উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা নারীদের স্বাবলম্বী হওয়াটা বেশি জরুরি: নূর-ই-নাজমীন লুনা By নিজস্ব প্রতিবেদক August 9, 20221 ShareTweet 1 উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা নূর-ই-নাজমীন লুনার সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। আমি নূর-ই-নাজমীন লুনা। আমার জন্ম পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শরীয়তপুর জেলায়। শৈশব, কৈশোর, বেড়ে ওঠা এবং পড়ালেখা সবটাই এই মফস্বল শহর শরীয়তপুরেই। সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট আমি। শিক্ষাজীবনে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে এলএলবি ফাইনাল ইয়ারে অধ্যয়নরত। ব্যক্তিগত জীবনে আমি একজন সিঙ্গেল মাদার। এসএসসি পরীক্ষার্থী ও ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া দুই কন্যাকে ঘিরেই আমার পৃথিবী। আজন্ম লালিত স্বপ্ন নিজের একটা পরিচয়ের। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা আমাকে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে জীবনের পথ চলা কতোটা কঠিন। জীবনের প্রয়োজনেই উদ্যোক্তা জীবন শুরু। চাকরির আয়ে মেয়েদের নিয়ে চলাটা কষ্টকর হয়ে পড়ছিলো। পাশাপাশি কি করা যায় এটা ভেবেই অনলাইনে কিছু করার চেষ্টা।“ঐতিহ্য-Oithijjo” ও “সাজবাহার-Saajbahar” নামে আমার দুটো ফেসবুক পেজ আছে। মূলত আমার কাজগুলো অনলাইন ভিত্তিক। আমি কাঁসা-পিতলের সামগ্রীসহ ঘি, হারবাল হেয়ার অয়েল, সরিষার তেল, মাস্ক, মেয়েদের পোশাক ইত্যাদি নিয়ে কাজ করি। উদ্যোগের শুরুটা ছিলো ২০২০ সালের ১৬ মার্চ থেকে। যদিও আমি প্রথম ফেজবুক পেজ “সাজবাহার” খুলেছিলাম ৩০ মার্চ, ২০২০ তারিখে এবং “ঐতিহ্য” পেজের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। হঠাৎ লকডাউন দেয়ার কারণে মেয়েদের টিউশন ফি পরিশোধ করার আগেই টিউটররা দেশের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। মেয়েদের সেই টিউশন ফির ৫,০০০ টাকা নিয়েই শুরু করেছিলাম। শুরুটা মূলত হাতের কাজের থ্রিপিস দিয়ে করেছিলাম। এক মাসেই আমার বিক্রি হয়েছিলো ১ লাখ টাকার উপরে। যদিও অধিকাংশটা অফলাইনেই হয়েছিলো। তবুও অনলাইনেও শুরুটা মন্দ ছিলো না। তারপর কাঁসা- পিতলের সামগ্রী, হারবার হেয়ার অয়েল, হোমমেইড ঘি, সরিষার তেল, মাস্ক ইত্যাদি নিয়ে কাজ শুরু করি। এখানেও ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। একজন উদ্যোক্তা হতে গেলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন, লেগে থাকার মতো ধৈর্য্য এবং অবশ্যই কাজ করার মতো ইচ্ছাশক্তি। এছাড়াও একজন সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে নিজের সফ্ট স্কিলগুলোর দক্ষতা বাড়াতে হবে, ক্রিয়েটিভ মনোভাব থাকতে হয় এবং অবশ্যই রিস্ক নেয়ার মতো মনোভাব থাকতে হবে। নিজের যোগ্যতায় নিজের একটা পরিচয় আমার আজন্ম স্বপ্ন। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে একটা সময় চাকরি করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু অন্যের আওতায় কাজ করাটা আমার কখনোই ভালো লাগতো না। আমি স্বাধীনচেতা মানুষ। নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য আমার কাছে অনেক। কিন্তু চাকরিতে নিজস্ব স্বাধীনতা বলতে তেমন কিছু থাকে না। তাই উদ্যোক্তা জীবনটাকে আমার কাছে সাবলীল ও শান্তির মনে হয়। আমি মনে করি, প্রতিটি মানুষকে স্বাবলম্বী হওয়া উচিত। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়াটা আরো বেশি জরুরি। কিন্তু একজন নারী তার সংসারকে ভালোবাসে ভীষণ। চাকরি করতে গেলে তাকে অনেকটা সময় বাইরে কাটাতে হয়। তখন তাকে নিজের সংসার ও বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়। তাই আমি মনে করি, বর্তমানে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের উদ্যোক্তা জীবন অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের ও নিরাপদ। যেকোনো কাজে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই। আমার প্রতিষ্ঠানের কিছু পন্যের কাঁচামাল সংগ্রহ, তৈরি থেকে শুরু করে পণ্যের প্যাকেজিং এবং ডেলিভারি ম্যানের হাতে পৌঁছে দেয়ার যাবতীয় কাজ আমি নিজেই করে থাকি। তবে মেয়েরা তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি প্রায়ই আমাকে এসব কাজে সাহায্য করে থাকে ৷ আরও পড়ুনঃ উদ্যোগ শুরু করতে অনেক যুদ্ধ করতে হয়- রায়হানা আক্তার আন্নি শরীয়তপুর সদরের মধ্যে পন্যের ডেলিভারিগুলো নিজেই করি। কিন্তু আমি যেহেতু শরীয়তপুরের মতো মফস্বল শহর থেকে উদ্যোগ পরিচালনা করে থাকি, সেক্ষেত্রে উদ্যোগের কাঁচামাল সংগ্রহ এবং ডেলিভারির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয়। তবে যখন কেউ হঠাৎ দেখায় বলে, আপনি শরীয়তপুরের নারী উদ্যোক্তা লুনা আপু না! তখন সত্যিই ভীষণ ভালো লাগে। এখন পর্যন্ত আমার প্রতিষ্ঠানের মোট সেল ৫,৬৯,২৪০ টাকা। অধিকাংশরাই আমার রিপিট কাস্টমার এবং এখন পর্যন্ত আমার কোনো পন্যের একটাও নেগেটিভ রিভিউ আমি পাইনি আলহামদুলিল্লাহ। আমার প্রতিষ্ঠানের/আমার উদ্যোগের এটা একটা বড় পাওয়া আমার কাছে। আমি এ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো অনুদান পাইনি। তবে নারীদের নিয়ে গঠিত এশিয়ার সবচেয়ে বড় অনলাইন গ্রুপ “Women and e-Commerce Trust (WE)” গ্রুপটি আমাকে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যেতে অনেক ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে আমি ‘উই’ গ্রুপের শরিয়তপুর জেলা সহযোগী কোঅর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্বরত আছি। আমার উদ্যোক্তা জীবনে আমি রাজিব আহমেদ স্যার এবং নাছিমা আক্তার নিশা আপুর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। উনাদের কথাগুলো আজও আমাকে নতুন করে পথ চলতে, স্বপ্ন দেখাতে সাহায্য করে। আমার প্রতিষ্ঠানটিকে আমি একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমার অনলাইন শপের পাশাপাশি শো-রুম থাকবে এবং এক নামে যেনো সবাই আমার প্রতিষ্ঠানকে চিনতে পারে। আমার পণ্যের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই আমার স্বপ্ন। আজ থেকে ৫ বছর পর আমি নিজেকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে এমন একটা আসনে দেখতে চাই, যেখানে এক নামে আমাকে চিনবে।
ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের হাত ধরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ই-কমার্স ক্লাবের February 8, 20231560 views