উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

পাটের গহনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চান ফারজানা তাবাসসুম রুদাবা

0
290147806 1127985221084902 3529348699847498985 n

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, নিজের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেছেন ফারজানা তাবাসসুম রুদাবা। চলুন শুনি তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আসসালামু আলাইকুম। আমি ফারজানা তাবাসসুম রুদাবা। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ২০০৯ সালে এস.এস.সি ও ২০১১ সালে এইচ.এস. সি পাশ করি। ২০১২ তে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর চাকরির সুবাদে তার গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর ট্রান্সফার হতে হয়। তারপর একে একে দুটি সন্তানের মা হই। তবে এত কিছুর মধ্যেও স্বামীর সহোযোগিতায় গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করি।

নিজে কিছু করার ইচ্ছা সবসময়ই ছিলো। ছোটবেলা ব্যাংকার হতে চাইতাম। তবে যত বড় হই সেই ইচ্ছা ক্রমশ কম হতে থাকে। আমার মা সবসময়ই চাইতো আমি সাবলম্বী হই। আমার স্বামী আমাকে সবসময়ই এই ব্যাপারে প্রচুর উৎসাহ দেয়। তার অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমি আমার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করি। বর্তমানে আমার একটি অনলাইন পেইজ আছে। আমার পেইজের নাম “আমার পণ্য”।

উদ্যোগের শুরুটা ছিলো ২০২০ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর। অনেক দিনের জমানো মাত্র ৬,০০০ টাকা নিয়ে শুরু করি। শুরুটা মূলত বেবি নকশীকাঁথা দিয়ে করেছিলাম। আর সাথে কিছু থ্রি-পিসও ছিলো। তারপর ধীরে ধীরে যশোর, জামালপুরের বিখ্যাত কিং সাইজ নকশীকাঁথা নিয়েও কাজ করি। শীতের সময়ে খাঁটি মধু ও খাঁটি ঘি নিয়েও কাজ করা হয়। তবে আমার সিগনেচার প্রোডাক্ট হচ্ছে আমার নিজের হাতে বানানো পাট, সুতা ও গামছার গহনা।

আমি প্রচুর সংসার প্রিয় একজন নারী। নিজের পায়ে দাড়ানোর ইচ্ছা সবসময়ই ছিলো তবে সেটা নিজের সংসার ও বাচ্চাদের কাছে রেখে, তাদের থেকে দুরে গিয়ে নয়। চাকরির ক্ষেত্রে আমি সেই সুযোগটা পেতাম না, তাই চাকরির ব্যাপারে আমার কখনোই আগ্রহ ছিলো না। আমার জন্য উদ্যোক্তা জীবনটা অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের বলে আমি মনে করি।

বর্তমানে আমি মহিলাদের নিয়ে গঠিত এশিয়ার সবচেয়ে বড় অনলাইন গ্রুপ Women and e-Commerce Trust (WE) এর শরিয়তপুর জেলা কোঅর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্বরত আছি। ‘উই’ গ্রুপটি আমাকে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যেতে অনেক ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।

একজন উদ্যোক্তা হতে প্রয়োজন প্রচুর ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য্য। তা না হলে একজন উদ্যোক্তা বেশিদূর এগোতে পারবে না। বর্তমানে আমাদের দেশ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রচুর সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। তবে নারীদের অবশ্যই সেইসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আরো উন্নত করতে হবে।

আমার পেইজের পন্য তৈরি থেকে শুরু করে পণ্যের প্যাকেজিং ও তা ডেলিভারি ম্যানের হাতে পৌঁছে দেয়ার যাবতীয় কাজ আমি নিজেই করে থাকি। মাঝে মাঝে শরিয়তপুর জেলার ভিতরে ডেলিভারির ক্ষেত্রে আমার স্বামী আমাকে সাহায্য করে৷ ঢাকার বাহির থেকে ব্যবসা পরিচালনা করায় ডেলিভারির ক্ষেত্রে অনেক সময় অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয়। আমি এ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোন অনুদান পাইনি।

আমার প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত ৭০ টি ডেলিভারি সম্পন্ন হয়। প্রতিষ্ঠানের মোট সেল ১,১৭,৭৬৭ টাকা। আমার অনেকগুলো রিপিট কাস্টমার আছে ও অনেক ভালো কিছু রিভিউ ও আছে আলহামদুলিল্লাহ।

আমার স্বপ্ন, আমার নিজের হাতে বানানো পাটের গহনার মাধ্যমে আমার পেইজটি যেন সবার কাছে পরিচিতি পায়। আজ থেকে ৫ বছর পর “আমার পণ্য” পেইজের পাটের গহনা যেন শুধু এই দেশের না বরং বিশ্বের প্রতিটি নারী চিনে ও নিজেদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তা সাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করে।

পেইন্টিংয়ে নিজের স্বপ্ন বুনেন উম্মে হানি অরিন

Previous article

সব বাধা পিছনে ঠেলে উদ্বোধন হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *