উদ্যোক্তার গল্পদেশি উদ্যোক্তা

সূচিশিল্প কে টিকিয়ে রাখতে ভালোবেসে কাজ করে যাচ্ছেন লুৎফা লায়লা

0
Cherry Blossom Watercolor Facebook Cover 1

উদ্যোক্তা জার্নালের বিশেষ আয়োজন ‌‘উদ্যোক্তা গল্প’-র আজকের পর্বে, কথা হলো উদ্যোক্তা লুৎফা লায়লার সঙ্গে। আজ শুনবো তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

আমি লুৎফা লায়লা। গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুরে হলেও জন্ম হয়েছিলো চট্টগ্রাম শহরে। বাবা ছিলেন রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি চাকরিজীবি। বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে, তাই বেড়ে উঠাটা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ ছিলো না।। বাবার সাথে সাথে ঘুরে বেড়িয়েছি বিভিন্ন জায়গায় এবং রয়েছে দারুন সব অভিজ্ঞতা, তাই বন্ধুর সংখ্যাটাও অনেক বেশি।

সবসময়ই নিজে কিছু করার আগ্রহ/ইচ্ছে টা অনেক বেশি কাজ করতো। হোক সেটা চাকরি বা অন্যকিছু, তবে অবশ্যই নিজের ভালোলাগা এবং ভালোবাসা থাকতে হবে। ছোটবেলা থেকেই মাকে দেখেছি খুব সুন্দর করে ডিজাইন করে আমাদের দু’বোনের জন্য জামা বানাতেন। সেগুলোতে আবার নিখুঁতভাবে হাতের কাজ ও করতেন। মায়ের এই কাজগুলো আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।

আমার দুটি উদ্যোগ। আমি কাপড় এবং হোমমেইড ফুড নিয়ে কাজ করছি। আমি বাচ্চাদের নকশীকাঁথা, বেবি নিমা ও বাচ্চাদের হাতের কাজের জামা নিয়ে কাজ করি। এছাড়া বড় নকশিকাঁথাও রয়েছে আমার উদ্যোগে। আর হোমমেইড সবধরনের খাবার যেমন – রুটি/পরোটা সহ দেশীয় সব খাবার থেকে শুরু করে বিরিয়ানি, চাইনিজ আইটেম, ডেজার্ট, পিৎজা এবং ফ্রোজেন আইটেমও রয়েছে আমার উদ্যোগে। আমার পেইজের নাম “Hu-Mu’s closet bd এবং Magic In Taste (ম্যাজিক ইন টেস্ট)।

একদম শূন্য থেকেই শুরু হয়েছিলো আমার পথচলা। কারণ শুধু বিজনেস আইডিয়াটাই ছিলো আমার, আর বাকি সবটাই ছিলো আমার মায়ের। এমনকি মূলধনটাও, কারণ তখন আমার ছোট মেয়েটা অনেক বেশি ছোট ছিলো। সেভাবে সময় দেয়াটা অনেক কষ্টকর ছিলো। শুরুর দিকে কাঁথার ডিজাইন আঁকা এবং সেলাই সবটাই আমি আর আমার মা করতাম। বর্তমানে আমার উদ্যোগের সাথে তিনজন কর্মী যুক্ত আছেন। তারা নিজেদের কাজের পাশাপাশি অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে আমার উদ্যোগে সাহায্য করে কিছু বাড়তি উপার্জন করতে পারছেন।

তেজগাঁও কলেজ থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করার পর খুব ইচ্ছে ছিলো ডায়াগনস্টিক ল্যাবে নিজের প্রফেশনের জায়গা হিসেবে বেছে নিবো। কিন্তু পারিবারিক কারণে তা আর হয়ে উঠেনি, তাই বলে নিজে কিছু করার ইচ্ছেটা কখনোই মন থেকে সরে যায়নি।

আমরা নারীরা চাইলেই ঘরের বাহিরে যেয়ে কাজ করতে পারিনা। আমাদের এখনো পারিবারিক বাধার মুখে পড়তে হয়। সেদিক থেকে বর্তমানে নাসিমা আক্তার নিশা আপুর পরিচালনায় ‘উই’ এর মতো প্ল্যাটফর্ম পাওয়াতে আমরা নারীরা নিজেরা কিছু করার সাহস এবং পরিবেশ দুটোই পেয়েছি। উদ্যোগের কাজে মাঝে মধ্যে বাহিরে যেতে হলেও বেশিরভাগ কাজ ঘরে বসেই আমরা করতে পারছি। এতে পরিবার এবং বাচ্চাদেরও আমরা ঠিকমতো সময় দিতে পারছি।

তবে এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবন্ধকতা রয়েই গেছে, বিশেষ করে আমরা যারা সূচিশিল্প নিয়ে কাজ করি। হাতের কাজ করা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ, কষ্টকর এবং ধৈর্য্যের ব্যাপার। সবাই হাতের কাজের সঠিক মূল্যায়ন টা করতে চায়না, তাই আস্তে আস্তে এই শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। যারাই এখনো কাজ করছে শুধু কাজের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই করে।

আমার কাজের ফিনিশিং এবং কাপড়ের কোয়ালিটি দেখে ক্রেতারাই আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আপু আপনি এত কমে কিভাবে দেন? আসলে আমার কাছে আমার কাজের ব্যাপ্তিটাই মূখ্য, মুনাফা না। তাই দাম টা ক্রেতার সাধ্যের মধ্যেই রাখার চেস্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ আমার সেলও ভালো। বাচ্চাদের টুপি, স্টাইল কাঁথা আমার সিগনেচার পন্য। বাচ্চাদের জন্য একদম ইউনিক এবং খুবই উপকারী একটা পন্য। তাই নরমাল কাঁথা থেকে এটার সেল বেশি, সাথে রিপিট ক্রেতার সংখ্যাও বেশি।

এখন পর্যন্ত আমি সরকারি-বেসরকারি কোনো ধরনের অনুদান পাইনি। আমার উদ্যোগের বয়স মাত্র এক বছর। এই অল্প সময়ে আমার উদ্যোগের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে ক্রেতা সন্তুষ্টি। আলহামদুলিল্লাহ এই অল্প সময়ে আমি অসংখ্য ক্রেতা ও রিপিট ক্রেতার সাপোর্ট এবং ভালোবাসা পেয়েছি, যা আমার এগিয়ে চলার শক্তি।

আমার উদ্যোগকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। আড়ং এ যেমন আমরা আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় সব জিনিস এর পাশাপাশি অনেক এক্সক্লুসিভ জিনিসও পাই, তেমনি আমি আমার পেইজকে সেভাবেই গড়ে তুলতে চাই। একজন ক্রেতা যেনো তার এবং তার পরিবারের সকলের জন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসই আমার কাছে পেতে পারেন। সবার দোয়া এবং ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই নিজের স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে।

অনুষ্ঠিত হলো ‘ইয়েসবিডি’র ২য় বর্ষপূর্তী আয়োজন

Previous article

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ই-ক্যাবের শ্রদ্ধা নিবেদন

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *