উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

আন্তর্জাতিক বাজারেও নিজ পণ্যের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চান অনুভা

1
WhatsApp Image 2022 07 05 at 3.14.15 PM 1

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা ইশরাক বিনতে ইসহাক অনুভার সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

আমি ইশরাক বিনতে ইসহাক অনুভা। হঠাৎ করেই ২০১৫ সালে শখের বসে উদ্যোগ নিয়েছি। তখন সমর্থনকারী হিসেবে ছিলেন স্বামী সালাদিন বিন রউফ। কারণ মনে হয়েছিলো চাকরির পাশাপাশি কিছু করার দরকার রয়েছে। প্রথম প্রথম খুব সিরিয়াসলি বিষয়টা শুরু করিনি, আর পরিচিতি টা শুধুমাত্র পরিবার আর বন্ধুদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো। ২০২০ সালে ‘উই’ তে যোগদান এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে অনুপ্রাণিত হতে শুরু করি। বুঝতে পারি, যে উদ্যোগ নিয়েছি সেটাকে সফল করার একটা পথ আমি দেখতে পারছি।

আমার পরিচিত আত্মীয়-স্বজন যারা দেশের বাইরে থাকেন, তাদের অনেক আফসোস যে তারা দেশীয় পন্যগুলো নিজের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে নিতে পারেন না। তাদের কথা চিন্তা করেই আমার এমন উদ্যোগ হাতে নেওয়া। যার জন্য প্রতি মাসেই আমার পন্য বিদেশের মাটিতে পা রাখছে।

আমার উদ্যোগের নাম “বিনতে”। আমরা মূলত মেয়েদের পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করি। আমার উদ্যোগে এখন আমার বোন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। সে হাতে বানানো জুয়েলারি নিয়ে আমার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। বর্তমানে আমরা ফুল ফ্যামিলি ম্যাচিং আউটফিট, ডিজাইনার প্যান্ট, ডিজাইনার পার্টি শাড়ি আর তার সাথে ম্যাচিং করে হাতে বানানো জুয়েলারি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

আমার উদ্যোগের মূলধন ছিলো ৫,০০০ টাকা। আমি আর আমার স্বামী একটা ফেসবুক পেইজ খুলে আমাদের উদ্যোগের যাত্রা শুরু করি। সেখান থেকেই অর্ডার কনফার্ম হতো। আমার অফিসে সবাই অনেক সাপোর্ট করতো আর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরাও পছন্দ করতো। যদিও শুরুটা করেছিলাম মেয়েদের পোশাক নিয়ে তবে সেটা সাপ্লাইয়ারের কাছ থেকে কিনে সেল করতাম, যার কারণে ইউনিক বিষয়টি একদম ছিলো না। তাই ধীরে ধীরে বিজনেস স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করে কাস্টমাইজ পোশাক নিয়ে কাজ করা শুরু করলাম নতুন করে, যা কিনা একদম আমাদের দেশীয় পন্য।

আমার কাছে মনে হয়, একজন উদ্যোক্তা হতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার ইচ্ছা শক্তি আর লেগে থাকার মন মানসিকতা। কারণ আমি এখনও প্রতিনিয়ত শিখছি। বর্তমানে আমার উদ্যোগের সকল কাজ আমি, আমার স্বামী আর বোন সুপ্রভা দেখাশোনা করছি। আমাদের আলাদা কোনো কর্মচারী নেই।

আমি আসলে এখনো চাকরি আর উদ্যোগ দুইটাই সমানভাবে সামলাচ্ছি। তবে এখন দিন বদলে গেছে, সবারই কোনো না কোনো উদ্যোগ এর সাথে জড়িত থাকা উচিত।

আমার উদ্যোগে আমরা সবসময় একটা মানসম্মত আর ইউনিক পন্য সকলের হাতে তুলে দেয়ার আশা রাখছি। আর অবশ্যই সেটা বাজারমূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। আমি বলবো না আমাদের সকল কাস্টমার ১০০% সন্তুষ্ট। আমরা এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি এই বিষয়ে আর আমাদের ১০-১২ বারের রিপিট কাস্টমারও রয়েছে, যার থেকে বুঝতে পারি আমাদের পণ্যের মান সম্পর্কে। আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের পণ্যের মান উন্নয়নে চেষ্টা করে যাচ্ছি কাস্টমার এর সাথে ফোনে কথা বলে অথবা মেসেজে ফিডব্যাক নিয়ে।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট এখন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একদম উপযোগী। তাইতো দিন দিন নারী উদ্যোক্তা বাড়ছে আলহামদুলিল্লাহ। তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা এখনো পাইনি আমার উদ্যোক্তা জীবনে।

‘উই’ তে আমি একজন লাখপতি সেটা দীর্ঘ আট মাস চেষ্টার ফল। অনলাইনে আমাদের এখন পর্যন্ত সেল আনুমানিক ৮ লাখ টাকার মতো। আমাদের কাস্টমার ৯০% সন্তুষ্ট আর ৬০% কাস্টমার আমাদের রিপিট। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পাইনি।

আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, দেশে-বিদেশে “বিনতে” কে একটা ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করা পরিচিতি বাড়িয়ে নেয়ার সাথে সাথে।

কোনো সহায়তা ছাড়াই আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে উদ্যোক্তা পথ বেছে নেন জিনিয়া

Previous article

বেকারত্ব দূর করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করতে চান উদ্যোক্তা নাসির আহমেদ

Next article

You may also like

1 Comment

  1. অনেক শুভ কামনা রইল আপু আপনাদের দুজনের জন্য আর আপনার উদ্যোগের জন্য।

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *