উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

উদ্যোগ শুরু করতে অনেক যুদ্ধ করতে হয়- রায়হানা আক্তার আন্নি

1
Cherry Blossom Watercolor Facebook Cover 3

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন রায়হানা আক্তার আন্নি। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আসসালামু আলাইকুম। আমি রায়হানা আক্তার আন্নি। কাজের ক্ষেত্রে সবাই আমাকে নিখুঁত রায়হানা বলে ডাকে ও চিনে। আমার হোম ডিস্ট্রিক্ট চট্টগ্রাম। আমি লক্ষ্মীপুর জেলার বৌ। জন্ম ঢাকায় ১৯৯৪ সালের ১১ ই নভেম্বর ও বেড়ে ওঠা ঢাকার উত্তর বাড্ডা তে। লেখাপড়াও ওখানে। তবে বর্তমান ঠিকানাঃ পশ্চিম নাখালপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।

আমার একটা সময় ডিপ্রেশন থেকে মনে হয়েছিলো সুইসাইড করবো, সুইসাইডই বড় সমাধান। সুইসাইড করতে গিয়ে মনে হলো এই ডিপ্রেশন এর কষ্ট নিতে পারছিনা, আখিরাতের কষ্ট কি করে সহ্য করবো? তারপর কিছু উদ্যোক্তা তৈরি করার গ্রুপে অনুপ্রেরণামূলক পোষ্ট পড়তে শুরু করি। সেখান থেকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পাই। এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আজ এখনো এই পর্যন্ত পথ চলা।

আমি কাজ করছি গহনা ও নানারকম হাতে তৈরি দেশি পণ্য নিয়ে। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম “নিখুঁত ফ্যাশন কালেকশন হাউজ”। আমার সিগনেচার প্রোডাক্ট হলো হাতে তৈরি গহনা। আমি হ্যান্ড পেইন্ট কাঠের গহনা, পাটের গহনা, মেটাল গহনা, আর্টিফিশিয়াল গহনা, গামছা গহনা, সুতার গহনা, পুঁথির গহনা ও গহনা তৈরির যাবতীয় উপকরণসহ পাইকারি ও খুচরা নানারকম দেশি শাড়ী, পাঞ্জাবি এবং ড্রেস নিয়ে কাজ করছি।

আমার প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকরা তাদের সুবিধা অনুযায়ী সার্ভিস পাচ্ছে। ঢাকার ভিতর ক্যাশ অন ডেলিভারিতে ও ঢাকার বাইরে ৫০% এডভান্স পেমেন্টে ডেলিভারি সুবিধা পাচ্ছে। আমার শুরুটা ছিলো খুবই কঠিন। অনেক যুদ্ধ করতে হয় উদ্যোগ শুরু করতে। আর মূলধন ছিল মাত্র ৭ হাজার টাকা।

একজন উদ্যোক্তা হতে প্রয়োজন সাহস, আপ্রাণ চেষ্টা ও ইচ্ছাশক্তি। আমার প্রতিষ্ঠানে এখনো কোনো কর্মী নেই। পুরোপুরি আমি নিজেই দেখাশোনা করছি।

আমি প্রথমত একজন গৃহিণী, তারপর একজন মা। সেহেতু আমার মনে হলো ঘরে বসে কাজ টা আমার জন্য অনেক সুবিধাজনক। কাজের পাশাপাশি আমি সংসারে সময় দিতে পারবো, তাই চাকরি খোঁজার চেয়ে একজন উদ্যোক্তা হওয়াটা আমি মনে করেছি সঠিক সিদ্ধান্ত।

আমার প্রতিষ্ঠান আমার গর্ব, আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমি আমার দেশ এবং দেশীয় ঐতিহ্য কে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবো। কর্মসংস্থানের একটি জায়গা তৈরি করবো আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের উদ্যোক্তা হওয়াটা একটু কষ্টকর, কারণ নারীদের নিয়ে ট্রল টা একটু বেশি হয়। তবুও আমরা অনেক প্রতিবন্ধকতা ভেঙে এগিয়ে যেতে পেরেছি। সেজন্য নারী উদ্যোক্তারা এখন বেশ এগিয়ে।

প্রতিবন্ধকতার খুব ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার, অনেক কিছু ফেইস করতে হয়েছে। অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, কুরুচিপূর্ণ অনেক কথা ও আচরণের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

সেল এখন তেমন না হলেও টুকটাক করে হয় আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের কাস্টমার একবার প্রোডাক্ট নিলে অনেক খুশি, আস্থাভাজন এবং রিটার্ন কাস্টমার হয় আলহামদুলিল্লাহ। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি এখনো।

আমার প্রতিষ্ঠানের অর্জন ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ হস্তশিল্প এসোসিয়েশন এর বাংলাদেশের ফ্যাশন আইডল বিবি রাসেল ম্যাম এর উপস্থিতিতে, আমার প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট ফ্যাশন এ উপস্থাপন করার সুযোগ আমার জন্য অনেক বড় অর্জন। আর দ্বিতীয়তো আমার প্রতিষ্ঠান এর অর্জন, আমার কাস্টমার এর বিশ্বাস, ভালোবাসা ও তাদের আস্থা থেকে রিটার্ন কাস্টমার পাওয়া।

আমার প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, প্রোডাক্ট ব্র‍্যান্ডিং আরো ভালোভাবে করা আর দেশে-বিদেশে নিজের প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন করা। প্রতিষ্ঠান কে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি। আমি চাই আমার প্রতিষ্ঠান অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও সাফল্য অর্জন করবে এবং এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান হবে।

আগামী ৫ বছর পর নিজেকে নিজের বিশ্বাসের কাছে নিজের কাজের দ্বারা পরিচিত হতে দেখতে চাই। এছাড়াও আমার প্রতিষ্ঠানের আয় দিয়ে কমপক্ষে ১০ জন এতিম বাচ্চার ভরনপোষণের দ্বায়িত্ব নিতে চাই।

যেভাবে সেদ্ধ করলে মাংসের আলু কাঁচা থাকবে না

Previous article

ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও বিচক্ষণতার প্রতীক বঙ্গমাতা- আব্দুর রহমান

Next article

You may also like

1 Comment

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *