উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

ঝুঁকি নিয়ে উদ্যোগ শুরু করা মুর্শিদা সুলতানা আজ সফল উদ্যোক্তা

1
cover 2

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন মুর্শিদা সুলতানা। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আমি মুর্শিদা সুলতানা। আমি একজন উদ্যোক্তা। কাজ করছি মিরপুর ২ থেকে। আমি নোয়াখালীর মেয়ে। পাশের জেলা লক্ষীপুর এর বউ।

আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্পটা শুরু হয়েছিলো আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। ছোট ছোট চেষ্টায় উদ্যোক্তা হিসেবে পথ চলা শুরু হয়েছিলো। আজও তার ব্যতিক্রম নয়।

আমি একটু ধীরেই চলি। ছোটবেলা থেকে অনেক স্বপ্ন দেখতাম বড় হয়ে গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে কিছু একটা করবো। মনে প্রবল ইচ্ছা ছিলো কিছু করার।

আমার ফ্যামিলি খুব কনজারভেটিভ ছিলো। সেই পরিস্থিতিতে একমাত্র ভরসা ছিলো নিজে কিছু করার। আর তখন থেকেই উদ্যোগ নিয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখতাম। স্বাধীনভাবে নিজের মতো চলাটা উপভোগ করতাম ছোট থেকেই।

নিজের মত প্রকাশের সুযোগ খুঁজতাম সব সময়। আর সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে আমার পথচলা শুরু। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার জার্নিটা খুব একটা সহজ ছিলো না।

আমার মনে হয় উদ্যোক্তা মানেই ঝুঁকি। ঝুঁকি ছাড়া উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। আমি প্রথমে আমার হাতের তৈরি করা কিছু আচার ও আমসত্ত্ব নিয়ে উদ্যোগ শুরু করি। আমার সিগনেচার পণ্য আমসত্ত্ব।

আস্তে আস্তে আমি বিভিন্ন গ্রুপে আমার তৈরি বিভিন্ন ফলের আচার, আমসত্ত্ব পোস্ট দিতে শুরু করি। এতে করে আমি আমার পণ্যের দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে অল্প সময়ে বেশ সাড়া পেয়েছি। বিভিন্ন গ্রুপ থেকে প্রবাসী ভাই-বোনেরা তাদের দেশি রিলেটিভ দিয়ে কয়েক কেজি করে আমসত্ত্ব এবং আচার নিয়ে যেতো।ftre 2এভাবে আমি অল্প সময়ে সফলতার মুখ দেখতে পেয়েছি। খুব অল্প দিনেই লাখপতি হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর আমি নিজের প্রোফাইলে আচার ও আমসত্ত্ব পোস্ট দেয়া শুরু করি। আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকি। নিজ প্রোফাইলে আচার, আমসত্ত্বের পোস্ট করার পরে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং মজবুত হতে শুরু করে।

আমি আজ আমার যে ব্র‍্যান্ডিং টুকু করতে পেরেছি সবটুকু আমার নিজের চেষ্টা দিয়ে করেছি। এতে প্রচুর অর্ডার আসে। এখন এক হাতে কাজ সামলানো অনেক কষ্ট হয়ে যায়।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। আমি একবার আমসত্ত্ব তৈরি করার জন্য প্রায় ৩০ মণ আম কিনি। ঐ আম রাখার জন্য ৩০০ লিটারের একটা বড় ডিপ ফ্রিজ কিনি। কিন্তু আমার বাসায় আগে থেকে বড় বড় ২টা ফ্রিজ ছিলো। ওই আমগুলো দিয়ে আমসত্ত্ব তৈরি করি। আমসত্ত্বের টেস্ট ভালো আসেনা দেখে সব আম আমি ফেলে দিই। এতে আমার বড় ধরনের লোকসান হয়ে যায়।

আমি অনেক ভেঙ্গে পড়ি। কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে সাহস ও শক্তি দিয়েছেন। আমি কখনো পণ্য নিয়ে ভয় পেলে আমার বাবা-মা আমাকে সাহস, সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

আমি যখন নিজের উদ্যোগে কাজ শুরু করি, ঠিক তখন থেকেই আমার মা আমাকে পরিপূর্ণ সাপোর্ট করে গেছেন। তিনি আমার প্রথম, সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তিনি আমার সাহস, আমার শক্তি।

আমার উদ্যোগের প্রথম দিকে আমার হাজব্যান্ড নিজেই ডেলিভারি ম্যান হিসেবে আমার পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আমার ছেলেরা আমাকে প্যাকেজিং করতে অনেক হেল্প করেছে। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে আমার হাজব্যান্ডও বাচ্চাদের অনেক অবদান রয়েছে।

তারপর আমি আমার উদ্যোগে নতুন পণ্য যোগ করেছি। আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্য যা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে কাঁসা পিতল। কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র নিয়ে কাজ শুরু করি। আমার পেইজের নাম- Ms Kitchen এবং ইউনিক কাঁসা পিতলের তৈজসপত্র।

আমি নিজস্ব কারিগর দিয়ে কিছু ইউনিক জিনিসপত্র তৈরি করে আমি আমার প্রোফাইলে পোস্ট করি। পোস্ট করার পরে আমি ব্যাপক সাড়া পাই। তারপর আমি চালের গুড়ার সেমাই যোগ করি।

আরও পড়ুনঃ মায়ের অনুপ্রেরণায় টেইলারিংয়ে স্বপ্ন বুনছেন জেরিন সুলতানা পলি

আমের সিজনে ২০ জন কর্মী সিজনাল আমের কাজ করেন। আর অন্য সময় আরো ৭ জন কর্মী সব সময় সহযোগিতা করে আসছে। এতে করে তাদের একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। আমি খুবই আনন্দিত, অন্তত সামান্য কিছু লোকের জন্য কিছু করতে পেরেছি।

আমার কোনো দোকান বা শোরুম নেই। আমি বাসা থেকেই তিন বাচ্চাকে সময় দিয়ে পাশাপাশি আমার অনলাইন বিজনেস টাকে চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষ দোকানে-দোকানে, পথে-পথে সেল করে। আমি গ্রুপে গ্রুপে সেল করি। তাই আমি নিজেকে ডিজিটাল হকার মনে করি।

আমি যখন উদ্যোগ শুরু করলাম তখন চারপাশের মানুষগুলো অনেক সমালোচনা করতো। আমি বহুভাবে মানুষের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছি। যখন উদ্যোগের প্রথমদিকে আমি আমার প্রোফাইলে আচার, আমসত্ত্ব এর ছবি পোস্ট করি। অনেক মানুষ আমাকে নিয়ে হাসা-হাসি করতো। অমুকের মেয়ে, অমুকের বউ ফেসবুকে এসে খাবার, আচার, আমসত্ত্ব বিক্রি করে। এতে আমার খুব খারাপ লাগতো। তখন চারপাশের হাওয়ায় ভাসা কথাগুলো শূন্যে উড়িয়ে দিতে শুরু করলাম। তারপর থেকে কোনো খারাপ লাগা নেই।

জীবনে নিজের চেষ্টায় এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে নিজেকে। আমি কিন্তু কোনো ভাবেই হাল ছাড়িনি। আমার স্বপ্ন অনেক দূর যাওয়ার। বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তা হিসেবে টিকে থাকা অনেক কঠিন। কারণ একই পণ্য নিয়ে আমরা অনেকে কাজ করি।

আমি মনে করি ব্যবসা মানে প্রতিযোগিতা। এতে পিছিয়ে গেলে চলবেনা। এছাড়াও আমি রান্না নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে সার্টিফিকেট ও পুরষ্কার পেয়েছি। এভাবে আমি আস্তে আস্তে সফলতার দিকে পৌঁছে যাচ্ছি। আমার প্রতি আমার আত্মবিশ্বাস আছে। সেই আত্মবিশ্বাসই আমার এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। উদ্যোক্তা হওয়ার মাদকতা ছিলো আমার শিরা-উপশিরায়।

সফল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হলো এটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা যে আপনি সফল হবেন। বাঁধা যতোই আটকে রাখার চেষ্টা করুক সফলতার বিশ্বাস মনেপ্রাণে নিয়ে নিজের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

২০২৩ সালে EDF গ্রুপে এক্টিভ হই। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক সাপোর্ট পেয়েছি EDF থেকে। EDF এর বিভিন্ন কনটেস্টে অংশগ্রহণ করে প্রাইজ মানি সহ সার্টিফিকেট পেয়েছি।

উদ্যোক্তা জার্নাল/মাসুদুজ্জামান রাসেল

দূর্গা পূজার কেনাকাটা হোক আহর্সি থেকে

Previous article

আমার প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ অর্জন কাস্টমারের সন্তুষ্টি : রওনক জাহান

Next article

You may also like

1 Comment

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *