড়বে। আগামী ৫ বছর পর নিজের পাশাপাশি আরো নারীদের সাবলম্বী করতে চাই। এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাই যাতে সবাই এক নামে চিনতে পারে। এছাড়া নিজস্ব কোম্পানি তৈরি করতে চাই।
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231562 views