উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা কোন বাধায় দমাতে পারেনি মনিরা আক্তারকে By নিজস্ব প্রতিবেদক June 30, 20220 ShareTweet 0 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন মনিরা আক্তার। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প। আমি মনিরা আক্তার। জন্ম ১৯৮৭ সালের ১৫ ই জুলাই। মুসলিম পরিবারের মেয়ে আমি। ছোটবেলা কেটেছে নানা বাড়ি মহাখালীতে। কারন আমার বাবা বিদেশে থাকতেন। তাই মা আর আমি নানা বাড়ি থাকতাম। বেড়ে ওঠা মামা খালাদের সাথে। সেখানেই পড়াশোনা ও আমার ছেলে বেলা কাটে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। বাবা একেবারে দেশে আসার পর থেকে মা-বাবা নানু বাড়ি থেকে চলে আসেন, আর আমি রয়ে যাই মায়ের ইচ্ছাতে নানু বাড়ি; যেহেতু পড়াশোনা করি। এখন আমরা দুই বোন, বাবা সাধারণ শ্রমিক নিয়ে কাজ করেন। আমার বিয়ে হয় ২০০৮ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী। মূলত তখন থেকেই জীবনের মানে বুঝতে শুরু করি। সংসার জীবনের শুরু থেকেই সমস্যা হচ্ছিলো। যুদ্ধ করছিলাম টিকে থাকতে। কোল জুড়ে আসে এরই মাঝে ছেলে। তবুও ঘরমুখি করতে ব্যর্থ হই স্বামী কে। ছোট বাচ্চা কে নিয়ে বাবার বাড়ি স্বামীর বাড়ি করে করে যুদ্ধ করে যাই সংসার টিকাতে। কাউকে বলতেও পারি নাই, কারন আমি বড় মেয়ে, মা হার্ট অপারেশন এর রোগী ও বাবা সাধারন শ্রমিক নিয়ে কাজ করেন। কিন্ত শেষে হেরে যাই। নিজেই ডিভোর্স দিয়ে বাবা বাড়ি কুড়িলেই চলে আসি একেবারে। তারপর বাচ্চা বড় হচ্ছে, তার লেখাপড়ার খরচ ও নিজের খরচ মেটাতে শুরু করি পড়ানো। কিন্তু একটা সময় দেখি শুধু পড়ানো দিয়ে হয় না, তাই নিজের হাতের কাজ কে শক্তি হিসাবে নিয়ে ঘরেই আশেপাশের সেলাই শুরু করি। এতেও পরিপূর্ণ হয় না। পরে জয়েন করি সেলাই শিখানোর জন্য যুব উন্নয়ন এ। ব্লক, বাটিক ও কাটিং সেখাই সাথে পড়াই। এমনি চলতে থাকে বেশ কয়েক বছর। পরে ছেলের খরচ বেড়ে যায়, তাই খুব কাছের এক বন্ধুর পরামর্শে চাকরি করা শুরু করি। কিন্তু সেখানে অন্যের অধীনে চাকরি করতে গিয়ে তাদের ব্যবহার নিয়ে আমি খুব হতাশ। জেদ হয় নিজে কিছু করবো, কিন্তু এতো টাকা কই পাবো??? তবু মনে সাহস ছিলো। কারন আমি ডিজাইনার, কাজ জানি। আমি পারবো হয়তো সময় লাগবে। তারপর শুরু একটু একটু করে। শুরুটা টেইলারিং দিয়ে। পরে যোগ করি ব্লক, বাটিক ও হাতের কাজ। সব কাস্টমাইজড কাজ করা শুরু করি। বিয়ের বা যেকোনো ইভেন্টের অর্ডার পরিচিত মহল থেকেই আসতো। চলছে এমন করেই। পরে “উই” তে কি করে জয়েন হই তা বলতে পারিনা। ওখানে নারীদের জীবন কাহিনী নিজের মাঝে আরো শক্তি জোগায়। পরে আরো কাজ করে নিজের পরিচিতি বাড়ে ‘উই’ থেকে। এক আপুর পরামর্শে অনলাইনে একটা পেইজ খুলি ছেলের সাহায্যে। ছেলের আর আমার ভাবনায় নামকরণ হয় “M A Dream” (এম এ ড্রিম)। সেখানে নিজের কাজের ছবি আপলোড দিতে থাকি আর ‘উই’ তে নিজের কাজ নিয়ে কথা লিখতে থাকি, রান্না ও কাজের ছবি দিতে থাকি। দেখলাম রান্নারও রেসপন্স আসা শুরু করে। যেহেতু আমি চাকরি করি এখনো, তাই রান্না তে শুধুমাত্র যারা সময় নিয়ে অর্ডার করেন তাদের অর্ডার নেই। কারন রান্নাটা নিজের মন থেকে নিজে সাথে থেকে করে দেই। পরবর্তীতে নিজেকে আরো প্রফেশনাল করতে লাইসেন্স করি “M A Dream” বুটিক হাউজের নামে। তারপর থেকে আলহামদুলিল্লাহ ভালো রেসপন্স পাই। নিজে সব একা করে উঠতে না পেরে দুইজন কর্মী কে আমার সাথে যুক্ত করি কন্ট্রাক্ট এ। এখন আলহামদুলিল্লাহ একটু একটু করে গুছিয়ে উঠছি। ইচ্ছা আছে চাকরি ছেড়ে আরো বড় আকারে করার, কিন্তু এখনো সময় লাগবে। আলহামদুলিল্লাহ কোনো পুঁজি ছাড়া আগাচ্ছি সাথে দুইজন কেও তাদের নিজের কিছু আয়ের পথ করতে পারছি। আমার মতে উদ্যোক্তা হতে কোনো কিছু লাগেনা। দরকার শুধু নিজের মাঝে ইচ্ছা আর তার পেছনে লেগে থাকা। চাকরি করে চলা যায় কিন্তু সচ্ছল জীবন গড়া যায় না। তবে অভিজ্ঞতার জন্য একটু চাকরি করা ভালো। আমার মতে নিজে কিছু করে আরো কর্ম সংস্থান করা খুব জরুরি। বর্তমানে পড়াশোনা শেষে অনেকেই চাকরি খোঁজেন, যা না করে নিজে কিছু করা ভালো, তাতে স্বাধীনভাবে চলা যায় সাথে আরো কর্মসংস্থান করে দেশের বেকার কমানো সহজ। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না খুঁজে নিজের একটা উদ্যোগ নেয়ার পক্ষে আমি। কারন সেখানে স্বাধীনতা থাকে আর নিজের মতো সব করা সম্ভব। যা চাকরি করে করা কোনো মতেই সম্ভব না। চাকরি করতে গিয়ে আমি আরো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি যা আমার মতো অনেকেই হয়েছেন। নিরাপত্তা বা নিজের যোগ্যতা যতোই চাই তা চাকরিতে নেই বা থাকেনা অনেক সময়। আমার “M A Dream” এর প্রাতিষ্ঠানিক বয়স এক বছর আলহামদুলিল্লাহ। বর্তমানে টেইলারিং, হাতের কাজ ও কাস্টমাইজড সব সেবা আমরা দিচ্ছি অনলাইন এবং অফলাইনে। আলহামদুলিল্লাহ কাস্টমার সন্তুষ্ট এই পর্যন্ত। চেষ্টা করি কাস্টমার কে ভালো সেবা দিতে। হয়তো অনেক সময় ভুল হয়ে যায় অজান্তেই। আমার শ্রম তুলনা করলে সেল পরিশ্রম থেকেও আলহামদুলিল্লাহ ভালো বর্তমানে। ক্রেতার সন্তুষ্টি আমার প্রতিষ্ঠানের মূল অর্জন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নারী উদ্যোক্তাদের জন্য মোটামুটি, কিন্ত টিকে থাকা চ্যালেঞ্জিং। প্রতিবন্ধকতা সব কাজের শুরুতেই থাকে আমাদের সমাজে। কিন্তু তা ভেবে বা ধরে বসে থাকলে নিজের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব না। কারণ শুরুতে কেউ সাপোর্ট করে না। সফল কে সবাই বাহবা দিতে আসেন। আমিও অনেক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে চলেছি। এখন একটু স্বাভাবিক হতে পেরেছি। সবাই একটু একটু সাপোর্ট করা শুরু করেছে, যা আমি শুরুতে পেলে হয়তো আরো আগাতে পারতাম। কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পাই নাই। আর এখনো কোন ঋন নেয়া হয় নাই। কারন আমার শুরুটাই হয়েছে শূন্য থেকে। আমার পরিকল্পনা একটু ভিন্ন। আমি চাই আমার “M A Dream” এমন একটা নাম হোক যেখান থেকে মানুষ অনলাইন-অফলাইন দুই সুবিধাই পাবে, সাথে এক ছাদের নিচে সব পাবে এবং সকল পন্য দেশীয় হবে। প্রতিটি জেলায় আউটলেট থাকবে আমার। সাথে আমি ট্রেনিং সেন্টার রাখতে চাই, যেখানে বেকার ভাই-বোন হাতের কাজ শিখে নিজেই নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। পাশাপাশি দুই একজন কে কাজের স্থান করে দিবেন। এতে বেকার কমবে সাথে কর্মসংস্থানও হবে।
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231562 views